মহসীন শেখ, কক্সবাজার

  ২০ জানুয়ারি, ২০১৮

স্ত্রীসহ সন্তানদের খুন করে আত্মহত্যা

ঋণ কাঁধে নিয়ে মানসিক চাপে ছিলেন সুমন

অন্যের ঋণ কাঁধে নিয়ে বেশ মানসিক চাপে ছিলেন সুমন চৌধুরী। ভাড়াটিয়া সঞ্জয় দাস তাকে জিম্মাদার করে ঋণ নিলেও চাপ আসে সুমনের ওপর। এতে তিনি কয়েকদিন ধরে মানসিক যন্ত্রণায় ভোগেন। পরে এই চাপ থেকেই স্ত্রী-সন্তানদের খুনের পর নিজেও আত্মহত্যা করেন সুমন চৌধুরীÑ এমনই ধারণা করছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। এ ঘটনায় দুটি মামলাও হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে শহরের গোলদীঘির পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, সঞ্জয়ের চয়েস স্টোর নামের দোকানটিতে তালা ঝুলছে। পাশের ব্যবসায়ীরা জানান, গত বুধবার বেলা ১টার দিকে সঞ্জয় দোকানে তালা লাগিয়ে চলে যান। এরপর থেকে আর আসেনি।

কে এই সঞ্জয়? : সংবাদ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে জানা গেছে, তার পুরো নাম সঞ্জয় দাস (৩৩)। প্রায় দেড় বছর আগে সঞ্জয়কে গোলদীঘির পাড়ের দোকানটি ‘সাবলেট’ দেন সুমন চৌধুরী। গোলদীঘির পাড়ের সারদা ভবনের নিচ তলার ৫ নম্বর দোকানটি বেশ কয়েক বছর আগে ভাড়া নেন সুমন চৌধুরীর বড় ভাই সমীর চৌধুরী। এক পর্যায়ে দোকানটি তিনি সুমন চৌধুরীকে দিয়ে দেন। এরপর টানা পাঁচ বছর দোকানটি চালান সুমন। পরে বেচাকেনা কম হওয়ায় দোকানটি পিন্টু দাস নামের এক ব্যক্তিকে সাবলেট দেন। পরে দোকানটি নিয়ে নেন সুমন। এরপর প্রায় দেড় বছর আগে দোকানটি পুনরায় সাবলেট দেন সাতকানিয়ার কেউসিয়া গ্রামের সঞ্জয় দাসকে। কিন্তু ব্যবসায় টানাপড়েন শুরু হওয়ায় সুমনকে জামিনদার করে বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নেন সঞ্জয়। ওই ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য জামিনদার হিসেবে সুমনের ওপর ওইসব সংস্থার চাপ বাড়তে থাকে।

গোলদীঘির পাড়ের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, সুমন চৌধুরী ব্যক্তিগতভাবে খুবই ধার্মিক ও শান্ত প্রকৃতির। তার সঙ্গে কোনো ব্যাংক বা কোনো সংস্থার আর্থিক লেনদেন ছিল না। কিন্তু সুমন জামিনদার হয়ে সঞ্জয়কে বিভিন্ন ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা থেকে সাপ্তাহিক ও দৈনিক কিস্তিতে ঋণ নিয়ে দেন। সঞ্জয় মাঝেমধ্যে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারলে ঋণ সংস্থার লোকজন সুমনকে তাগাদা দিতেন। এতে খুবই বিরক্তবোধ করতেন সুমন। সর্বশেষ মাস দেড়েক ধরে সঞ্জয়ের পাওনাদারদের যন্ত্রণায় মারাত্মকভাবে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন তিনি। এই চাপ সহ্য করতে না পেরেই স্ত্রী ও মেয়েদের খুনের পরে নিজেও আত্মহত্যা করেন।

রাজীব ধর নামের স্থানীয় পার্শ্ববর্তী এক ব্যবসায়ী জানান, গত বুধবার বেলা ২ টার দিকে ‘আশা’ নামের একটি ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার একজন লোক এসে সঞ্জয়ের খোঁজ নেয়। কিন্তু দোকান বন্ধ থাকায় ওই সময় সঞ্জয়ের দেখা পাননি তিনি। ওই ব্যক্তি নিজেকে ‘আশা’র কিস্তি আদায়কারী বলে দাবি করেন।

জানা গেছে, নিহত সুমনের বাড়ির দক্ষিণ পাশে ‘সারদা কুসুম’ নামের একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় ব্যাচেলর ভাড়া থাকেন সঞ্জয়। তার সঙ্গে গোলদীঘির পাড় এলাকার বাপ্পি ধর ও কক্সবাজার টেকনিক্যাল স্কুলের ছাত্র রূপস রুদ্র নামের আরো দুজন থাকেন। তবে গত এক মাস ধরে সঞ্জয়ের সঙ্গে তার স্ত্রীও রয়েছে। ওই ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ২য় তলার যে ফ্ল্যাটে সঞ্জয়রা থাকেন সেই ফ্ল্যাটেও তালা ঝুলছে।

সারদা কুসুম ভবনের মালিক সোনারাম দাশের ভাই ননী দাস জানান, তিন মাস আগে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন বাপ্পি ধর। তার সঙ্গে থাকে সঞ্জয় ও রূপস। এক মাস ধরে সঞ্জয়ের স্ত্রীও ছিলেন। গত বুধবার বিকেল চারটার দিকে তাড়াহুড়া করে স্ত্রীকে নিয়ে চলে যান সঞ্জয়। যাওয়ার সময় কাউকে কিছু বলেননি।

এদিকে, ঘরের দরজা ভেঙে সুমন চৌধুরী, তার স্ত্রী বেবি চৌধুরী এবং দুই মেয়ে অবন্তিকা চৌধুরী ও জ্যোতি চৌধুরীর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য ঘুরপাক খাচ্ছে। আর্থিক দৈন্যদশার কারণে মৃত্যুর বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না স্বজন, ব্যবসায়ী ও প্রতিবেশীরা। কিন্তু পুলিশও এখন পর্যন্ত আর্থিক সংকটের বিষয়টিই চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার একমাত্র ক্লু হিসেবে পেয়েছে। তবে পুলিশের পাশাপাশি ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্তে নেমেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রণজিৎ কুমার বড়–য়া জানান, এখন পর্যন্ত আর্থিক সংকটের বিষয় ছাড়া ঘটনার অন্য কোনো কারণ জানা যায়নি। তদন্ত চলছে, তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।

উল্লেখ্য, গত বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে শহরের গোলদীঘির পাড় এলাকায় নিজের ঘরের ভেতর থেকে দরজা ভেঙে সুমন চৌধুরী (৩৩), তার স্ত্রী বেবি চৌধুরী (২৭) এবং দুই মেয়ে অবন্তিকা চৌধুরী (৫) ও জ্যোতি চৌধুরীর (৩) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মামলার এজাহারে সুমনের বড় ভাই সমীর চৌধুরীও এই বিষয়টি উল্লেখ করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist