রাজশাহী প্রতিনিধি

  ১৬ জানুয়ারি, ২০১৮

ভেজাল খেজুর গুড়ে সয়লাব রাজশাহীর হাটবাজার

চিনি ও বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশ্রণ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভেজাল খেজুরের গুড়। একশ্রেণির অসাধু গুড় উৎপাদনকারী সুস্বাদু গুড়ের ব্যাপক চাহিদাকে পুঁজি করে এই ভেজাল গুড় অবাধে বাজারজাত করছে। এসব ভেজাল খেজুরের গুড়ে সয়লাব রাজশাহীর হাটবাজার। এ গুড় যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। রাজশাহী জেলার পুঠিয়া, বাগমারা, দুর্গাপুর, চারঘাট, বাঘা উপজেলায় উৎপাদিত হয় সুমিষ্ট খেজুরের গুড়। তবে শীত মৌসুমের শুরু থেকেই জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে উঠতে শুরু করে খেজুরের গুড়।

শীতের শুরুতেই নবান্নের আমেজ এখন শহর থেকে গ্রাম-গঞ্জের প্রতিটি বাসাবাড়িতে। চলছে নতুন ধানের আটায় (ময়দা) পিঠাপুলির উৎসব। তাই না জেনেই ক্রেতারা কিনছেন এই ভেজাল গুড়। এই গুড় ছড়িয়ে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র।

রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন রঞ্জিত কুমার সাহা বলেন, খেজুর রসের সঙ্গে চিনি মিশ্রিত করে আগুনের মাধ্যমে জাল করে একত্রিত করলে তাতে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। আর এই চিনি মিশ্রিত ভেজাল গুড় দিয়ে কোনো খাদ্যদ্রব্য তৈরি করে খেলে পেটের পীড়াজনিত নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ওই গুড় দিয়ে শিশুদের জন্য কোনো খাদ্য তৈরি করে খাওয়ালে লিভার ক্যানসারের মতো ভয়াবহ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ভেজাল গুড় শনাক্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাজার মনিটরিং কমিটির কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন জেলার সচেতন মানুষ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গুড়ের চেয়ে চিনির দাম কম হওয়ায় খেজুর গুড়ে চিনি মেশাচ্ছেন চাষিরা। নাম গোপন রাখার শর্তে পুঠিয়া উপজেলার দোমাদী ও মধুখালী গ্রামের এক চিনি মিশ্রিত গুড় চাষি বলেন, ভোরবেলা গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে এসে কড়াইয়ে রসজাল করে লালচে বর্ণের হলেই কড়াইয়ে চিনি ঢেলে দিয়ে তারপর একটু জাল দিলেই চিনি গুলে রসের সঙ্গে মিশে তৈরি হচ্ছে গুড়। চিনি গলে গেলে হাইড্রোজ, ফিটকিরি দিলে গুড়ের রং হয় উজ্জ্বল। চিনি, হাইড্রোজ, ফিটকিরি মিশ্রিত গুড় দেখতে চকচকে ও অনেক সুন্দর লাগে। সে কারণে বাজারে চাহিদাও অনেক বেশি। তিনি আরো বলেন, তিনি শুধু একা নন বর্তমানে প্রতিটি গ্রামের চাষিরা একইভাবে গুড় তৈরি করছে। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাটবাজারের আমদানি হওয়া খেজুরের গুড়ের ৯৮ ভাগই চিনি মিশ্রিত গুড়।

চারঘাট উপজেলার মালেকার মোড়ের গাছি জানান, তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে গাছের রস সংগ্রহের কাজ করে আসছেন। বিগত ১৭ বছর ধরে খেজুর রস থেকেই গুড় তৈরি করে আসছেন। কিন্তু অন্য গৃহস্থের দেখাদেখি তাকেও রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরি করতে হচ্ছে। পুঠিয়ার বানেশ্বর হাটের গুড়ের আড়ৎদার জানান, বর্তমানে হাটবাজারে খেজুরের গুড়ের অধিকাংশই চিনি মিশ্রিত ভেজাল গুড়। কেনার সময় চিনতে পারলেও কোনো কিছু করার থাকে না। কারণ চিনি মিশ্রিত ব্যতীত স্বচ্ছ খেজুর রসের তৈরি গুড় পাওয়া অত্যন্ত দুষ্কর। বাজারে দুয়েকজনের কাছে ভালো গুড় পাওয়া গেলেও চাহিদা মতো না পাওয়ায় ব্যবসার স্বার্থে বাধ্য হয়েই কিনতে হচ্ছে ভেজাল গুড়।

ভেজাল প্রতিরোধে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা দরকার। অসাধু চাষিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় না নেওয়া পর্যন্ত ভেজাল বন্ধ হবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist