ঝালকাঠি প্রতিনিধি
তীব্র শীত ও কুয়াশায় ক্ষতির মুখে পান চাষ
ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে ছত্রাকজনিত অজ্ঞাত রোগে ঝালকাঠিতে পচে যাচ্ছে পান। গত এক সপ্তাহে এ রোগে পানগাছের পাতা ঝরে পড়ছে। প্রথম দিকে বাজারে পানের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দামও কমে গিয়েছিল। বর্তমানে পানের সংকট থাকায় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। কিন্তু বরজে পান না থাকায় বাজারে সরবরাহ করতে পারছেন না চাষিরা। ফলে ব্যাংক ঋণ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। আগে পান চাষিরা বাজারে এক চলি (৩৬ পিস) ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে পান সংকটের কারণে প্রতি চলি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার পানচাষি অলিউর রহমান জানান, তার ৩০ শতাংশ জমিতে পানের বরজ রয়েছে। অজ্ঞাত রোগে পান ঝরে যাচ্ছে। এতে তার ৪০ হাজার টাকার পান নষ্ট হয়েছে। সদর উপজেলার বারইবাড়ি এলাকার পানচাষি অসীম ম-ল জানান, তার ৫০-৬০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষিবিদ কামরুন্নাহার তামান্না জানান, পান একটি অর্থকরী ফসল। এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়। দেশে-বিদেশে রয়েছে পানের ব্যাপক চাহিদা। এতে অনেক ওষুধি গুণ রয়েছে। কিন্তু রোগবালাই পান উৎপাদনের একটি প্রধান বাধা। পানের গোড়া পচা, ঢলে পড়া, পাতা পচা, অ্যানথ্রাকনোজ, সাদা গুঁড়া ইত্যাদি রোগ দেখা যায়। সেক্লরোসিয়াম রফসি (ঝপষবৎড়ঃরঁস জড়ষভংরর) নামক ছত্রাক। ছত্রাকগুলো প্রধানত মাটিবাহিত এবং অন্যান্য শস্য আক্রমণ করে। মাটিতে জৈব সার বেশি ও খড়কুটো থাকলে এবং পানি সেচের মাধ্যমে আক্রান্ত ফসলের জমি হতে সুস্থ ফসলের মাঠে বিস্তার লাভ করে। রোগাক্রান্ত লতাপাতা বরজ থেকে তুলে পুড়ে ফেলতে হবে। রোগ প্রতিরোধী পানের জাত ব্যবহার করতে হবে। গভীর ভাবে জমি চাষ দিয়ে রোদে ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে। নতুন বরজ তৈরির ক্ষেত্রে সুস্থ- সবল রোগমুক্ত পানের লতা সংগ্রহ করতে হবে। পানের বরজ সবসময় আগাছা মুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ট্রাইকোডারমা কম্পোস্ট সার প্রতি গাছে ৫ গ্রাম হারে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। লতা রোপণের পূর্বে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে প্রোভেক্স বা ব্যভিস্টিন দ্বারা লতা শোধন করে নিতে হবে। বরজে রোগ দেখা দিলে প্রোভেক্স বা ব্যভিস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় মাটিতে স্প্রে করতে হবে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, আমরা চাষিদের পাশে আছি। সবসময় চাষিদের প্রয়োজন অনুযায়ী পরামর্শ দিতেছি। প্রাকৃতিক কারণে এখন পানচাষিদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে আসলে আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আবুবকর সিদ্দিক জানান, পানচাষিদের এ মৌসুমে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। আমরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। তাদের আর্থিক ক্ষতির কথা চিন্তা করে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানোর প্রক্রিয়া চলছে। বরাদ্দ এলে সহায়তা করা হবে।
"