প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
ত্রিপুরায় নির্বাচন
লাল আর গেরুয়ার মুখোমুখি লড়াই
ভারতের ত্রিপুরাতে বামপন্থিরা গত পঁচিশ বছর ধরে একটানা শাসন করে আসছে। এবার তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি ও উপজাতীয় দল আইপিএফটির জোট। এই একটিমাত্র রাজ্যে বিজেপি ও কমিউনিস্টদের সরাসরি লড়াই। আর সে কারণেই ত্রিপুরাতে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন একটা আলাদা মাত্রা পেয়ে গেছে।
গত সোমবার আগরতলা শহরে ভাষণ দেন দিল্লির বিজেপি তথা আরএসএসের নেতা রাম মাধব। তিন বছর আগেও বিজেপি এ রাজ্যে ‘অতি দুর্বল একটি শক্তি’ হলেও এবারের নির্বাচনে ষাট আসনের বিধানসভায় অন্তত চল্লিশটি আসন যে তারা পাবেই, সে কথা দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে ঘোষণা করেছেন এই হিন্দুত্ববাদী নেতা। বিজেপি এবার ত্রিপুরার মতো ছোট রাজ্যে যে বিপুল অর্থ আর সাংগঠনিক শক্তি ব্যয় করেছে, তা প্রায় নজিরবিহীন। ত্রিপুরায় সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য হরিপদ দাস বলেন, কমিউনিস্টরা হলো তাদের এক নম্বর ঘোষিত শত্রু। এই কারণেই কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ কি অন্ধ্রতে তারা হারল কি জিতল তাতে বিজেপির তেমন কিছু যায় আসে না। এই ত্রিপুরাতে আমাদের হারাতে পারলে তাদের দশটা উত্তরপ্রদেশ জেতার সমান আনন্দ হবে।’ ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অনিন্দ্য সরকার বলেন, ‘মতাদর্শগত লড়াইয়ের বাইরেও এটা হলো বিজেপির সর্বজনগ্রাহ্যতা পাওয়ার লড়াই। নইলে মাত্র ৩৭ বা ৩৮ লাখ জনসংখ্যার একটা রাজ্যে তাদের এতটা বাড়াবাড়ি রকম অর্থ, সম্পদ বা লোকবল খরচ করার আর কোনো ব্যাখ্যা হতে পারে না।
গোর্খা বস্তি স্ট্যান্ডে অটোচালক তপন আচার্য যেমন বলেন, সিপিএমের জুলুমবাজি কেমন অসহ্য হয়ে উঠেছে। ওদের মিছিলে না-গেলেই সিন্ডিকেট পাঁচ-সাত দিন গাড়ি আটকে রেখে দেবে। জোর করে ইলেকশনের চাঁদা নিয়েছে আমার কাছ থেকে পাঁচশ টাকা, কারো কাছ থেকে হাজার টাকাও আদায় করেছে। বাড়িতে গিয়ে পরিবারের মেয়েদের পর্যন্ত শাসানি দেয়, এত বড় সাহস ওদের!’ পঁচিশ বছরের একটানা শাসনের পর বেশ কিছুটা ‘অ্যান্টি-ইনকামবেন্সি’ বা শাসক দলের প্রতি বিদ্বেষ বামপন্থিদেরও সামলাতে হচ্ছে। তার সঙ্গে বিজেপির ছুড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জ ত্রিপুরাতে গত পঁচিশ বছরের মধ্যে তাদের যে সবচেয়ে শক্ত লড়াইয়ের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
"