গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

ইসিতে কর্মকর্তাদের দক্ষতা মূল্যায়নের উদ্যোগ

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে মেধা, সততা, সৃজনশীলতা, দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী চিন্তা মূল্যায়নের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মাধ্যমে দক্ষতায় সহকর্মীকে পেছনে ফেলার প্রতিযাগিতায় নামাল সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি। এ লক্ষ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুঃসময়ে আর্থিক সহায়তা প্রদানে একটি কল্যাণ তহবিল গঠনেরও চিন্তা-ভাবনা করছে কমিশন; যার কারিগরি অসুবিধাগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে কর্ম দক্ষতা দেখানোর কারণে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা সুফল পাবেন কিনাÑ এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, পদকের দৌড়ে এগিয়ে থাকতে হলে সংশ্লিষ্টদের জাতীয় নির্বাচন কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচন অথবা ভোটার তালিকা প্রণয়ন সর্বক্ষেত্রে দক্ষতা দেখাতে হবে। পাশাপাশি নিজেকে কাজে অপ্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে দেখাতে সার্বক্ষণিক তৎপর থাকতে হবে। কারণ তিন ক্যাটাগরিতে এসব প্রজাতন্ত্রের কর্তাব্যক্তিদের কাজের মূল্যায়ন হবে। ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে মিলবে নগদ অর্থ এবং পদক। এ লক্ষ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে ইসি। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুঃসময়ে আর্থিক সহায়তা প্রদানে একটি কল্যাণ তহবিল গঠনেরও চিন্তা-ভাবনা করছে কমিশন; যার কারিগরি অসুবিধাগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, ভালো কাজের জন্য পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীতে পদকের বিধান চালু রয়েছে। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় সাংবিধানিক সংস্থার দায়িত্ব কম নয়। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটি নানা কারণে রয়েছে পিছিয়ে। নাগরিকদের পরিচিতি (ভোটার তথ্য) সংরক্ষণ, রাষ্ট্রপতি এবং জাতীয় সংসদের মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন করার ক্ষমতা দেওয়া আছে কমিশনকে। এখানের কর্মকর্তাদের নিরলসভাবে কাজ করতে হয়। কিন্তু স্বীকৃতি নেই কাজের। শুধু যুগ যুগ ধরে সমালোচনার পাত্র হয়ে বছরের পর বছর পার করছে।

কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. হেলালুদ্দীন দায়িত্বে এসে নানা সংস্কারমূলক কাজের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের স্বীকৃতি মূল্যায়ন এবং তাদের দুঃসময়ে একজন আরেকজনের পাশে মানবতা হিসেবে দাঁড়াতে কল্যাণ তহবিল গঠনের চিন্তা শুরু করেন। এরই মধ্যে পদক চালুর বিষয়টি একটি নীতিমালার আলোকে প্রণয়ন করতে খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে জনপ্রশাসন পদক নীতিমালার আলোকে পদের নাম, শ্রেণী, ক্ষেত্র, প্রকৃতি, অবদানের প্রকৃতি, পদক প্রদান কার্যক্রম ব্যয় ও ব্যয়ের খাত নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে পদের নাম ‘নির্বাচন পদক’, ব্যক্তি এবং দলগত এই দুই শ্রেণীতে পদক প্রদান করা হবে। পাশাপাশি সাধারণ ও কারিগরিসহ মোট তিন শ্রেণীতে পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত রয়েছে নীতিমালায়। সাধারণ এবং কারিগরি ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ও দলকে চারটি পদক প্রদান করা হবে। পদকপ্রাপ্তদের দেওয়া হবে ক্রেস্ট, নগদ অর্থ ও সম্মাননা।

জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ভালো কাজের মূল্যায়ন না থাকলে অধীনস্থদের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত সেবা পাওয়া যায় না। পদক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সেই শূন্যতা দূর হবে। কারণ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ইসির নির্বাচনের বাইরেও অনেক কর্মপরিধি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনীসহ প্রশাসনে ভালো কাজের স্বীকৃতির বিধান চালু রয়েছে। তাই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসি কেন পিছিয়ে থাকবেÑ এই চিন্তা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাস্তবায়ন করে যেতে পারলে স্বাধীন ইসিতে এটি অনন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে।

নীতিমালার তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, সাধারণ ক্যাটাগরিকে যে পদক দেওয়া হবে তার মধ্যে সাধারণ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবস্থাপনা। কারিগরি ক্যাটাগরিতে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ও গবেষণা (বিজ্ঞানভিত্তিক)। আবদানের প্রকৃতির মধ্যে বলা হয়েছে সংস্কার, ধারাবাহিক ব্যতিক্রম ও উন্নত অনুশীলন প্রদর্শন, দলগত উদ্যোগে উৎসাহিতকরণ, দক্ষ প্রশিক্ষক, উন্নত সেবা, সুশাসন, তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার বা ই-গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠা, নাগরিকের অংশগ্রহণ, সম্পৃক্ততা ও ভ‚মিকা বৃদ্ধি, স্থায়ী প্রকৃতির উৎপাদনশীল সম্পদ সৃষ্টি, টেকসই ব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি হ্রাস, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন ও জেন্ডার সমতা।

পদক বাছাই প্রক্রিয়ায় বলা হয়েছে, মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় ইসির ১০টি আঞ্চলিক অফিসের জন্য সমসংখ্যক বাছাই কমিটি এবং কেন্দ্রীয়ভাবে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। আঞ্চলিক কমিটিতে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ষষ্ঠ গ্রেড পর্যন্ত এবং কেন্দ্রীয় কমিটিতে পঞ্চম গ্রেড পর্যন্ত কর্মকর্তাদের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে।

এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ। তিনি বলেন, কাজের স্বীকৃতির পুরস্কার পাওয়ার জন্য সহকর্মীকে পেছনে ফেলার প্রতিযোগিতা শুরু হবে, এটা নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইতিবাচক। এতে পদকপ্রাপ্তরা সামাজিকভাবে সম্মানিত হবেন। তিনি আরো বলেন, পদকের ক্যাটাগরি নির্ধারণ করায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পাশাপাশি নির্ধারিত কাজের জন্য টিমওয়ার্কভাবে প্রতিটি পদক্ষেপ নেবে। এতে কমিশনের সার্ভিসের গুণগত মান বাড়বে বলে আমি বিশ্বাস করি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist