নওগাঁ প্রতিনিধি

  ২৮ জানুয়ারি, ২০১৮

ঝুট কাপড় থেকে দড়ি তৈরি বদলে গেছে গৃহবধূর ভাগ্য

নওগাঁ সদর উপজেলার ইলশাবাড়ী গ্রামের গৃহবধূ ফেরদৌসী আক্তার। পাঁচ সদস্যের সংসার। একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামী এখন বক্ষব্যাধিতে আক্রান্ত। কোনো কাজ করতে পারেন না তিনি। বড় মেয়ে কলেজে পড়ত, প্রতিবেশীদের সাহায্য সহযোগিতা আর ধার-দেনা করে তার লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছিলেন। কিছুদিন আগে মেয়েটি অসুখে পড়ে। সুচিকিৎসার অভাবে সে মারা যায়। দুই চোখে অন্ধকার দেখেন ফেরদৌসী আক্তার। ঠিক এই সময় নিকট আত্মীয়ের পরামর্শে ঝুট কাপড় (গার্মেন্টে পোশাক তৈরির পর কাপড়ের টুকরা অংশ) থেকে দড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি। কাজটি ফেরদৌসীর ভাগ্য পাল্টে দিতে থাকে। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এই দড়ি বিক্রি করে মোটামুটি ভালো লাভ করতে থাকেন। এখন স্বামীর ওষুধ, সংসারের যাবতীয় খরচ, এক ছেলে ও এক মেয়ের পড়ালেখার খরচ এক হাতেই বহন করেন তিনি। আর কারো কাছে হাত পাততে হয় না।

সংসারে ফিরেছে সুখ এবং সচ্ছলতা। শুধু ফেরদৌসী আকতার নয়, ওই গ্রামের দুই শতাধিক পরিবারের গ্রামীণ নারীরা এই কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। নওগাঁ সদর উপজেলা, রানীনগর ও আত্রাই উপজেলার ২০-২৫টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার নারী গার্মেন্টসের ঝুট কাপড় থেকে দড়ি তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

আর দড়ি তৈরিকে তারা পেশা হিসেবে বেঁছে নিয়েছেন। এ ঝুট কাপড় থেকে শিখা, গরু ও ছাগলের দড়ি তৈরি হয়। এ কাপড় থেকে তৈরি দড়ি মজবুত ও টেকসই বলে পানের বরজে বেশি ব্যবহৃত হওয়ায় চাহিদাও বেশি। তবে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নেওয়ায় লাভের একটি অংশ চলে যাচ্ছে ঋণ পরিশোধে। সরকারি সহযোগিতা ও স্বল্প সুদে ঋণের দাবি করেছেন গ্রামীণ এসব নারী।

প্রতিটি ঝুট কাপড়ের বস্তার ওজন ৮০-৮৫ কেজি। প্রতিকেজি ঝুট কাপড়ের দাম ৪৫ টাকা। একটি বস্তা থেকে দড়ি তৈরি করে বিক্রির পর লাভ আসে প্রায় এক হাজার ৫০০ টাকা। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হলে সপ্তাহে দুই বস্তা ঝুট কাপড় থেকে তৈরি করা যায়।

ফেরদৌসী আকতার বলেন, প্রতি সপ্তাহে দড়ি বিক্রি করে দেড় হাজার টাকার মতো লাভ থাকে। আর এখান থেকে প্রতিমাসে স্বামীর জন্য ওষুধ, সাংসারিক খরচ, বাচ্চাদের পড়াশুনা সবকিছুই করতে পারছি। আল্লাহর রহমতে আগের তুলনায় এখন ভালোভাবে চলতে পারছি।

একই গ্রামের রেবেকা বিবি বলেন, ‘সাংসারিক কাজের পাশাপাশি দড়ি তৈরির কাজ করি। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ঝুট কাপড় কিনে থাকি। দড়ি বিক্রির পর লাভের একটি বড় অংশ চলে যায় ঋণ পরিশোধে। সরকার থেকে স্বল্প সুদে ঋণ পেলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়।

নওগাঁ শিল্প সহায়ক কেন্দ্র উপব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সম্প্রসারণে বিসিক কাজ করে যাচ্ছে। যেসব উদ্যোক্তা আছেন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist