নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৮ জানুয়ারি, ২০১৮

মাতারবাড়ি প্রকল্প

নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন আজ

কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দরের আনুষ্ঠানিক নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে আজ রোববার থেকে। দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের’ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়িতে নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই কেন্দ্রের কাঁচামাল হবে কয়লা।

সরকারের বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনায় দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মাতারবাড়িকে ‘বিদ্যুৎ হাব’ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় নির্মীয়মাণ বন্দরটিই পরবর্তীতে গভীর সমুদ্রবন্দরে রূপান্তরিত করা হবে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র ও দেশের প্রথম সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করে মাতারবাড়িকে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলারও পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

মহেশখালীর মাতারবাড়ি ও ঢালঘাটা ইউনিয়নের ১৪১৪ একর জমিতে এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে ১৭ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভিত্তিপ্রস্তরের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে আজ।

আবুল কাশেম জানান, ইতোমধ্যেই মাবারবাড়ি প্রকল্পের জন্য প্রায় ৪০০ দক্ষ বিদেশি শ্রমিক এসেছেন। পর্যায়ক্রমে এখানে প্রায় এক হাজার দক্ষ বিদেশি শ্রমিক কাজ করবেন।

গুলশান হামলার প্রভাব পড়েছিল মাতারবাড়ি প্রকল্পেও। তার অবসান ঘটিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে গত বছরের জুলাইয়ে জাপানের তিনটি প্রতিষ্ঠানের একটি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি করে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ (সিপিজিসিবিএল)। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে তাদের।

তবে জাপানি কনসোর্টিয়ামের অন্যতম কোম্পানি তোশিবা করপোরেশন গত বছর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। প্রকল্পের খরচের পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা হবে বলেও জানায় তারা।

সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে বাস্তবায়নাধীন যে ১০টি প্রকল্প রয়েছে তার মধ্যে খরচের দিক দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরই রয়েছে মাতারবাড়ি প্রকল্পটি।

২০১৫ সালের আগস্টে মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৩৬ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার। একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পের কার্যপত্রে বলা হয়, জাইকা এই প্রকল্পে ২৯ হাজার কোটি টাকা দেবে।

ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক এবং আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে একটি গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রয়োজনীয়তা অনেকদিন থেকেই দেখা দিয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার মহেশখালীর সোনাদিয়ায় একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের প্রকল্প অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে রাখলেও তার কোনো অগ্রগতি হয়নি। গত সাত বছরে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি ২০০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। দুটি বন্দর দিয়ে ক্রমবর্ধমান এ বাণিজ্য সামাল দেওয়া প্রায় ‘অসম্ভব’ হয়ে উঠেছে। তাই গভীর সমুদ্রবন্দরে নির্মাণে সরকারের পক্ষ থেকেও জোরেশোরেই কাজ করতে হচ্ছে।

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র আমদানি করা কয়লানির্ভর হওয়ায় কয়লা আনার জন্যই এই বন্দর করা হচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। ৫৯ ফুট গভীর এই বন্দরে ৮০ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার জাহাজ ভিড়তে পারবে। জাপানের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে মাতারবাড়ির বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে যে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হবে সেটি হবে জাপানের কাশিমা বন্দরের মতো হবে।

সম্প্রতি মাতারবাড়ি প্রকল্প পরিদর্শন করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় নির্মীয়মাণ বন্দরটিই পরবর্তীতে গভীর সমুদ্রবন্দরে রূপান্তরিত করা হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে মহেশখালীর ছয়টি মৌজায় যেসব জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে সেসব জমি বসতি-বৃক্ষহীন। ধু ধু জমিতে গ্রীষ্মকালে লবণ ও বর্ষায় চিংড়ি চাষ হয়।

মহেশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) টার্মিনাল স্থাপন করে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও নগর গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছে সরকার, যাতে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা দেওয়া হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist