নিতাই চন্দ্র রায়
বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে সংবাদপত্রের ভূমিকা
কৃষি বাংলাদেশের প্রধান চালিকাশক্তি। বর্তমানে দেশের শতকরা ৬০ ভাগ লোক তাদের জীবন-জীবিকার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। মোট জিডিপিতে কৃষির অবদান শতকরা ১৪ ভাগ এবং মোট জনশক্তির শতকরা ৪৮ ভাগ এখনো কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা, দারিদ্র্যবিমোচন, কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পের প্রসার, সামাজিক উন্নয়ন ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে কৃষির অবদান অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।
বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে সংবাদপত্রের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসে কৃষকের মাঠের ফসল বিনষ্ট হলে সংবাদপত্রই তার সচিত্র সংবাদ পরিবেশন করে জনসাধারণের কাছে। আবার কোনো এলাকার ফসলে পোকা-কামড় বা রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ দেখা দিলে তার প্রতিকারের জন্য কৃষি বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সংবাদমাধ্যম। গত বছর বোরো মৌসুমে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ব্রি-২৮ জাতের ধানে ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলো বেশ গুরুতের সঙ্গে সেই সংবাদ প্রকাশ করে। এতে কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মতৎপরতা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ব্লাস্ট দমনে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন। হাতে-নাতে বালাইনাশক প্রয়োগের কৌশল শিখিয়ে দেন। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের মধ্যে ব্লাস্ট দমনের পরামর্শ সংবলিত লিফলেট বিতরণ করা হয়। এতে দেশের হাজার হাজার কৃষক ব্লাস্টের আক্রমণ থেকে তাদের বোরো ধান রক্ষা করতে সক্ষম হন। এ বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বোরো মৌসুমে ধানবীজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হলে দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলো সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন করে এবং সম্পাদকীয় পাতায়ও পরামর্শমূলক লেখা ছাপায়। এ কারণে কৃষি বিভাগ ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের তদারকি জোরদার করা হয় এবং কৃষকও বোরো বীজের কৃত্রিম সংকট থেকে অনেকটা পরিত্রাণ পান। এ বছর রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাগঞ্জের চাষিরা আমের ন্যায্যমূল্য পাননি। গত বছরে অর্ধেক দামে আম বিক্রি করে তারা চরম ক্ষতির শিকার হন। এ বিষয়ে সংবাদ, প্রতিদিনের সংবাদ, বণিকবার্তা, প্রথম আলোসহ বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত আমচাষিদের সমস্যা, আম চাষে তাদের অনীহার কথা সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানতে পারে। বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ ও ভর্তুকি বৃদ্ধির ব্যাপারেও দেশের সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন কৃষক সংগঠনের দাবি-দাওয়ার বিষয়গুলো সরকারের কাছে তুলে ধরে সংবাদমাধ্যম।
আমাদের কৃষকসমাজ আজও পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত জ্ঞান-অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কৃষিকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ জন্য ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে হেক্টরপ্রতি ধানের ফলন ৫ থেকে ৬ টন হলেও, আমাদের দেশে তা ৩ থেকে ৪ টন। কৃষিকাজে আধুনিক ধ্যান-ধারণা, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার এবং উচ্চফলনশীল বীজ, সারসহ অন্যান্য উপকরণের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সংবাদপত্রের ভূমিকা অপরিসীম। জৈবকৃষি ও সমন্বিত বালাই দমনে কৃষককে উৎসাহ জোগাতে সংবাদপত্রগুলোর অবদান কোনো অংশেই কম নয়। গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কোনো নতুন জাতের শস্য উদ্ভাবিত হলে তার গুণাগুণ, বিদ্যমান জাতের চেয়ে উদ্ভাবিত জাতের উৎকৃষ্টতা, কৃষকের লাভক্ষতি এবং উৎপাদন কৌশল প্রভৃতি বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করে নতুন জাতের ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে সংবাদপত্র। দেশের কোথাও কোনো কৃষক নতুন জাতের ফসল চাষ করে রেকর্ড পরিমাণ ফলন পেলে বা ওই বিষয়ের ওপর কোনো খামার দিবস অথবা ফলাফল প্রদর্শনী সভা অনুষ্ঠিত হলে সেই সফলতার গল্পও প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যম। রাজশাহী, নাটোর ও জয়পুরহাটে থাই পেয়ারা চাষের সফলতার কাহিনি, ভালুকায় সৌদি খেজুরের চাষ, বিদেশি ফল- স্ট্রবেরি, রাম্বুটান ও ড্রাগন চাষের খবরও পাই আমরা সংবাদপত্রের মাধ্যমে। ঈশ্বরদীর ছলিমপুর গ্রামের শাহজাহান আলী বাদশার (পেঁপে বাদশা) পেঁপে চাষে সফলতার গল্প, একই উপজেলার গাজর জাহিদ, কুল ময়েজের গাজর ও কুল চাষে সফলতার কাহিনি সারা দেশের কৃষক সংবাদপত্রের মাধ্যমেই জানতে পারেন। তাদের বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারপ্রাপ্তিতেও সংবাদ মাধ্যম অনন্য ভূমিকা পালন করে। সংবাদপত্রে প্রকাশের কারণেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক আগ্রহী কৃষক ছুটে আসেন পেঁপে বাদশার মামণি কৃষি খামারে। তারা শাহজাহান আলী বাদশার উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করা পেঁপে বাগান পরিদর্শন করেন এবং তার কাছ থেকে পেঁপে চাষ-সংক্রান্ত নানা তথ্য-উপাত্ত ও পরামর্শ গ্রহণ করে নিজের জমিতে পেঁপে বাগান গড়ে তুলেন। সংবাদপত্রের সুবাদেই দেশের মানুষ জানতে পারে চুয়াডাঙ্গার কলা কাদের, গদখালীর ফুল শের আলী এবং পাবনার কপি বারীর কথা। কেঁচো কম্পোস্ট, আলুসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করে ১২ বিঘা জমি থেকে বছরে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় করেন শরণখোলা, বাগেরহাটের মো. নাজমুল হাসান-এ খবর সংবাদপত্রের মাধ্যমেই জানতে পেরেছে দেশবাসী।
সংবাদপত্রগুলো বঙ্গবন্ধু জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষকদের নাম, ঠিকানা ও তাদের সফলতার গল্প অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করে। এতে দেশের নতুন প্রজন্ম কৃষিকাজের প্রতি আকৃষ্ট হয়। কৃষি উন্নয়নে তাদের মধ্যে উৎসাহ জাগে। নিজেকে একজন কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস পায়। আধুনিক পদ্ধতিতে শাকসবজি, ফল ও ফুলের চাষ, পুকুরে মৎস্য চাষ, গ্রামগঞ্জে পোলট্রি ও ডেইরি খামার স্থাপনে বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব সফলতা অর্জিত হয়েছে, তার পেছনে বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি, আমাদের পরিশ্রমী কৃষক, কৃষিবিদ ও কৃষিবিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টার সঙ্গে সংবাদপত্রগুলোও অনুঘটকের মতো কাজ করেছে। তা না হলে স্বাধীনতার ৪৭ বছরে জনসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও ধানের উৎপাদন তিন গুণ, গমের উৎপাদন দ্বিগুণ, সবজির উৎপাদন পাঁচ গুণ ও ভুট্টার উৎপাদন দশ গুণ বৃদ্ধি করে সম্ভব হতো না খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। সম্ভব হতো না মাছ ও মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন।
সাধারণ মানুষকে তথ্য পৌঁছে দিতে সংবাদপত্র তথা গণমাধ্যমের বিকল্প নেই। তথ্য এমন একটি শক্তি, যা উন্নয় কর্মকা-ের সব ধাপেই সমান ভূমিকা পালন করে। এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান বলেন, ‘তথ্যকে কাজে লাগিয়ে, জ্ঞানকে সবার জন্য ব্যবহার করে দারিদ্র্যের পথকে উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া যেতে পারে।’ আর নোবেল পুরস্কারবিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন যুক্তি দেখিয়ে বলেন, ‘যে দেশে সংবাদপত্র স্বাধীন, সে দেশে কখনো দুর্ভিক্ষ হবে না।’ তার যুক্তি হলো-সরকার যদি কেবল মিডিয়া নিরীক্ষণেই তাদের দায়-দায়িত্ব সীমাবদ্ধ না রেখে এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিচার-বিশ্লেষণ করে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তাহলে দুর্ভিক্ষ, মঙ্গা, খরা ও বন্যার হাত থেকে ক্ষুধার্ত জনগণকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দেওয়া সম্ভব। এসব কথা থেকেই সহজে অনুমান করা যায় সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে তথা কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে স্বাধীন ও দায়িত্বশীল সংবাদপত্র কত কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।
কৃষক কোনো নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে প্রথম শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তা গ্রহণ করেন না। নতুন প্রযুক্তি গ্রহণকালে তাকে সাধারণ অবগতি, আগ্রহ, মূল্যায়ন, পরীক্ষা-নিরীক্ষ এসব ধাপগুলো ক্রমান্বয়ে অতিক্রম করতে হয়। আগ্রহ পর্যায়ে নতুন প্রযুক্তিটি সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে চান কৃষক। এ সময় সংবাদপত্র নতুন প্রযুক্তির কল্যাণকর দিকগুলো প্রকাশ ও প্রচার করে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে কৃষকদের সহযোগিতা করে থাকে।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রতিদিন ৫০টিরও বেশি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এসব পত্রিকায় কৃষিবিষয়ক সংবাদ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হলেও দু-একটি বাদে কোনো দৈনিক পত্রিকাতেই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খেলাধুলা ও মহিলা বিষয়ের মতো কৃষি বিষয়ে আলাদা পাতা প্রকাশিত হয় না। একসময় অনেক দৈনিকে সাপ্তাহিক কৃষিবিষয়ক পাতা প্রকাশিত হতো। কিছুদিন নিয়মিত প্রকাশের পর পত্রিকাগুলো থেকে কৃষিবিষয়ক পাতাগুলো কী কারণে বন্ধ হয়ে গেল-তা আমাদের বোধগম্য নয়। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আলোকিত বাংলাদেশে সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার ‘কৃষি ও কৃষক’ নামে একটি কৃষি পাতা প্রকাশিত হতো। ওই পাতায় বিভিন্ন শাকসবজি ও ফল চাষের আধুনিক কলাকৌশল এবং পোকা-মাকড় ও রোগবালাই দমনের ওপর আমার অনেকগুলো লেখা প্রকাশিত হয়। ওই সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষক ফল ও সবজি চাষ বিষয়ে পরামর্শের জন্য আমাকে ফোন করতেন। আমিও তাদের সমস্যার কথা ধৈর্য ধরে শুনতাম এবং সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতাম। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও যায়যায়দিন পত্রিকায় ‘কৃষি ও সম্ভাবনা’ নামে কৃষি পাতাটি নিয়মিত প্রতি রোববার প্রকাশিত হচ্ছে। এতে সমকালীন কৃষি, কৃষকের সমস্যা, নতুন উদ্ভাবনসহ কৃষি ও কৃষকের নানা খবর নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। ফসলের নতুন জাত, চাষাবাদের আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে দেশের কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এসব প্রতিষ্ঠানে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সম্পর্কে কৃষক সংবাদপত্রের মাধ্যমেই প্রথম জানতে পারেন এবং তা মাঠে প্রয়োগ করে ফলন বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালান। আশার কথা-সম্প্রতি ‘বাংলাদেশের খবর’ নামের একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতি বুধবার ‘কৃষি ও অর্থনীতি’ নামে একটি কৃষি পাতা প্রকাশিত হচ্ছে। কৃষি ও অর্থনীতি পাতার এক সংখ্যায় একটি বিষয়কেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ওই পাতায়, আলু, আম, লিচু ও বৃক্ষ রোপণের ওপর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৃষিবিষয়ক লেখা প্রকাশিত হয়েছে। দৈনিক পত্রিকা ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে কৃষি বিষয়ে বেশ কিছু মাসিক ও পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশ করা হয়। এসব পত্রিকার মধ্যে রয়েছে মাসিক কৃষি কথা, মাসিক ফার্ম হাউস, মাসিক কৃষি বার্তা ও মাসিক কৃষি কাগজ ও মাসিক উর্বরা। কৃষিকথা বাংলাদেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী সরকারিভাবে প্রকাশিত বৃহত্তর কৃষি ও গবেষণামূলক পত্রিকা। পত্রিকাটি নামমাত্র মূল্যে কৃষক ও কৃষিসংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। বর্তমানে কৃষিকথার গ্রাহক সংখ্যা ৬০ হাজার এবং পাঠকের সংখ্যা ছয় লাখেরও বেশি। এ ছাড়া ‘পাক্ষিক কৃষি বিপ্লব’ ও ‘পাক্ষিক কৃষি প্রযুক্তি’ নামে দুটি কৃষিবিষয়ক পাক্ষিক পত্রিকা নিয়মিত রাজধানী ঢাকা থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। ৩২ পৃষ্ঠার পাক্ষিক কৃষি বিপ্লব পত্রিকাটিতে সারা দেশের কৃষিবিষয়ক খবরসহ, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নানা বিষয়, কৃষি ও কৃষকের সমস্যা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হয়। কৃষক এসব কৃষিবিষয়ক পত্রিকা থেকে আধুনিক চাষাবাদের কলাকৌশল, নতুন উদ্ভাবিত ফসলের জাত, কৃষিপণ্য সংরক্ষণ, কৃষি উপকরণের দাম, কৃষিপণ্যের বাজারদর প্রভৃতি বিষয়ে সম্যক ধারণা পান এবং আর্থিক ও সামাজিকভাবে উপকৃত হন।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশের কৃষি আজ নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। অসময়ে অতিবৃষ্টি, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরা ও লবণাক্ততা আমাদের কৃষিকে সংকটময় করে তুলছে। ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া এবং কৃষিশ্রমিকের অস্বাভাবিক মজুরি বৃদ্ধি কৃষি সমস্যাকে আরো জটিল ও প্রকট করে তুলেছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন, নদীভাঙন, বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট নির্মাণের ফলে প্রতি বছর শতকরা ১ ভাগ হারে কৃষিজমি কমছে। আর জনসংখ্যা বাড়ছে ১.৩৬% হারে। এই বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে কৃষিজমি হারাচ্ছে তার উর্বরতা শক্তি। উজাড় হচ্ছে বনভূমি। দখল ও দূষণের শিকার হচ্ছে আমাদের প্রাকৃতিক জলাশয়-নদী-নালা ও খাল-বিল। বিনষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ। কৃষির এসব বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সংবাদপত্রগুলোকে ভবিষ্যতে আরো বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত উঁচু করে দাঁড়াতে হবে অবহেলিত কৃষি ও কৃষকের পাশে।
লেখক : কৃষিবিদ
সাবেক মহাব্যস্থাপক (কৃষি), নর্থবেঙ্গল সুগার মিলস্ লিমিটেড
"