রায়হান আহমেদ তপাদার

  ২৬ মে, ২০১৭

বিশ্ব রাজনৈতিক পটভূমিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান। আইনসভা দ্বিপাক্ষিক। নিম্নকক্ষের নাম হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এবং এর সদস্য সংখ্যা ৪৩৫। উচ্চকক্ষের নাম সেনেট এবং এর সদস্য সংখ্যা ১০০। ভোট প্রদানের যোগ্যতা অর্জনের বয়স ১৮। ১৭৮৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়ন করা হয় এবং ১৭৮৯ সালের ৪ মার্চ থেকে এটি কার্যকর করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়। প্রায় চার শতাব্দী আগে প্রণীত মার্কিন সরকার ব্যবস্থা সারাবিশ্বের প্রশংসা লাভ করেছে। মার্কিন জীবনের সঙ্গে এটি ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। মার্কিন সরকার ব্যবস্থা শুরু থেকেই গণতন্ত্রকে শাসন ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করেছে। মার্কিন সরকার ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রীয়, প্রাদেশিক ও স্থানীয় আইন এবং এগুলোকে নির্বাহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত। ফেডারেল যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের কেন্দ্র ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের একটি মূলনীতি হলো প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র। এই ব্যবস্থায় লোকেরা তাদের নিজেদের নেতা নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের শাসন করে। মার্কিন গণতন্ত্র বেশকিছু আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত। জনগণকে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত মেনে নিতে হবে। সংখ্যালঘুদের অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে। নাগরিকদেরকে আইনি শাসন ব্যবস্থায় বাস করার জন্য সম্মত হতে হবে। মতামত ও ধারণার উন্মুক্ত আদান-প্রদানে কোনো বাধার সৃষ্টি করা যাবে না। আইনের চোখে সবাই সমান। সরকার জনগণের সেবায় নিয়োজিত হবে এবং এর ক্ষমতা জনগণের কাছ থেকেই আসবে। এই আদর্শগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থা চারটি উপাদান দিয়ে গঠন করা হয়েছে। ১. জনগণের সার্বভৌমত্ব ২. প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার ৩. ক্ষমতার পরীক্ষা ও ভারসাম্য এবং ৪. ফেডেরালবাদ, যেখানে সরকারের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষমতা অংশীদারি করা হয়।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে দেশ-বিদেশে সাধারণ মানুষের মাঝে যেমন আগ্রহ ও কৌতূহলের শেষ নেই, তেমনি বিষয়টি জটিল ও দুর্বোধ্য। কৌতূহলের কারণ একাধিক। প্রথমত, ১৯৯০-এর পর থেকে আমেরিকা এখন পৃথিবীর একমাত্র পরাশক্তি, যদিও ইদানীং চীন ও রাশিয়া নতুন করে তাদের শক্তিমত্তার জানান দিচ্ছে। সে দেশের অর্থনীতি মানে কল্পনাতীত এক বিশাল কর্মযজ্ঞ! প্রতিবছর সেখানে সৃষ্টি হয় প্রায় ১৭ লাখ কোটি ডলারের সম্পদ, যা কিনা সারা দুনিয়ার প্রায় চার ভাগের এক ভাগ। তৃতীয়ত, দেশ ও সভ্যতা হিসেবে খুব প্রাচীন না হলেও আমেরিকার সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র চর্চার ইতিহাস প্রায় আড়াইশ’ বছরের। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ভারতবাসীরা যখন পরাধীন হয়, তার কাছাকাছি সময়ে আমেরিকা স্বাধীন হয়। এরপর থেকে মার্কিন জনগণ নিরবচ্ছিন্নভাবে তাদের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র চর্চা করে আসছে। তবে তাদের জাতীয় জীবনে এর চেয়েও শক্তিশালী দিক হলো ১৮৬০ সালের গৃহযুদ্ধের পর সে দেশে তেমন বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দেয়নি। