আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ট্রাম্পের ‘বর্ণবাদী মন্তব্যে’ বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকের সময় হাইতি, এল সালভাদর এবং আফ্রিকার কিছু দেশকে নিয়ে খুবই স্থূল এবং অরুচিকর ভাষা ব্যবহার করায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ।
হোয়াইট হাউসে কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে অভিবাসননীতি নিয়ে এক বৈঠকের সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এসব দেশকে ‘শিটহোল’ বা ‘পায়খানার গর্তে’র সঙ্গে তুলনা করেন বলে খবর দেয় মার্কিন গণমাধ্যম। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক
নিন্দা এবং প্রতিবাদ শুরু হওয়ার পর ট্রাম্প অবশ্য এ-রকম শব্দ ব্যবহারের কথা অস্বীকার করছেন।
কিন্তু ওই বৈঠকে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট দলীয় একজন সিনেটর ডিক ডারবিন দাবি করছেন, তিনি প্রেসিডেন্টকে বর্ণবাদী শব্দ ব্যবহার করতে শুনেছেন। তিনি শুধু একবার নয়, কয়েকবার এই শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তিনি কিছু আফ্রিকান দেশকে ‘শিটহোল’ বলে বর্ণনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নালসহ অনেক সংবাদপত্রেই গত বৃহস্পতিবার এই খবর প্রকাশিত হয়। এর কোনো প্রতিবাদ হোয়াইট হাউস থেকে করা হয়নি।
সিনেটর ডিক ডারবিন বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে, প্রেসিডেন্ট যে শব্দগুলো সেখানে ব্যবহার করেছেন, হোয়াইট হাউসের ইতিহাসে, ওই ওভাল অফিসে বসে এর আগে কখনো কোনো প্রেসিডেন্ট তা বলেছেন।’ অভিবাসন নিয়ে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট দলীয় সিনেটরদের একটি দল প্রস্তাব নিয়ে প্রেসিডেন্টের কাছে গিয়েছিলেন। তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাকি তাদের বলেছিলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ বা এ-রকম বিপর্যয়ের শিকার দেশগুলোর মানুষদের আশ্রয় দেওয়ার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বরং উচিত, নরওয়ের মতো দেশ থেকে অভিবাসী আনা।
ওয়াশিংটন পোস্ট প্রেসিডেন্টকে সরাসরি উদ্ধৃত করে বলছে, এরপর তিনি বলেছেন, এসব ‘শিটহোল’ দেশ থেকে কেন লোকজনকে আমাদের দেশে আনতে হবে। সিনেটর ডারবিন বলেন, যখন প্রেসিডেন্টকে জানানো হয় যে, ‘টেম্পোরারি প্রটেকটেড স্ট্যাটাস’ (টিপিএস) বা সাময়িক সুরক্ষা পাওয়া অভিবাসীদের বেশির ভাগই এল সালভাদর, হন্ডুরাস এবং হাইতির নাগরিক, তখন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, হেইশিয়ান? আমাদের কি আসলে আরো হেইশিয়ানের কোনো দরকার আছে?
তবে গত শুক্রবার সকাল থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক টুইট করে এ-রকম কথা বলার কথা অস্বীকার করতে থাকেন। তিনি বলেন, আমি হাইতির মানুষ সম্পর্কে বাজে কিছু বলিনি। বতসোয়ানা সে দেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, এসব কথাবার্তা চরম দায়িত্বহীন, নিন্দনীয় এবং বর্ণবাদী।
আফ্রিকান ইউনিয়ন বলেছে, তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মন্তব্য শুনে শঙ্কিত।
জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক মুখপাত্র রুপার্ট কোলভিল বলেছেন, যদি প্রেসিডেন্ট এসব কথা সত্যিই বলে থাকেন, সেটা স্তম্ভিত হওয়ার মতো এবং লজ্জাজনক। তিনি বলেন, এটাকে ‘বর্ণবাদী’ বলা ছাড়া আর কিছু বলার সুযোগ নেই। আর যুক্তরাষ্ট্রে অশ্বেতাঙ্গ নাগরিকদের একটি সংগঠন ‘ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশেন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব কালারড পিপল’ বলেছে, প্রেসিডেন্ট দিনে দিনে আরো বেশি করে বর্ণবাদ আর বিদেশি বিদ্বেষের গর্তের গভীরে ঢুকে যাচ্ছেন।
কংগ্রেসের এক কৃষ্ণাঙ্গ সদস্য সেডরিক রিচমন্ড বলেছেন, প্রেসিডেন্ট যে আমেরিকাকে আবারও সেরা দেশে পরিণত করার নামে আসলে শ্বেতাঙ্গদের দেশে পরিণত করতে চাইছেন, এটা তার আরো একটা প্রমাণ।
আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোকে নিয়ে ট্রাম্পের ‘অত্যন্ত নোংরা জায়গা’ বলেছেন, এমন খবর প্রকাশ হওয়ার পর এ মন্তব্যের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমা চাইতে বলেছে আফ্রিকান ইউনিয়ন।
আফ্রিকার দেশগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী ওই গোষ্ঠীটির ওয়াশিংটন ডিসি মিশন ট্রাম্পের এ মন্তব্যে ‘মর্মাহত, অপমানিত ও উদ্বিগ্ন’ হওয়ার কথা জানিয়েছে বলে খবর বিবিসির। গত বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের ওভাল দফতরে অভিবাসন নিয়ে এক বৈঠক চলাকালে ট্রাম্প কথিত ওই মন্তব্যটি করেন বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়। কিন্তু কথিত ওই ভাষা ব্যবহার করেননি বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প।
ওই বৈঠকে উপস্থিত দুই রিপাবলিকান সিনেটরও ট্রাম্পের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। কিন্তু ওই বৈঠকে উপস্থিত ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর ডিক ডারবিন জানিয়েছেন, বৈঠকে বেশ কয়েকবার আফ্রিকার দেশগুলোকে ‘নোংরা জায়গা’ বলে মন্তব্য করে ‘বর্ণবাদী’ ভাষা ব্যবহার করেছেন ট্রাম্প।
গত শুক্রবার এক টুইটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, অভিবাসন আইন ‘কঠোর’ করা নিয়ে আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে ওই গোপনীয় বৈঠকটি করছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি বলছেন বলে যেসব শব্দ উল্লেখ করা হচ্ছে, সেগুলো ব্যবহার করা হয়নি।
অপরদিকে আফ্রিকান ইউনিয়ন বলেছে, এই মন্তব্য সুপ্রসিদ্ধ মার্কিন ভাবমূর্তি এবং বৈচিত্র্য ও মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাকে অসম্মান করেছে। এই মন্তব্যে আমরা আহত, অপমানিত ও উদ্বিগ্ন হয়েছি। আফ্রিকা মহাদেশ ও এর অধিবাসীদের বিষয়ে বর্তমান (মার্কিন) প্রশাসনের ব্যাপক ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে বলে গভীরভাবে বিশ্বাস করে আফ্রিকান ইউনিয়ন।
"