নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
লাখ টাকায় রফাদফা
স্বামীর আঘাতে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর মৃত্যু!
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে পাষ- স্বামীর লাথির আঘাতে পুতুল দেবনাথ (২৩) নামে এক অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে দ্রুত লাশ মাটিচাপা দেওয়ায় এলাকাবাসীর মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। সূত্র জানায়, বড়িকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যন আনোয়ার পারভেজ হারুদ ও ইউপি সদস্য মো. গোলাপ মেম্বার এক লাখ ৩০ হাজার টাকায় রফাদফা করেন।
ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার বিকালে উপজেলার বড়িকান্দি গ্রামে। নিহত পুতুল দেবনাথ পাশর্^বর্তী বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী গ্রামের হিরু দেবনাথের মেয়ে। বছর খানেক আগে বড়িকান্দি ইউনিয়নের স্বপন দেবনাথের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এটি স্বপন দেবনাথে দ্বিতীয় বিয়ে। স্বপনের মৃত প্রথম স্ত্রী শিল্পী দেবনাথ দুই সন্তান ছিল। পুতুল ও স্বপনের সংসারে দাম্পত্য কলহ ছিল। তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
প্রতিবেশীরা জানান, ঘটনার দিন অন্তঃসত্ত্বা পুতুলের সঙ্গে ঝগড়ার এক পর্যায়ে স্বপন পুতুলের পেটে লাথি মারে। সঙ্গে সঙ্গে পুতুল অজ্ঞান হলে তাকে দ্রুত স্থানীয় প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। ঢাকা মেডিক্যালে নেওয়ার পথে তার
মৃত্যু হয়। পরে সালিসি বৈঠকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার পারভেজ হারুদ ও সদস্য মো. গোলাপ এক লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
এ ব্যাপারে মেম্বার মো. গোলাপ বলেন, এটি স্বাভাবিক মৃত্যু। তাদের মাধ্যে পারিবারিক কলহ ছিল, এ নিয়ে তাদের মাধ্যে কয়েকদিন আগে ঝগড়া হয়। ওইদিন তার ডেলিভারির স্বাভাবিক ব্যথা উঠলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে ঢাকা পাঠানো হয়। মেডিক্যাল থেকে ফেরার সময় তার মৃত্যু হয়। মেয়ের পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে বিয়ের সময়ের লেনদেনের বিষয়টি বিবেচনায় এনে এই টাকা ফেরত দেওয়ার রায় হয়।
স্বপন দেবনাথের মা লাবণ্য দেবনাথ বলেন, বৌমার ডেলিভারির সময় খিঁচুনি উঠে, এ কারণে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ কারণে বৈঠকে তার ছেলেকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেন লাবণ্য দেবনাথ। বাড়িতে গিয়ে স্বপন দেবনাথকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে বড়িকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার পারভেজ হারুদ এক লাখ ৩০ হাজার টাকায় মীমাংসার কথা স্বীকার করে বলেন, বিয়ের সময় যা স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ৩০ হাজার টাকা দিয়েছিল। সেই টাকা ফেরত দেওয়া জন্য সালিসি বৈঠক হয়। বৈঠকের রায়ে টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। পুতুল দেবনাথের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। স্বামীর লাথিতে তার মৃত্যু হয়েছে এ বিষয়ে আমি অবগত নই। এ ব্যাপারে নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আসলাম সিকদার জানান, এ ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
"