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিক থেকে আমেরিকা পৃথিবীর বুকে একটা আদর্শ উদাহরণ বটে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রক্রিয়াটা বেশ জটিল। কতটা জটিল, সেটা বোঝার জন্য একটা পরিসংখ্যান দিয়ে শুরু করি। কাগজে-কলমে ৩১ কোটি মার্কিনি জনতার ১২%-১৪% ভোট পেয়ে একজন অনায়াসে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে পারবে। অর্থাৎ ৮৬%-৮৮%-এর বেশি মানুষের কাছে চরম অজনপ্রিয় হওয়ার পরও সে প্রেসিডেন্ট হতে পারবে। বুঝতেই পারছেন, বেশ জটিল প্রক্রিয়া। এবার আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করব।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চাশটা স্টেট আছে। ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট হলো গোটা আমেরিকার রাজধানী। এটা কোনো স্টেটের আন্ডারে নয়। ফেডারেল সরকার বলতে এই ওয়াশিংটন ডিসিভিক্তিক পলিটিক্যাল সিস্টেমকেই বোঝানো হয়। প্রশ্ন হলো, স্টেট কি? স্টেটের বাংলা হলো রাষ্ট্র। প্রতিটি স্টেটের আলাদা আলাদা পতাকা আছে। রাজধানী আছে। আইনসভা আছে। বিচার বিভাগ আছে। প্রতিটি স্টেটের আলাদা আলাদা আইন প্রণয়নের ক্ষমতা আছে, তবে সেটা কিছুতেই যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান বা ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল সরকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারবে না। যেমন ক্যালিফোর্নিয়া সাইজের দিক দিয়ে আমেরিকার তৃতীয় এবং জনসংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় স্টেট। ক্যালিফোর্নিয়ার রাজধানী স্যাকরামেন্টো। ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে বড় শহর লসএঞ্জেলেস। মায়ামি ফ্লোরিডার নামকরা একটি শহর। প্রতিটি শহরের মেয়র থাকে। আবার প্রতিটি স্টেটের গভর্নর থাকে। অ্যাটর্নি জেনারেল থেকে শুরু করে স্টেট সরকারের নিযুক্ত পররাষ্ট্র সচিবও থাকে। যেমন জন কেরি হলো গোটা আমেরিকার ফেডারেল সরকারের সেক্রেটারি অব স্টেট। একেক স্টেটের নিয়মগুলো এভাবেই বদলে যায়। মার্কিন ফেডারেল সরকার গাঁজা রিলেটেড কোনো আইন পাস করেনি। কিন্তু যদি আগামীকালই করে অর্থাৎ ফেডারেল সরকার যদি সমগ্র আমেরিকার জন্য গাঁজা বৈধ করে দেয়, তাহলে সমগ্র আমেরিকাতে তখন এই আইনটা বলবৎ হবে। অর্থাৎ কোনো স্টেট এটার বিরোধিতা করতে পারবে না। এখন মার্কিন নির্বাচনের ব্যাপারে আসি। বেশকিছু রাজনৈতিক দল আছে, তবে আলোচনার সুবিধার জন্য মূল দুটি রাজনৈতিক দল নিয়েই হিসাব-নিকাশটা তুলে ধরি। বড় দুটি রাজনৈতিক দল হলো রিপাবলিকান আর ডেমোক্র্যাট দল। অর্থাৎ পুঁজিপতিদের জন্য সুবিধাজনক। হালআমলে রিপাবলিকান দলের কথা মনে হলেই চোখে ভেসে উঠে মিট রমনী বা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো কোটিপতি সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ী অর্থাৎ বুশ, ডিক চেনি, লিন্ডসে গ্রাহাম, জন ম্যাকেইন বা টেড ক্রুজের মতো যুদ্ধবাজ লোকগুলোর মুখ। অনেক বেশি ইসরাইল ঘেঁষা রিপাবলিকান পার্টি। অথচ অতীতে এই পার্টির ভালো অর্জন আছে। যা নিয়ে এরা গর্ব করে। আব্রাহাম লিঙ্কন ছিলেন প্রথম রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট। আমেরিকার দাসপ্রথা বিরোধী লড়াইয়ে এই পার্টির মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল। রিপাবলিকান দলের প্রতীক হলো হাতি। ৩০.৭ মিলিয়ন অর্থাৎ তিন কোটি সদস্য আছে রিপাবলিকান দলের। অপরদিকে ডেমোক্র্যাট দলের প্রতীক হলো গাধা। চার কোটি সদস্য আছে ডেমোক্র্যাট দলের। বিল ক্লিনটন, হিলারি ক্লিনটন, বারাক ওবামা... এরা ডেমোক্র্যাট।

লেখক : যুক্তরাজ্য প্রবাসী কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist