পাবনা প্রতিনিধি

  ১২ জানুয়ারি, ২০১৮

নাব্য সংকটে বাঘাবাড়ী নৌরুট বন্ধ : ১২ জাহাজ আটকা

আপৎকালীন মজুদ থেকে জ্বালানি তেল সরবরাহ

নাব্যতা সংকটে যমুনা। এ কারণে বাঘাবাড়ী বন্দরের সঙ্গে নৌ-যোগাযোগ প্রায় বন্ধের পথে। গত শনিবার থেকে জ্বালানি তেল, রাসায়নিক সারসহ অন্য পণ্যবাহী জাহাজ বাঘাবাড়ী বন্দরে যেতে পারছে না। বাঘাবাড়ী বন্দরের ৩০ কিলোমিটার ভাটিতে নগরবাড়ীর উজানে ৪৯ লাখ লিটার জ্বালানি তেল ও ৩৫ হাজার বস্তা রাসায়নিক সারভর্তি আটটি কার্গো জাহাজ যমুনা নদীতে আটকা পড়েছে। চট্টগ্রাম থেকে জ্বালানি তেল ও রাসায়নিক সার নিয়ে জাহাজগুলো বাঘাবাড়ী বন্দরে যাচ্ছিল। বাঘাবাড়ী-আরিচা নৌরুটে নগরবাড়ীর উজানে নাব্যতা সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করায় জাহাজগুলো বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে পৌঁছতে পারছে না। আবার বন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া জাহাজগুলো গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না।

এদিকে বিআইডব্লিউটিএ যমুনার বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজিং করে নদীর বুক থেকে তুলে আনা পলি মাটি ফের নদীতেই ফেলছে। ফলে স্রোতের টানে পলি মাটি ভাটিতে গিয়ে ডুবোচরের সৃষ্টি করছে।

জানা যায়, বাঘাবাড়ী অয়েল ডিপোর পদ্মা, মেঘনা ও যমুনাÑতিনটি কোম্পানির বিপণনকেন্দ্রে প্রায় পাঁচ কোটি ৮০ লাখ লিটার জ্বালানি তেল আপৎকালীন মজুদ আছে। বাঘাবাড়ী থেকে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় সেচ মৌসুমে প্রতিদিন ৩৬ যে তেল মজুদ আছে, তা দিয়ে আগামী ১৬ দিন জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এ অবস্থায় বোরো আবাদ ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, জ্বালানি তেল, রাসায়নিক সার ও পণ্যবাহী কার্গো চলাচলের জন্য ১০ থেকে ১১ ফুট পানির গভীরতা প্রয়োজন। বাঘাবাড়ী বন্দরের ৩০ কিলোমিটার ভাটিতে নগরবাড়ীর উজানে আধা কিলোমিটার এলাকায় পানির গভীরতা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬ থেকে ৭ ফুট। গত শনিবার থেকে নগবাড়ীর উজানে ৩৫ হাজার বস্তা টিএসপি, এমওপি, ডিওপি ও ইউরিয়া সার ও ৪৯ লাখ লিটার জ্বালানি তেলভর্তি এমভি সাদিয়া, এমভি অনিক, এমভি সিলিং বিজয়, এমভি আছরসহ ১২টি জাহাজ যমুনা নদীতে আটকা পড়েছে। আটকা পড়া জাহাজের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। গত বছরের নভেম্বরে ১০ লাখ লিটার জ্বালানি তেল বাঘাবাড়ী বন্দরে এসেছে। গত ডিসেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ লিটারে। এখন জাহাজ চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। এই বন্দরে কর্মরত পাঁচ হাজার শ্রমিক পরিবারে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ১৪টি বাফার গুদামে রাসায়নিক সার চাহিদার ৯০ ভাগ বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে জোগান দেওয়া হয়। নাব্যতা সংকটে বাফার গুদামগুলোতে আপৎকালীন সারের মজুদ গড়ে তোলার কাজ চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে। বিসিআইসির বগুড়া আঞ্চলিক অফিসের একটি সূত্র জানায়, ইরি-বোরো আবাদ মৌসুমে উত্তরাঞ্চলে ১২ লাখ টন রাসায়নিক সারের প্রয়োজন। ১৪টি বাফার গুদামে আপৎকালীন মজুদ আছে দুই লাখ ৮০ হাজার টন। নয় লাখ টন সার বিভিন্ন পথে আমদানি করা হচ্ছে। তবে প্রয়োজনের বেশির ভাগ সার বাঘাবাড়ী বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়। যমুনা নৌরুটে নাব্যতা সংকটে আপৎকালীন সার মজুদের কাজ বিঘিœত হচ্ছে। এ কারণে বাঘাবাড়ী বন্দরের মাধ্যমে চাল ও গমসহ অন্য পণ্যসামগ্রী রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

আগামী দু-এক সপ্তাহের মধ্যে পানির স্তর আরো কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা। নৌ-চ্যানেলের ওই পয়েন্টে চরের বেড়ে গেছে।

বাঘাবাড়ী নৌবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বাঘাবাড়ী থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার নৌপথের মোহনগঞ্জ, পেঁচাকোলা, হরিরামপুর, কল্যাণপুর, চরসাফুলা, চরশিবালয়, নাকালী ও রাকশাসহ ১০টি পয়েন্টে পানির গভীরতা কমে ৭ থেকে ৮ ফুটে দাঁড়িয়েছে। এমভি জুগর্ডেনের মাস্টার হেলাল উদ্দিন জানান, দৌলতদিয়া থেকে বাঘাবাড়ী নৌবন্দর পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার নৌপথের ১০টি পয়েন্টে পানির গভীরতা কমে দাঁড়িয়েছে ৬ থেকে ৭ ফুট। সরু হয়ে গেছে নৌ-চ্যানেল।

বিআইডব্লিউটিএ আরিচা অফিস সূত্র জানায়, প্রতি বছরই এ সময় দৌলতদিয়া থেকে বাঘাবাড়ী নৌপথে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। নৌ-চ্যানেল সচল রাখার জন্য যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজিং শুরু হয়েছে। বালির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় ড্রেজিং করার পরও পলি পড়ে ডুবোচরগুলো আগের স্থানে ফিরে যাচ্ছে। জাহাজগুলো অতিরিক্ত মালামাল বহন করায় ডুবোচরে আটকা পড়ছে। এ ছাড়া মোহনগঞ্জে যমুনা ও হুড়াসাগর নদীর মিলনস্থলে ডুবোচর জেগেছে। ফলে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে।

বিপিসির বাঘাবাড়ী রিভারাইন অয়েল ডিপোর যমুনা কোম্পানির ডেপুটি ম্যানেজার এ কে এম জাহিদ সরোয়ার, মেঘনার ম্যানেজার মো. জালাল উদ্দিন এবং পদ্মার ম্যানেজার মো. আনোয়ার হোসেন জানান, বাঘাবাড়ীতে আরো প্রায় ৭৪ লাখ লিটার ডিজেলভর্তি ১২টি জাহাজ চিটাগং থেকে বাঘাবাড়ী বন্দরের বন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে এসেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist