তহিদুল ইসলাম, জাবি

  ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকট আবাসন সংকট

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ সেখানেও আবাসন সংকট প্রকট। এই কারণে শিক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ আবাসিক সুবিধা দিতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তালমিলিয়ে পর্যাপ্ত হল নির্মাণ না করায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হলেও এর পেছনে আরো কারণ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসনের উদাসীনতা, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের রুম দখল করে থাকা, সেশন জট, অছাত্রদের হলে অবস্থান প্রভৃতি কারণে মূলত আবাসন সংকট তীব্রতর হচ্ছে। প্রশাসনের নিয়মিত হল পরিদর্শনে না আসায় দুর্ভোগের সুরাহা হচ্ছে না। বিশেষ করে ছেলেদের হলগুলোতে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। সম্প্রতি ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের প্রথমবর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন করেছেন। এতে আবাসন সংকট আরো বেড়ে গেছে। আর তীব্র আবাসন সংকটের কারণে গণরুমে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে আসন আছে আল বেরুনী হলে ৪২৪টি, মীর মশাররফ হোসেন হলে ৭২০টি, শহীদ সালাম-বরকত হলে ৪০০টি, আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলে ৪০০টি, মওলানা ভাসানী হলে ৭৬৮টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৭৬৮টি, শহীদ রফিক জব্বার হলে ৬৪০টি, নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলে ৩৪০টি, ফজিলাতুন্নেছা হলে ২৫২টি, জাহানারা ইমাম হলে ৫০৪টি, প্রীতিলতা হলে ৫০৪টি, বেগম খালেদা জিয়া হলে ৫১২টি, শেখ হাসিনা হলে ৬৪৮টি, সুফিয়া কামাল হলে ৫২৫টি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৬৩২টি ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ৫২৫টি। সব মিলে ৮,০৪৩টি আসন রয়েছে। এর বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫,০০০ হাজার। ফলে হলগুলোতে আসনের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ শিক্ষার্থী সংযুক্ত করা হয়। এতে এসব শিক্ষার্থীর এক সিটে অনেককে ভাগাভাগি করে থাকতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে প্রতিবছর ধারণক্ষমতার অধিক নবীন শিক্ষার্থীকে বরাদ্দ দেওয়ায় তাদেরকে হলের কমন রুম, রিডিং রুম, সংসদ রুম, ছোট ছোট গণরুম, নামাজের কক্ষ, সাইবার রুম প্রভৃতি স্থানে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। সম্প্রতি ক্যাম্পাসে আগমন করা ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা প্রতিটি হলের গণরুমে গাদাগাদি করে থাকছেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সবকটি হলে ৪৬ তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরাও ছোট ছোট গণরুমে গাদাগাদি করে থাকেন। এছাড়া ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীরাও আসন ভাগাভাগি করে থাকছেন। এমনকি কিছু কিছু হলে ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরাও আসন ভাগাভাগি করে থাকতে হচ্ছে। আবাসন সংকট লাঘবে গত কয়েক বছরে ৪টি নতুন হল শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি হলই মেয়েদের। ফলে মেয়েদের আবাসন সংকট অনেকটা কমলেও ছেলেদের ভোগান্তি কমেনি।

ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের রুম দখল করার সংস্কৃতি আসন সংকটকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। প্রতিটি কক্ষে ক্ষেত্র বিশেষে এসব ছাত্র নেতারা দুইজন বা একজন করে থাকেন। ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেলেও তারা আসন ছাড়েন না। আর হল প্রশাসনকে এ ব্যাপারে বরাবরই নীরব থাকতে দেখা যায় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এছাড়া ছেলেদের হলের কোন রুমে কে থাকবে তাও হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাই নির্ধারণ করে দেন। শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘কেউ চারজনের সিটে একজন কিংবা দুইজন থাকে সেটা সিট সংকটে অবশ্যই ভ‚মিকা রাখছে। আর এটা যে করছে তার বোঝা উচিত এটা মোটেও ঠিক না। ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে। প্রয়োজনে নিজে রুম ছেড়ে দিয়ে অন্যদের থাকার সুযোগ দেব এটাই ছাত্রলীগের মূল কাজ হওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আর যদি প্রশাসন না পারে তবে আমার সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

এছাড়া শিক্ষাজীবন শেষেও হল ছাড়ছেন না অনেক স্নাতকোত্তর কোর্স সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনের হল ছাড়ার নোটিস তোয়াক্কা না করে এবং নানা অজুহাত দেখিয়ে অবৈধভাবে হলে অবস্থান করছেন তারা। এসব কারণও আবাসন সংকট বাড়াতে ভ‚মিকা পালন করছে। এছাড়া সেশন জটের কারণে শিক্ষার্থীরা সময়মতো শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারছেন না। স্বাভাবিকভাবেই তাদের বেশি সময় হলে অবস্থান করতে হচ্ছে। এটাও আবাসন সংকট বাড়তে ভ‚মিকা রাখছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭টি ব্যাচ অধ্যয়নরত।

এদিকে, সিট সংকট প্রকট থাকায় এবং দীর্ঘদিন গণরুমে থাকার ঝক্কি এড়াতে শিক্ষার্থীদের অনেকেই বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের গেরুয়া, ইসলামনগর, আমবাগান প্রভৃতি এলাকায় বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন।

এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে শুনেছি এখানে ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হলে সিট পাওয়া যায়, কিন্তু এখানে এসে দেখি পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। ২-৩ বছর ধরে এখানে পড়াশুনা করছি, কিন্তু এখনো সিঙ্গেল সিট পাইনি।’

এ বিষয়ে অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের ছয় হাজার শিক্ষার্থীর আবাসন নেই। ছয় হাজার শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে আমরা যে প্রজেক্ট দিয়েছিলাম সেখানে ১০০০ সিটের ছয়টি হল আসবে। আমরা চেষ্টা করেছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সফল হয়েছি। এখন আমি থাকা অবস্থায় যদি একনেক থেকে মিটিংটা ডাকে আশা করি, আমরা সফল হব। ছয়টি হল- তিনটি মেয়েদের, তিনটি ছেলেদের। ১০০০ সিটের ১০ তলা হল। সুতরাং, তোমাদের জন্যও আমরা কাজ করছি। শুধু তোমরা চোখে দেখতে পাচ্ছ না। দেখবে, আমরা আশা করি খুব দ্রুতই দেখবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist