মাহবুবুল আলম

  ২৯ জুলাই, ২০১৮

৪৭ বছরে বাংলাদেশের সংবাদপত্র

সংবাদপত্র যেকোনো দেশ বা জাতির দর্পণস্বরূপ। এর মাধ্যমে মানুষ তার রাষ্ট্র, সমাজ ও নানাবিদ ন্যায়নিষ্ঠতা প্রতিনিয়ত জানতে পারে। বর্তমান সময়ে সংবাদপত্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই সংবাদপত্রকে ফোর্থস্টেট হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। সংবাদপত্র যে প্রকৃতপক্ষে ‘ফোর্থস্টেট’-এ ধারণাটিও মূলত শতাব্দী পুরনো। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের গ্যালারিতে উপস্থিত সংবাদপত্র প্রতিনিধিকে লক্ষ করে রাষ্ট্র কাঠামোতে সংবাদপত্রের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা বোঝাতে এডমন্ড বার্ক বলেছিলেন, তারা এই রাষ্ট্রের ‘ফোর্থস্টেট’। সে বিবেচনায় চলমান জীবনে সংবাদপত্রের গুরুত্ব অপরিসীম।

সুশাসন, মানুষের বাক-স্বাধীনতা, উদার মনমানসিকতা, গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা, মূল্যবোধ, আইনের শাসন, মানবাধিকার, তথ্য অধিকার, ন্যায়বিচার, সামাজিক শান্তি-সমঝোতা, দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক তথা সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জনে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সংবাদপত্র অবদান রাখছে। সংবাদপত্র পৃথিবীকে মানুষের মুঠোর মধ্যে এনে দিয়েছে। স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ, মানবাধিকার উন্নয়নে ও নাগরিক অধিকার সংরক্ষণে, গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য সাংবাদিক এবং সংবাদপত্রের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। সংবাদপত্রের ভূমিকার বিষয়টি আমরা আরো বেশি অনুধাবন করতে পেরেছি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে মানুষের অধিকার আদায়ের বিভিন্ন সংগ্রামের পাশাপাশি রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে। দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকরা অনন্য সাধারণ ভূমিকা পালন করেছে।

সংবাদপত্র এমন একটি দলিল, যা যুগ যুগ ধরে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। সংবাদপত্রকে গণতান্ত্রিক আশা-আকাক্সক্ষার রক্ষার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। এ কারণেই গণতন্ত্র বিপন্ন হলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিপর্যয় ঘটে, আবার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব হলে গণতন্ত্রও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। সংবাদপত্র মূলত পাঠকের জন্য এবং সে পাঠক অবশ্যই সমাজমনস্ক পাঠক। সংবাদপত্র যখন সমাজের অবিকৃত নানা ঘটনার একটি নিরপেক্ষ সংবাদচিত্র পাঠকদের উপহার দিতে পারে, তখন সে সংবাদপত্র শুধু পাঠকের খোরাক জোগায় না, একজন সাধারণ পাঠককেও সপ্রতিভ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে। নাগরিকদের রাজনৈতিক জ্ঞান অর্জনের যত উপায় আছে, তার মধ্যে সংবাদপত্রের স্থান শীর্ষে। সংবাদপত্রের জগতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত হওয়ায় এবং পৃথিবীর গণমাধ্যমগুলো অতিবৈজ্ঞানিক ত্বরিত সেবা প্রদান করতে সক্ষম হওয়ায় সংবাদপত্রের গুরুত্ব আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে সংবাদপত্র দুই জায়গায় দায়বদ্ধ। একটি বিবেক, অন্যটি সমাজ। সংবাদপত্রকে অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে হয়। মিথ্যা সংবাদ কিছুক্ষণ বা কয়েকদিনের জন্য কারো কারো কাছে বাহবা কুড়াতে পারে, কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কিংবা যারা সত্য জানেন তাদের কাছে চিরদিনের জন্য ঘৃণার পাত্র হয়ে থাকেন।

সংবাদপত্র একটি দেশ ও জাতিকে যেমন এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, আবার জাতির সর্বনাশও করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সংবাদ পরিবেশনই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিরপেক্ষ বস্তুনিষ্ঠ খবর সমাজে শান্তি আনে, আর খারাপ খবর কখনো সমাজকে বিষিয়ে তোলে, অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। সেহেতু সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের সতর্ক হয়েই লিখতে হয়। সংবাদপত্রে যে সংবাদ সেখানে বিধৃত হবে, সে সংবাদের নানাবিদ উপাদান পাওয়া যাবে, সমসাময়িক সমাজ ও সমাজভূমি থেকে। রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় চরিত্র, যা সেই রাষ্ট্রের সমাজ অর্থনীতি ও জীবনব্যবস্থার প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে অনিবার্যরূপে তার অপ্রতিরোধ্য প্রভাব সংবাদপত্রের ওপরও বর্তায়। যাক এ বিষয়ে লিখতে গেলে বৃহৎ পরিসরের দরকার। তাই আমি আমাদের স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের সংবাপত্রের সংকট বিকাশ ও অন্যান্য বিষয়ে আলোকপাত করব।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক সাংবাদিকতার প্রয়োজন এক ধরনের ফুরালেও, আশির দশক পর্যন্ত আমরা রাজনৈতিক সাংবাদিকতাকেই দেখেছি। বস্তুনিষ্ঠ ও এথিক্যাল রিপোর্টিংয়ের পাশাপাশি রুচিশীলতা, সংস্কৃতিমনস্কতার পরিচয় দেয় বেশ কিছু পত্রিকা। কম্পিউটার ডেস্কটপ প্রকাশনা ও অফসেট মুদ্রণ প্রযুক্তি ইতোমধ্যে চলে আসায় মুদ্রণমানেও পরিবর্তন আসে। গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিবর্তন আসে দৈনিক পত্রিকায় লেখক ও পাঠকের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। নির্ধারিত উপ-সম্পাদকীয় লেখকের বাইরে মধ্যপাতায় চিন্তক, বুদ্ধিজীবী এমনকি পাঠক পর্যন্ত লেখা শুরু করেন নিজ পরিচয় বিবৃত করার মাধ্যমে। এরা সবাই হয়ে ওঠেন কলামিস্ট এবং দ্রুত মধ্যপাতানির্ভর একটি সিভিল সোসাইটি গড়ে উঠতে থাকে বাংলাদেশে। আজকের কাগজের নতুনত্ব ও ভোরের কাগজের আবির্ভাবের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয় এবং প্রথম আলো, জনকণ্ঠ, কালেরকণ্ঠ, আমাদের সময় পত্রিকার আবির্ভাবের পর ক্ষণস্থায়ী দ্বিতীয় পর্যায়ের অবসান ঘটে এবং প্রসার ঘটে করপোরেট সংবাদপত্র। প্রথম আলোর মাধ্যমেই করপোরেট সাংবাদিকতার প্রবর্তন ঘটে, যদিও ভোরের কাগজের সম্পাদক-সাংবাদিকরা মিলেই পত্রিকাটি চালু করেন। কিন্তু মালিকানার প্রকৃতির কারণেই একই সম্পাদক-সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা থেকে সরে এসে করপোরেট সাংবাদিকতা শুরু করেন। আমদানিকারক বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ট্রান্সকম গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান প্রথম আলোর পাশাপাশি, এস এম আলী প্রতিষ্ঠিত ইংরেজি দৈনিক দি ডেইলি স্টারও ট্রান্সকম গ্রুপের অঙ্গীভূত হয়। নব্বই দশকের শেষের দিকে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের যূথবদ্ধতার আগেও করপোরেট সাংবাদিকতার নিদর্শন নিয়ে জনকণ্ঠ বা মুক্তকণ্ঠ হাজির হয়েছিল, কিন্তু তারা প্রভাববিস্তারকারী হয়নি। বর্তমানে করপোরেট সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে ট্রান্সকম গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান প্রথম আলোর ও এস এম আলী প্রতিষ্ঠিত ইংরেজি দৈনিক দি ডেইলি স্টার, গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের জনকণ্ঠ, ইস্টওয়েস্ট গ্রুপের কালের কণ্ঠ ও বাংলাদেশ প্রতিদিন, যমুনা গ্রুপের দৈনিক যুগান্তর, হামিম গ্রুপের সমকাল, ফেবিয়ান গ্রুপের প্রতিদিনের সংবাদসহ বিভিন্ন করপোরেট সংবাদপত্র প্রচার ও প্রসারে এগিয়ে রয়েছে।

সংসদের সপ্তম অধিবেশনে সরকারদলীয় সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জানান, প্রচারসংখ্যা ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৩০০ নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো এবারও শীর্ষে রয়েছে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন। ৫ লাখ ১ হাজার ৮০০ প্রচারসংখ্যা নিয়ে দ্বিতীয় স্থান ধরে রেখেছে দৈনিক প্রথম আলো। ২ লাখ ৫০ হাজার ৮২০ প্রচারসংখ্যা নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে দৈনিক কালের কণ্ঠ। বর্তমানে দেশে মিডিয়াভুক্ত দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ৫২৮টি। এর মধ্যে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় ২৪৫টি এবং মফস্বল থেকে ২৮৩টি। তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিকের সংখ্যা ১৪৬টি। প্রচার সংখ্যা অনুয়ায়ী, এ তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছে প্রথম আলো, তৃতীয় কালের কণ্ঠ। ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য পত্রিকার অবস্থান হচ্ছে আমাদের সময়, যুগান্তর, ইত্তেফাক, জনকণ্ঠ, সমকাল, মানবকণ্ঠ, আলোকিত বাংলাদেশ, প্রতিদিনের সংবাদ, ভোরের পাতা, ভোরের কাগজ, ইনকিলাব, মানবজমিন, নয়া দিগন্ত, সংবাদ, যায়যায়দিন, আমাদের অর্থনীতি, ভোরের ডাক, গণকণ্ঠ, আজকালের খবর, আমার সংবাদ, বণিক বার্তা, ডেইলি স্টার, জনতা, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, দি ডেইলি অবজারভার, খবর, দি ইনডিপেনডেন্ট, ডেইলি সান, দি নিউএইজ, দৈনিক বাংলা, সংগ্রাম, ঢাকা ট্রিবিউন ইত্যাদি। এ তালিকার ১৪৬টি পত্রিকার মধ্যে সবশেষে রয়েছে দি নিউজ লাইন।

বিশ্বব্যাপী প্রিন্ট মিডিয়ার ক্ষয়িঞ্চু প্রবণতা চলছে। এ প্রবণতা থেকে আমাদের দেশের অবস্থান ভিন্ন। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এসব কারণে কোনো পত্রিকা বন্ধ হয়নি। বরং নতুন নতুন সংবাদপত্র বাজারে আসছে। কেবল তাই নয়, সংবাদপত্র রীতিমতো একটি শিল্পে পরিণত হয়েছে। নানা কারণে পত্রিকার সার্কুলেশন কমছে না বরং বাড়ছে। বর্তমানে ইন্টারনেট সুবিধার ফলে বিদেশে বাংলা সংবাদপত্রের পাঠকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও উন্নত দেশের তুলনায় আমরা তথ্যপ্রযুক্তিগত দিক থেকে একটু পিছিয়ে রয়েছি। সে জন্য আমাদের দেশে সংবাদপত্রের গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরেকটি বিষয় হলো, এখানে দুই টাকায় একটি সংবাদপত্র পাওয়া যায়। এ যুগে এত সস্তায় অন্য কোনো দেশে পত্রিকায় যাওয়া যায় কিনা সন্দেহ রয়েছে। সম্প্রতি আমাদের দেশের প্রিন্ট মিডিয়ার চেয়ে ইলেকট্রনিক মিডিয়া তুলনামূলকভাবে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। তবে সে তুলনায় দেশে দক্ষ মানবশক্তি গড়ে উঠছে না। সাংবাদিকতা জগৎকে আরো সমৃদ্ধ ও বিকশিত করার জন্য দরকার দক্ষ জনশক্তি। এ লক্ষ্যে সাংবাদিকতার একাডেমিক বিষয়টি এখন গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পাচ্ছে। বর্তমানে অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা পড়ানো হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, এ শিক্ষা সাংবাদিকতার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তবে সাংবাদিকতা একটি সৃজনশীল কর্ম। যথাযথ সৃজনশীলতার চর্চার মাধ্যমে একজন সাংবাদিক দেশ, জাতি ও সমাজকে সুপথ দেখাতে পারে। তেমনি অপসাংবাদিকতার মাধ্যমে সৃষ্টি হতে পারে ভয়াবহ সংকট।

২০২১ সালে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বয়স অর্ধশত পূর্ণ হবে। বিগত দেড় দশকে বাংলাদেশের মিডিয়া খাতে বিরাট পরিবর্তন এসেছে। তাই আগামী দশ বছরে কী পরিবর্তন আসবে, তার পূর্বাভাস দেওয়া বেশ কঠিন। তবে এটুকু বলা যায়, বিগত দশকের মতো নাটকীয় পরিবর্তন আসবে না। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের গণমাধ্যম পরিস্থিতি পৃথিবীর উন্নত অনেক দেশ থেকেই আলাদা। পৃথিবীর নানা প্রান্তে যে ক্ষেত্রে সাইবার পরিসরের কারণে সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশে এখনো নতুন নতুন সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতিও এখন সম্প্রসারণশীল।

স্বাধীন দেশের মুক্ত পরিবেশে এত এত পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সংবাদপত্রশিল্প শাসক চক্র ও কায়েমি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর কোপানলে পড়তে হয়। নানা দমন-পীড়ন, জেল-জুলুম নেমে আসে সংবাদপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের। ১৯৭৪ সালে ‘বঙ্গবন্ধুর’ দ্বিতীয় বিপ্লব বাকশাল গঠনের পর সংবাদপত্রের বিশৃঙ্খলা দূর করার লক্ষ্যে একই সালের ১৬ জুন সরকার মাত্র ৪টি পত্রিকা সরকার নিয়ন্ত্রণে প্রকাশনা রেখে সব পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করেছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে সংবাদপত্রে স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলা হলেও কঠোর সেন্সরশিপের মাধ্যমে সংবাদপত্রের টুটি চেপে ধরা হয়। আবার ১৯৮২-এর ২৪ মার্চ সামরিক শাসন জারি এবং জেনারেল এরশাদের সাড়ে ন-বছর ও গণতান্ত্রিক অধিকার সংবাদপত্রের লেখার স্বাধীনতা হরণের এক নাতিদীর্ঘ ইতিহাস। নেমে আসে সামরিক শাসকের পক্ষ থেকে মতপ্রকাশের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিধি-নিষেধ। ২০০৬-০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও সংবাদপত্রের ওপর নানা বিধি-নিষেধ আরোপিত হয়েছিল। কিন্তু তার পরও সংবাদপত্রগুলো স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে কলমের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ঝুঁকি নিতে থাকে।

তবে এ নিবন্ধের শেষপর্যায়ে একটি কথা না বললেই নয়, আর সে কথাটি হলোÑঅনেক পত্রিকার বিরুদ্ধেই নানাবিদ অভিযোগ আছে। আবার কিছু কিছু সংবাদপত্রের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সেগুলো সংবাদপত্র নাকি প্রচারপত্রÑএ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সংবাপত্রগুলোকে বিশেষ নজর দিতে হবে। ন্যায়-নীতিনির্ভর সাংবাদিকতার চর্চা বরাবরই প্রাধান্য দিতে হবে। নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নানাবিদ অনাচারের বিরুদ্ধে কঠিন প্রাচীর গড়ে তোলে।’ কাজেই এ বিষয়টি মাথায় রেখেই দেশের প্রতিটি সংবাদপত্র কাজ করে যেতে হবে। কাজেই এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। এ কথা অমূলক নয়, সংবাদপত্র একটি দেশ ও জাতিকে যেমন এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, আবার জাতির সর্বনাশও করতে পারে। নিরপেক্ষ বস্তুনিষ্ঠ খবর সমাজে শান্তি আনে, আর খারাপ খবর কখনো সমাজকে বিষিয়ে তোলে, অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। সেহেতু সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের সতর্ক হয়েই লিখতে হয়। সংবাদপত্রে যে সংবাদ সেখানে বিধৃত হবে, সে সংবাদের নানাবিদ উপাদান পাওয়া যাবে সমসাময়িক সমাজ ও সমাজভূমি থেকে। রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় চরিত্র, যা সেই রাষ্ট্রের সমাজ অর্থনীতি ও জীবন ব্যবস্থার প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে অনিবার্যরূপে, তার অপ্রতিরোধ্য প্রভাব সংবাদপত্রের ওপরও বর্তায়।

শেষ করতে চাই এই বলেÑসংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা হলো সম্পাদক ও মালিকদের। সে জন্যই সমাজের অতন্দ্র প্রহরী সম্পাদক ও মালিকদের কাজ করতে হবে। আজকাল সংবাদপত্রে নয়ছয় ঢুকে গেছে বলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হয়। কিছু কিছু সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে অন্ধ দলবাজির অভিযোগও আছে। সম্পাদক ও সংবাদপত্রের মালিককে তা অবশ্যই পরিহার করে চলতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবাই এ কথা মাথায় রেখে চলতে হবে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়।

লেখক : কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist