তহিদুল ইসলাম, জাবি

  ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

জাবিতে শ্রেণিকক্ষ সংকট

জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ে (জাবি) শ্রেণিকক্ষ সংকট এতটাই তীব্র আকার ধারণ করেছে যে, সেখানে শহীদ মিনারে পাঠদান চলছে। শ্রেণিকক্ষ সংকটে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদ, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ, আইন অনুষদ। এছাড়া বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের চাহিদার তুলনায় শ্রেণিকক্ষ পর্যাপ্ত নয়। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়লেও বাড়ছে না এসব অনুষদের শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম। শ্রেণিকক্ষ সংকট বেশি রয়েছে আইন ও বিচার বিভাগে। ক্লাস রুমের অপ্রতুলতার কারণে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। এর প্রভাব পড়ছে সেশন জটে। আর সংকট সমাধানে প্রশাসনও তেমন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ বিভাগটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে চালু হওয়া আইন ও বিচার বিভাগের ৬টি ব্যাচে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৩০০ জন। কিন্তু বিভাগটির জন্য বরাদ্দ আছে মাত্র তিনটি শ্রেণিকক্ষ। এর মধ্যে আবার শ্রেণি কক্ষগুলোও ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়। দুটি শ্রেণিকক্ষ জহির রায়হান মিলনায়তনে এবং অপরটি সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের তৃতীয় তলায়। ফলে ৩০০ শিক্ষার্থীর জন্য তিনটি শ্রেণিকক্ষ যেমন অপ্রতুল তেমনিভাবে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় হওয়ায় ভোগান্তির শিকার হন শিক্ষার্থীরা। ক্লাস রুম সংকটের কারণে আইন ও বিচার বিভাগে সেশন জট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগের ৪১ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করলেও বর্তমানে আইন ও বিচার বিভাগের ৪১ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তরেই পড়ে রয়েছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব বিভাগের ৪৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তৃতীয় বর্ষ উত্তীর্ণ হলেও এই বিভাগের শিক্ষার্থী এখনো তৃতীয় বর্ষের (বর্তমানে ৬ষ্ঠ সেমিস্টারে) পরীক্ষা শেষ করতে পারেনি। তাছাড়া নতুন আরেকটি ব্যাচের ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এ মাসের ৫ তারিখে শুরু হতে যাচ্ছে নবীন ৪৭ তম ব্যাচের ক্লাস। এতে করে সংকট আরো বাড়বে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা একটা ক্লাস অডিটোরিয়ামে করি তো পরের ক্লাস সমাজ বিজ্ঞান অনুষদে করতে হয়। এতে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। অন্যান্য বিভাগের যারা আমাদের সঙ্গে ভর্তি হয়েছিল তাদের পরীক্ষা অনেক আগেই শেষ, কিন্তু আমাদের পরীক্ষার কোনো খবর নেই। ছয়টি ব্যাচের কি তিনটি ক্লাসরুম দিয়ে হয়?’ তিনি আরো বলেন, ‘অডিটোরিয়ামে প্রায়ই অনুষ্ঠান থাকে। এতে ক্লাসে মনোযোগ দেওয়া কঠিন। আর সমাজ বিজ্ঞান অনুষদে মাঝে মাঝে বাথরুমে যাওয়া নিয়েও অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাগি¦ত-া হয়!’ এ বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগের সভাপতি কে এম সাজ্জাদ মহসীন বলেন, শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম। আর শ্রেণিকক্ষ বাড়ানোর জন্য প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই।

এদিকে, শ্রেণিকক্ষে জায়গা না পেয়ে শহীদ মিনারের পাদদেশে ক্লাস নিয়েছেন ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষক। গত ১৮ জানুয়ারি সকালে বিভাগটির ৪৩ ব্যাচের ৪০৫ নং কোর্সের ওই ক্লাসটি নেন বিভাগটির সহকারী অধ্যাপক কাজী আশরাফ উদ্দীন। পরে ক্লাস নেওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়।

জানা যায়, রুম সংকটে ভুগছে ইংরেজি বিভাগ। ইংরেজি বিভাগের ৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ আছে মাত্র তিনটি শ্রেণিকক্ষ। এছাড়া রয়েছে একটি সেমিনার কক্ষ। ফলে নির্ধারিত সময়ে ক্লাস নিতে পারেন না শিক্ষকরা। নতুন কলা ও মানবিক অনুষদ ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে দুটি করে বিভাগ রয়েছে। এসব বিভাগের জন্য শ্রেণিকক্ষসহ অন্যান্য কক্ষ প্রায় সমভাবে বণ্টিত। নিচ তলার দর্শন বিভাগ বেশি কক্ষ বরাদ্দ নিয়েছে বলে অভিযোগ ইংরেজি বিভাগের।

ইংরেজি বিভাগের সভাপতি তানিয়া শারমীন বলেন, প্রত্যেকটি বিভাগেরই রুম সংকট আছে। আমাদের আছে তিনটি রুম। আর ফিলোসোফি দখলে আছে সাতটি রুম। এ নিয়ে আমরা দুই বিভাগ ভিসি ম্যামের সঙ্গে বসেছি। সেখানে ফিলোসোফি বিভাগ থেকে বলা হলো যে, আমাদের সব শিক্ষক তো এখানে উপস্থিত নেই। আমরা আগে বিভাগে একটি মিটিংয়ে বসি। তারপর ভিসি ম্যাডামের সঙ্গে বসব। এরপর ম্যাডাম ডেকেছেন, তবে তারা যায়নি। তারা বলেছে, আমাদের মিটিং হয়নি। পরে ম্যাডাম আমাদের বললেন যে, ডিনকে দায়িত্ব দিলাম এটা ডিন এটা দেখুক।

দর্শন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ তারেক চৌধুরী বলেন, আমাদের রুম হয়তো একটা বেশি আছে। ওদের রুম আছে পাঁচটি, আমাদের আছে ছয়টি। আমরা যদি ওদেরকে একটি দিয়ে দেই, তবে ওদের একটি বেশি হয়ে যায়। আবার আমাদের যা আছে, তাতে ওদের কম হয়ে যাচ্ছে। আমরা কখনোই বলিনি যে তাদের রুম সংকট নেই। তবে একেবারে ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে সমানভাবে বণ্টন সম্ভব নয়। তারা বড় রুমকে সেমিনার রুম বানিয়েছে। আমরা কিন্তু তা করিনি। আমরা বড় রুমে ক্লাস নিই। আমরা ভিসি ম্যাডামকে বলেছি যে, নতুন কলা ভবন সম্প্রসারণ করুন। সম্প্রসারণ করে বাড়তি জায়গা তাদের দিন, এতে আমাদের আপত্তি থাকবে না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ২০০০ সালে নতুন কলা ভবনের কাজ শুরু হয়েছে। এখনো শেষ হয়নি। এ বিষয়ে জানতে ভিসি অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামকে ফোন দেওয়া হলেও ধরেননি। পরে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. আবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি মুঠোফোনে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। পরে বলেন, আমাদের ভবন বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। আমরা ১২০০ কোটি টাকার প্লান দিয়েছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist