কূটনৈতিক প্রতিবেদক
আসন্ন বর্ষায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা শিশু ঝুঁকিতে : ইউনিসেফ
আসন্ন ঘূর্ণিঝড় ও বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া পাঁচ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শিশু মারাত্মক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে। গতকাল মঙ্গলবার এ সতর্ক বার্তা দিয়েছে জাতিসংঘ শিশুবিষয়ক তহবিল (ইউনিসেফ)। বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউনিসেফের প্রতিনিধি এডওয়ার্ড বেইগবিদার বলেছেন, ‘ইতোমধ্যে সৃষ্ট ভয়ানক মানবিক পরিস্থিতি আসন্ন ঘূর্ণিঝড় ও বর্ষা মৌসুমে আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। কয়েক লাখ শিশু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বন্যা, ভূমিধস ও আবার বিতাড়িত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে তারা।’
এডওয়ার্ড বেইগবিদার বলেন, ‘অনিরাপদ খাবার পানি, অপর্যাপ্ত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে কলেরা ও হেপাটাইটিস-ইর প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। এসব রোগে মৃত্যু হতে পারে গর্ভবতী নারী ও তার সন্তানের। এ ছাড়া যেখানে-সেখানে জমে থাকা পানিতে ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী মশার বিস্তারও ঘটতে পারে। শিশুদের এসব রোগ থেকে রক্ষা করাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
গত ২৫ আগস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়ি ও তল্লাশিচৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার জেরে সেখানে নতুন করে সেনা অভিযান শুরু হয়। চলে দমনপীড়ন। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেক শিশু রয়েছে। শরণার্থী শিবিরে নানারকম পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা।
ইউনিসেফ বলছে, শরণার্থী শিবিরে প্রায় চার হাজার মানুষ ডিপথেরিয়া রোগে আক্রান্ত। এখন পর্যন্ত এ রোগে
২৪ শিশুসহ ৩২ জন মারা গেছে। ইউনিসেফ ও সহযোগীরা ডিপথেরিয়ার টিকা কার্যক্রম শুরু করেছে। সবাইকে নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশন সুবিধার আওতায় আনার চেষ্টা করছে তারা। তবে অতিরিক্ত জনগোষ্ঠী ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে রোগের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। ইউনিসেফ বলছে, বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও ভূমিধসের কারণে ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে। এতে সরাসরি ঝুঁকিতে আছে শিশুরা। এমনকি মৌসুমের আগে সামান্য ঝড়ও সেখানে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আগামী মার্চে মৌসুমি ঋতু শুরু হওয়ার আগে প্রস্তুতির জন্য খুব কম সময়ই পাওয়া যাবে বলে মনে করে ইউনিসেফ। দেশে সাধারণত দুই মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন জলোচ্ছ্বাস হয়ে থাকে। মার্চ থেকে জুলাই ও সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর। তবে সবচেয়ে বেশি ঝড় হয় মে ও অক্টোবর মাসে। গত বছরের মে মাসে এ এলাকায় ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের অনেক ঘর ধ্বংস হয়ে যায়। আহত হয় অনেক মানুষ।
"