আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

আবারও গুয়ানতানামো বে খোলার নির্দেশ ট্রাম্পের

বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর কারাগার হিসেবে পরিচিত কিউবা দ্বীপের গুয়ানতানামো বে কারাগার খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণে এ ঘোষণা দেন। পরে এ-সংক্রান্ত এক নির্বাহী আদেশপত্রে প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষর করেছেন বলে নিশ্চিত করেছে হোয়াইট হাউস। শত্রুযোদ্ধাদের দমন করতে প্রশাসন তাদের আটক করতে পারে, এটা জানানোর জন্যই গুয়ানতানামো বে কারাগার-সংক্রান্ত আদেশে স্বাক্ষর করা হয়েছে বলে হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

দায়িত্ব নেওয়ার বছরপূর্তিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টদের কংগ্রেসে এই স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ দিতে হয়। এবার এমন এক সময়ে ট্রাম্প এ ভাষণ দিলেন যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় তার শিবিরের সঙ্গে রাশিয়ার সংযোগ নিয়ে জোর তদন্ত চলছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলায় টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পরপরই আলোচনায় আসে গুয়ানতানামো বে কারাগারের কথা। তখন অনেক তালেবান যোদ্ধা ও চরমপন্থিকে বন্দি করে সেখানে রাখা হতো। বন্দিদের ওপর মার্কিন সেনাদের ভয়াবহ নির্যাতনের বিভিন্ন ছবিও তখন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তার বিরুদ্ধে সমলোচনার ঝড় ওঠে।

পরে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন একশর বেশি বন্দি এই কারাগার থেকে মুক্তিও পান। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদীরা কখনো কখনো নিছক অপরাধী না। তারা শত্রুযোদ্ধা। আর যখন বিদেশিদের ধরা হয়, তখনো তাদের সন্ত্রাসীর মতোই বিবেচনা করা উচিত।’ তথাকথিত ইসলামী স্টেটের (আইএস) নেতা আবু বকর আল বাগদাদির উদাহরণ দিয়ে মুক্তিপ্রাপ্ত ১০০ কারাবন্দি সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘অতীতে আমরা বোকার মতো ভয়ংকর একশ সন্ত্রাসীকে মুক্তি দিয়েছি শুধু তাদের সঙ্গে যুদ্ধের ময়দানে আবারও দেখা করার জন্য।’

ওবামা প্রশাসন এক বছরের মধ্যে কারাগারটি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য একটি আদেশপত্র স্বাক্ষর করেছিলেন। কিন্তু আট বছরের মধ্যে তাদের মুক্তি দেওয়া যাবে নাÑআইনপ্রণেতাদের এমন কঠোর বাধার সম্মুখীন হন তিনি। ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারের সময়ই গুয়ানতানামো বে কারাগার খুলে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তার বক্তব্য ছিল, ‘কিছু খারাপ মানুষ দিয়ে আমি কারাগারটি ভরে ফেলতে চাই।’

‘ঐক্যের আহ্বান’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, এটা প্রমাণ হয়েছে বিশ্বের আর কোনো দেশ আমেরিকার মতো নয়। তিনি দেশটির রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতাকর্মীদের সব মতভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অভিবাসন ও অবকাঠামোগত বিষয়ে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

‘আইএস নিয়ে আরো কিছু করার আছে’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আইএসবিরোধী যুদ্ধে আরো অনেক কিছু করার রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন। মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট ইরাক ও সিরিয়া ভূখন্ডের প্রায় শতভাগ এলাকা আইএসমুক্ত করেছে বলে ট্রাম্প ঘোষণা দেন। একসময় দেশ দুটির বিশাল এলাকা এ জঙ্গি গ্রুপের দখলে ছিল। এ যুদ্ধক্ষেত্রে মার্কিন সৈন্যের উপস্থিতি অব্যাহত রাখার ব্যাপারে তার প্রশাসনের যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আরো অনেক কিছু করার রয়েছে।’

২০১১ সালে ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার ব্যাপারে তার পূর্বসূরি বারাক ওবামার ভুলের কথা তুলে ধরে এ ব্যাপারে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আইএসকে পরাজিত না করা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।’

‘পিয়ংইয়ং মার্কিন ভূখন্ডের জন্য হুমকি হতে পারে’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার সতর্ক করে বলেছেন, উত্তর কোরীয় সরকার পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির একেবারে কাছাকাছি চলে এসেছে। এ ক্ষেত্রে পিয়ংইয়ংয়ের এই অগ্রগতি মার্কিন ভূখন্ডের জন্য হুমকি হতে পারে।

ট্রাম্প বলেন, ‘কখনো যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, তা প্রতিরোধে আমরা দেশটির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি।’ ট্রাম্প তাঁর ভাষণের সময় উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে আসা দেশটির এক নাগরিকের প্রতিও সম্মান জানান। প্রেসিডেন্টের ভাষণের বিভিন্ন পর্যায়ে রিপাবলিকান সাংসদরা বুনো উল্লাস করলেও ডেমোক্রেটদের প্রায় সময়ই নিজের আসনে নীরবে বসে থাকতে দেখা গেছে।

দায়িত্বের প্রথম বছরের কর্মকান্ডে নাগরিকদের সন্তুষ্টির পরিমাণের দিক থেকেও ট্রাম্পের অবস্থান অন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টদের নিচে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। জরিপ সংস্থা গ্যালোপের বরাত দিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বছর শেষে ট্রাম্পের কাজে নাগরিকদের সন্তুষ্টির হার মাত্র ৩৮ শতাংশ বলে জানানো হয়েছে। প্রথম বছর শেষে ওবামার কাজে নাগরিকদের সন্তুষ্টির হার ছিল ৪৯ দশমিক ১ শতাংশ।

ট্রাম্পের এ আবেদন সাড়া পাবে কিনা তার প্রথম পরীক্ষা হবে যুক্তরাষ্ট্রে তরুণ অনিবন্ধিত প্রায় ১৮ লাখ অভিবাসীর সুরক্ষা দিতে নেয়া ডেফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভাল (ডাকা) প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে।

যুক্তরাষ্ট্রে আসা অনিবন্ধিত অভিবাসীর সন্তানরা ডাকার আওতায় অস্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি পেয়ে আসছে। এরাই ‘ড্রিমার’ নামে পরিচিত। ওবামা আমলে হওয়া ওই ডাকা কর্মসূচির মেয়াদ চলতি বছরের ৫ মার্চ শেষ হবে। কর্মসূচির মেয়াদ না বাড়লে অনিবন্ধিত ওই তরুণদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের মুখে পড়তে হবে।

ট্রাম্প বলছেন, তিনি ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে ড্রিমারদের নাগরিক করে নিতে একটি পথ বের করবেন, কিন্তু তার বদলে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে অর্থায়ন ও অভিবাসন প্রক্রিয়ায় কড়াকড়ি আরোপের তার প্রস্তাবে ডেমোক্র্যাটদের রাজি হতে হবে।

নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে ‘চেইন মাইগ্রেশন’ প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চাওয়ার কথাও জানান ট্রাম্প। অভিবাসীদের কেউ যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ নাগরিক হওয়ার পর সেই সূত্রে তার পরিবারের সদস্যদেরও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়াকেই ‘চেইন মাইগ্রেশন’ বলা হয়। ট্রাম্প শুরু থেকেই এ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে, তিনি চান ‘চেইন মাইগ্রেশন’ নয়, মেধার ভিত্তিতে অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist