গাজী শাহাদাৎ ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

সিরাজগঞ্জে জমি দখল করে গুচ্ছগ্রাম করার অভিযোগ

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুড়ি ইউনিয়নের পাথালিয়াপাড়া গ্রামে জোরপূর্বক জমি দখল করে ‘গুচ্ছগ্রাম’ নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ ও আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা। চাষাবাদ করা এসব জমিতে ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন জমির মালিকরা। গত জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে এসব জমি ইরি রোপণের জন্য প্রস্তুত করছিলেন কৃষকরা। এ অবস্থায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা ওই জমিতে আসতে বাধা দেন। ফেব্রæয়ারি মাসের শুরুতে হঠাৎ করেই মাটি কাটা শুরু হয়। যমুনা নদী থেকে মাটি এনে এসব জমি ভরাট করে গুচ্ছগ্রাম করা হবে বলে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন জানিয়েছেন। জমির মালিকদের অভিযোগ, ‘আমাদের যে জায়গায় দখল করে গুচ্ছগ্রাম করার জন্য মাটি ভরাট করা হচ্ছে তার সঙ্গে সাবেক একটি গুচ্ছগ্রাম রয়েছে। বর্তমানে সেই জায়গাটি কৈজুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বর নজরুল ইসলাম নজির দখল করে রয়েছেন। এই জায়গায় ঘর না তুলে জোরপূর্বক মালিকানাধীন জমিতে গুচ্ছগ্রাম করে আমাদের পথে নামানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানিয়েছেন গুচ্ছ গ্রাম প্রকল্পে যাতে কোন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ ও আদালতে মামলা দায়ের করা হলেও মাটি ভরাটের কাজ অব্যাহত রয়েছে। বর্ণিত তফশীল (আরএস খতিয়ান ২৫৩, ২৫৪, ৬৮০, ৩৬৯ আরএস দাগ ৩৪১১ জমির পরিমাণ ২৬৭ শতক) ভুক্ত জমিতে আইনশৃঙ্খলা অবনতি যাতে না ঘটে সে দিকে বিরোধপূর্ণ জমিতে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আদালত উভয় পক্ষকে নোটিস প্রদান করেছেন।

ওই জমিতে চাষাবাদ করা দেলবার ফকিরের ভাতিজি কাজলী বলেন, যমুনার ভাঙনে স্বামীর বাড়ির স্বর্বস্ব খুইয়ে ভাইদের দেওয়া জমিতে চাষাবাদ করেই জীবিকা নির্বাহ করছিলেন তিনি। কিন্তু সেই জমিতেই কোদালের কোপ পড়েছে।

কৃষক হাজী আয়নাল হক বলেন, প্রায় ৫০ বছর আগে এই সম্পত্তি কোবাদ ফকির, আবদুল ফকির ও জয়েন হাজী গংয়ের কাছ থেকে ক্রয় করেন দেলবার ফকিরের বাবা আবেদ ফকির। সেই থেকে আবেদ ফকিরের ওয়ারিশগণ ভোগদখলে রয়েছেন।

এমনটাই বলেন গ্রামের নজরুল ইসলাম, আমোদ আলী, আবু সামা, সোহরাব সেখ, জেলহক ও রিয়াজ হোসেনসহ অর্ধ শতাধিক কৃষক। তাদের দাবি, জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই ফকির পরিবারই এ জমি চাষাবাদ করে আসছে।

এসব জমি ভোগদখলে থাকা কৃষক হাসেম আলী ফকির বলেন, তার দাদা আবেদ আলী ফকির আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর পূর্বে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি দলিল মূলে ২.৬৭ একর জমি ক্রয় করেন। তখন থেকেই খাজনা-খারিজ করে ওইসব জমি আবেদ আলী ফকির ও তার ওয়ারিশগণ ভোগদখল করে আসছেন।

এ বিষয়ে কৈজুরি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা একটি গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। এটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ একটি প্রকল্প। আর ওইসব জমি খাস খতিয়ানভুক্ত হওয়ায় গুচ্ছগ্রামের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে ভ‚মি অফিস।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) মোহাম্মদ হাসিব সরকার জানান, ‘কৈজুরি মৌজায় মোট একটি দাগে প্রায় ১৭ একর জমি রয়েছে। এর মধ্যে ৩ একর খাস খতিয়ানভুক্ত। বাকি ১৪ একর মালিকানা সম্পত্তি। তবে ২০১২ সালে খাস খতিয়ানভুক্ত জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন সেখানেই গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অভিযোগকারী কৃষকরা তাদের নিজের বাড়ির সামনের জমিগুলোকেই নিজেদের বলে দাবি করছে। কিন্তু সেটা ঠিক না। তাদের জমি একই দাগের অন্য কোথাও থাকতে পারে।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেহেলী লায়লা বলেন, ‘গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত প্রকল্প। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভ‚মিহীন মানুষের বাসস্থান নিশ্চিত করা হবে। তবে কোনো কৃষক যাতে এতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে নির্দেশনাও সরকারের রয়েছে। আমরা বিষয়টি অতি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist