কাওছার আলী, সিলেট

  ১১ জানুয়ারি, ২০১৮

আতঙ্কের নাম টিলাগড় এলাকাবাসী উদ্বিঘœ

একের পর এক খুন সংঘর্ষ ও হিংস্র মহড়া * অস্ত্র উদ্ধারে পদক্ষেপ নেই পুলিশের

টিলাগড়, সিলেট নগরীর আলোচিত একটি এলাকা। এমসি কলেজ, সিলেট সরকারি কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এ এলাকায় অবস্থিত। এখানে রাজনৈতিক সংঘর্ষে রক্ত ঝরার ইতিহাস যেমন আছে, তেমনি আছে নিরীহ মানুষ খুনের ঘটনাও। পুরো সিলেট নগরীতে যত অপরাধ সংঘটিত হয় তার চেয়ে বেশি হয় এই এলাকায়। একের পর এক হত্যা, সংঘর্ষ ও অস্ত্রের মহড়ার ঘটনায় ‘কিলিং জোন’-এ পরিণত হয়েছে টিলাগড়। কিন্তু অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। এই নগরবাসীর কাছে টিলাগড় এলাকা এখন আতঙ্কের নাম। টিলা গড়ের নাম শুনলে তারা উদ্বিঘœ হন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রভাব বিস্তার, সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি, দখলসহ নানা কারণে একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটছে টিলাগড়ে। এসব অপকর্ম রোধে ছাত্র সংগঠনগুলোতে বহিষ্কার, কমিটি স্থগিতসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ২০০৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত টিলাগড়ে খুনের শিকার হয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মী তানিম খান, মেধাবী শিক্ষার্থী আকবর সুলতান, মিজান কামালী, উদয়েন্দু সিংহ পলাশ, জাকারিয়া মোহাম্মদ মাসুম, ওমর আহমদ মিয়াদ ও ব্যবসায়ী করিম বক্স মামুন। টিলাগড়ে সর্বশেষ খুন হয়েছেন সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ কর্মী তানিম খান। গত রোববার রাতে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে খুন হন তিনি। তানিম সিলেট সরকারি কলেজের বিএ পাস কোর্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এবং ওসমানীনগর উপজেলার বুরুঙ্গা গ্রামের ইসরাইল খানের ছেলে। তিনি শহরতলির ইসলামপুর এলাকায় একটি মেসে থাকতেন। জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক রণজিৎ সরকার সমর্থিত জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিরন মাহমুদ নিপু গ্রুপের কর্মী ছিলেন তিনি। তানিম খুনের পর কাউন্সিলর আজাদ গ্রুপের নেতা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম রায়হান চৌধুরীর অনুসারীদের দায়ী করা হচ্ছে। এর আগে ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর টিলাগড়ের কিলাররা প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন করে ছাত্রলীগের সক্রিয়কর্মী জাকারিয়া মোহাম্মদ মাসুমকে। নগরীর ছড়ারপাড়ের বাসা থেকে দিনেদুপুরে ধরে এনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর মাসখানেক পরই ১৬ অক্টোবর টিলাগড়ে আজাদ সমর্থিত রায়হান চৌধুরীর অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলায় খুন হন রণজিৎ সমর্থিত নিপু অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী ওমর আহমদ মিয়াদ। এই হত্যাকান্ডের পর জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এম রায়হান চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে মামলাও হয়েছে। মিয়াদ হত্যাকান্ডের জেরে বাতিল করা হয় সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটিও। ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট দিনেদুপুরে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে নগরীর জিন্দাবাজারের এলিগেন্ট শপিং সিটির মোবাইল ব্যবসায়ী করিম বক্স মামুনকে হত্যা করা হয়। এর আগে ২০১০ সালের ১২ জুলাই টিলাগড় পয়েন্টে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মেধাবী শিক্ষার্থী মুক্তিযোদ্ধা সন্তান উদয়েন্দু সিংহ পলাশকে।

টিলাগড়ে খুনের রাজনীতির শুরু ২০০৩ সাল থেকে। ওই বছরের ৭ জানুয়ারি প্রতিপক্ষের অতর্কিত হামলায় খুন হন আকবর সুলতান। আকবর সিলেট সরকারি কলেজের ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন। একই বছরের ৯ অক্টোবর খুন হন আরেক ছাত্রলীগ নেতা মিজান কামালী। ২০১২ সালের ৮ জুলাই রাতে ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষে ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের তিনটি ব্লকের ৪২টি কক্ষ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ মামলার আসামিদের আস্তানাও টিলাগড়কেন্দ্রিক। অনুসন্ধানে দেখা যায়, টিলাগড় এলাকায় সাতটি চক্রের কাছে অবৈধ অস্ত্রের মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটিই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার শেল্টারে রয়েছে। বাকি দুটি বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে গড়ে উঠেছে। অবৈধ অস্ত্রের জোগান মূলত সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে আসে।

গত বৃহস্পতিবার ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এমসি কলেজে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ। সংঘর্ষ চলাকালে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে একজনের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কিন্তু গতকাল বুধবার পর্যন্ত অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তবে অস্ত্র ব্যবহারকারীর পরিচয় শনাক্ত হয়েছে বলে দাবি করছেন মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার ওসি আখতার হোসেন। পুলিশ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৯ বছরে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে টিলাগড় এলাকায় কমপক্ষে ৩০টির বেশি সংঘর্ষ হয়েছে। প্রতিটিতেই অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। একের পর এক খুন, সংঘর্ষে উদ্বিগ্ন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist