মাহমুদ আহমদ

  ২৫ মে, ২০১৭

ইসলামের দৃষ্টিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও জঙ্গিবাদ

ইসলাম শান্তিপূর্ণ ধর্ম। সর্বক্ষেত্রে শান্তির বিধান নিশ্চিত করে প্রেম-প্রীতি, সৌহার্দ্য আর শান্তি ও সম্প্রীতির এক পরিম-ল বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠিত করাই ইসলামের মূল লক্ষ্য। ইসলাম মানুষের জীবনে শান্তির এমন বায়ু প্রবাহিত করে যা মানুষের দেহের সুস্থতায়, দৈহিক শক্তি-সামর্থ্য তার আত্মায়, সব ধর্মের সঙ্গে প্রীতিময় সম্পর্ক গড়ে তোলাসহ সর্ব দিক দিয়ে মানুষকে সতেজ করে। আবহমানকাল থেকে বাংলা ভূখ-ে নানা জাতি-গোষ্ঠী ও ধর্মমতের অনুসারীরা পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে মিলেমিশে একত্রে বসবাসের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক বা আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির ঐতিহ্য সংহত রেখেছে। যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে এটাই ইসলামের শিক্ষা। কেননা একই আদম হাওয়া থেকে আমাদের সবার উদ্ভব। কে কোন ধর্মের অনুসারী তা মূল বিষয় নয়, বিষয় হল আমরা সবাই মানুষ। মানুষ হিসেবে আমরা সবাই এক জাতি। পবিত্র কোরানে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানব জাতি! আমি নর ও নারী থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছি। আর আমি বিভিন্ন গোষ্ঠী ও গোত্রে তোমাদের বিভক্ত করেছি যেন তোমরা একে অপরকে চিনতে পার’ (সুরা আল হুজুরাত, আয়াত: ১৩)। এই আয়াত বিশ্ব-মানবের ভ্রাতৃত্ব ও সাম্যের মহাসনদ। জাতীয় শ্রেষ্ঠত্ব অথবা বংশগত গৌরবের মিথ্যা ধারণা থেকে উদ্ভূত আভিজাত্যের প্রতি এ আয়াত কুঠারাঘাত করেছে। এক জোড়া পুরুষ-মহিলা থেকে সৃষ্ট মানবম-লীর সদস্য হিসেবে সবাই আল্লাহতায়ালার সমক্ষে সমমর্যাদার অধিকারী। চামড়ার রং, ধন-সম্পদের পরিমাণ, সামাজিক মর্যাদা, বংশ ইত্যাদির দ্বারা মানুষের মর্যাদার মূল্যায়ন হতে পারে না। মর্যাদা ও সম্মানের সঠিক মাপকাঠি হলো ব্যক্তির উচ্চমানের নৈতিক গুণাবলি এবং ও সৃষ্টির প্রতি তার কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনে আন্তরিকতা। বিশ্ব মানব একটি পরিবার বিশেষ। জাতি, উপজাতি, বর্ণ, বংশ ইত্যাদির বিভক্তি কেবল পরস্পরকে জানার জন্য, যাতে পরস্পরের চারিত্রিক ও মানসিক গুণাবলি দ্বারা একে অপরের উপকার সাধিত হতে পারে।

মহানবী (সা.) এর মৃত্যুর অল্পদিন আগে বিদায় হজের সময় বিরাট ইসলামী সমাগমকে সম্বোধন করে তিনি (সা.) উদাত্ত কন্ঠে বলেছিলেন, ‘হে মানবম-লী! তোমাদের আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় এবং তোমাদের আদি পিতাও এক। একজন আরব একজন অনারব থেকে কোনো মতেই শ্রেষ্ঠ নয়। তেমনি একজন আরবের ওপরে একজন অনারবেরও কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। একজন সাদা চামড়ার মানুষ একজন কালো চামড়ার মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়, কালোও সাদার চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়। শ্রেষ্ঠত্বের মূল্যায়ন করতে বিচার্য বিষয় হবে, কে আল্লাহ ও বান্দার হক কতদূর আদায় করল। এর দ্বারা আল্লাহর দৃষ্টিতে তোমাদের মধ্যে সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী সেই ব্যক্তি, যিনি সর্বাপেক্ষা বেশি ধর্মপরায়ণ’ (বায়হাকী)। এই মহান শব্দগুলো ইসলামের উচ্চতম আদর্শ ও শ্রেষ্ঠতম নীতিমালার একটি দিক উজ্জ¦লভাবে চিত্রায়িত করেছে। শতধা-বিভক্ত একটি সমাজকে অত্যাধুনিক গণতন্ত্রের সমতাভিত্তিক সমাজে ঐক্যবদ্ধ করার কী অসাধারণ উদাত্ত আহ্বান।

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কতই না সুন্দরভাবে তার এক কবিতায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়টি ফুটিয়ে তুলেছেন, ‘মোরা এক বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু মুসলমান/মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ।/এক সে আকাশ মায়ের কোলে/যেন রবি শশী দোলে,/এক রক্ত বুকের তলে, এক সে নাড়ির টান।/এক সে দেশের খাই গো হাওয়া, এক সে দেশের জল,/এক সে মায়ের বক্ষে ফলাই একই ফুল ও ফল।/এক সে দেশের মাটিতে পাই/কেউ গোরে কেউ শ্মাশানে ঠাঁই/এক ভাষাতে মা’কে ডাকি, এক সুরে গাই গান।

ধর্ম নিয়ে যারা আজ অতি বাড়াবাড়ি করছে তাদের কাছে জানতে চাই, ধর্ম কি নৈরাজ্য সৃষ্টির নাম, ধর্মের নাম কি রক্তপাত? মোটেও তা নয়, ধর্ম শান্তির নাম। পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে শুধু মাজহাবি যুদ্ধে। অথচ আল্লাহপাকের কোনো মাজহাব নেই। সমগ্র সৃষ্টি একই মাজহাবের আর তা হল মানব মাজহাব আর একই উৎস থেকে আমাদের সবার সৃষ্টি এবং একই স্থানে সবার প্রত্যাবর্তন তারপরও আমরা সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতেই যেন ভালোবাসি। অথচ পবিত্র কোরান এবং মহানবী (সা.) সব ধর্মের অনুসারীদেরকে নিজ নিজ রীতি অনুযায়ী ধর্মকর্ম পালন করার অনুমতি দিয়েছেন। হজরত রাসুল করিম (সা.) যে ধর্মনিরপেক্ষতা কায়েম করেছিলেন তা মদীনা সনদই স্পষ্ট প্রমাণ। সবার অধিকার রক্ষার ব্যাপারে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘জেনে রাখ, যে ব্যক্তি কোনো অঙ্গীকারাবদ্ধ অমুসলিম ব্যক্তির ওপর জুলুম করবে, তার অধিকার খর্ব করবে, তার ওপর সাধ্যাতীত কোনো কিছু চাপিয়ে দেবে বা তার মনোতুষ্টি ব্যতীত তার কোনো বস্তু নিয়ে নিবে আমি কেয়ামত দিবসে (আল্লাহর আদালতে) তার বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করব’ (আবু দাউদ)। সব ধর্মের উপাসনালয়কে ইসলাম শ্রদ্ধা ও সম্মানের দৃষ্টিতে দেখারও নির্দেশ দিয়েছে এবং কারো উপাসনালয়েও হামলা চালানোকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। শুধু তা-ই নয় বরং অমুসলিমরা যেসবের উপাসনা করে সেগুলোকেও গালমন্দ করতে আল্লাহ পাক বারণ করেছেন। পবিত্র কোরানে আল্লাহপাক বলেছেন, ‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যাদের উপাস্যরূপে ডাকে তোমরা তাদের গালমন্দ করো না। নতুবা তারা শত্রুতাবশত না জেনে আল্লাহকেই গালমন্দ করবে’ (সুরা আন আম: ১০৮)। এ আয়াতে শুধু প্রতিমা পূজারীদের সংবেদনশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য নির্দেশ দান করা হয়নি বরং সব জাতি এবং সব সম্প্রদায়ের মাঝে বন্ধুত্ব এবং সৌহার্দ্য স্থাপনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।

কোনো ধর্মের উপাসনালয় বা ঘরবাড়ি জালিয়ে দেয়ার শিক্ষা ইসলামে নেই। ইসলাম ধর্মের মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব হলো, ইসলাম প্রত্যেক মানুষকে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করে। এই স্বাধীনতা কেবল ধর্ম-বিশ্বাস লালন-পালন করার স্বাধীনতা নয় বরং ধর্ম না করার বা ধর্ম বর্জন করার স্বাধীনতাও এই ধর্মীয় স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কোরানে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তুমি বল, তোমার প্রতিপালক-প্রভুর পক্ষ থেকে পূর্ণ সত্য সমাগত, অতএব যার ইচ্ছা সে ঈমান আনুক আর যার ইচ্ছা সে অস্বীকার করুক’ (সুরা কাহাফ, আয়াত : ২৮)। সত্য ও সুন্দর নিজ সত্তায় এত আকর্ষণীয় হয়ে থাকে যার কারণে মানুষ নিজে নিজেই এর দিকে আকৃষ্ট হয়। বলপ্রয়োগ বা রাষ্ট্রশক্তি নিয়োগ করে সত্যকে সত্য আর সুন্দরকে সুন্দর ঘোষণা করানো অজ্ঞতার পরিচায়ক। ফার্সিতে বলা হয়, সূর্যোদয়ই সূর্যের অস্তিত্বের প্রমাণ। এই নিয়ে গায়ের জোর খাটানোর বা বিত-ার অবকাশ নেই। সূর্যোদয় সত্ত্বেও কেউ যদি সূর্যের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে, তাহলে তাকে বোকা বলা যেতে পারে কিন্তু তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কিছুই নেই। ঠিক তেমনি কে আল্লাহকে মানল বা মানল না, কে ধর্ম পালন করল বা করল না, এটা নিয়ে এ জগতে বিচার বসানোর কোনো শিক্ষা ইসলাম ধর্মে নেই। বরং এর বিচার পরকালে আল্লাহ নিজে করবেন বলে তার শেষ শরীয়ত গ্রন্থ আল কোরানে বারবার জানিয়েছেন। এ স্বাধীনতা কাজে লাগিয়ে সমাজে আস্তিকও থাকবে, নাস্তিকও থাকবে। মুসলমানও থাকবে, খ্রিস্টানও থাকবে, হিন্দুও থাকবে এবং অন্যান্য মতাবলম্বীরাও থাকবে।

মহানবী (সা.) সমাজের সর্বক্ষেত্রে এবং সব জাতির মাঝে শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। এমনকি খ্রিস্টানদের নাগরিক ও ধর্মীয়-অধিকারকেও তিনি নিশ্চিত করেছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত তা যেন বলবত থাকে সেই ব্যবস্থাও করেছেন। খ্রিস্টানদের নাগরিক ও ধর্মীয়-অধিকার নিশ্চিতকারী মহানবী (সা.) প্রদত্ত ৬২৮ খ্রিস্টাব্দের ঘোষণাপত্রে উল্লেখ রয়েছে, ‘এটি মোহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ (সা.) প্রণীত কাছের এবং দূরের খ্রিস্টীয় মতবাদ পোষণকারী প্রত্যেকের জন্য ঘোষণাপত্র : আমরা এদের সঙ্গে আছি। নিশ্চয়ই আমি নিজে আমার সেবকবৃন্দ মদিনার আনসার এবং আমার অনুসারীরা এদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছি। কেননা খ্রিস্টানরা আমার দেশের নাগরিক। আর আল্লাহর কসম! যা কিছুই এদের অসন্তুষ্টি ও ক্ষতির কারণ হয় তার ঘোরবিরোধী। এদের প্রতি বলপ্রয়োগ করা যাবে না, এদের বিচারকদেরকে তাদের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা যাবে না, আর এদের ধর্মযাজকদেরকেও এদের আশ্রয় থেকে সরানো যাবে না। কেউ এদের উপাসনালয় ধ্বংস বা এর ক্ষতিসাধণ করতে পারবে না। কেউ যদি এর সামান্য অংশও আত্মসাৎ করে সেক্ষেত্রে সে আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গকারী এবং তার রসুলের অবাধ্য সাব্যস্ত হবে। নিশ্চয়ই এরা (অর্থাৎ খ্রিস্টানরা) আমার মিত্র এবং এরা যেসব বিষয়ে শঙ্কিত, সেসব বিষয়ে আমার পক্ষ থেকে এদের জন্য রয়েছে পূর্ণ নিরাপত্তা। কেউ এদেরকে জোর করে বাড়ি ছাড়া করতে পারবে না অথবা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেও এদের বাধ্য করা যাবে না। বরং মুসলমানরা এদের জন্য যুদ্ধ করবে। কোনো খ্রিস্টান মেয়ে যদি কোনো মুসলমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়, সেক্ষেত্রে তার (অর্থাৎ সে মেয়ের) অনুমোদন ছাড়া এটি সম্পাদিত হতে পারবে না। তাকে তার গির্জায় গিয়ে উপাসনা করতে বাধা দেয়া যাবে না। এদের গির্জাগুলোর পবিত্রতা অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। এগুলোর সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে বাধা দেয়া যাবে না। আর এদের ধর্মীয় অনুশাসনগুলোর পবিত্রতা হানি করা যাবে না। এ ঘোষণাপত্র কিয়ামত দিবস পর্যন্ত এই উম্মতের সদস্য লঙ্ঘন করতে পারবে না। [অগ্রপথিক সিরাতুন্নবী (সা.) ১৪১৬ হিজরি, ১০ বর্ষ, ৮ সংখ্যা, ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর প্রকাশনা, ১ম সংস্করণ, আগস্ট, ১৯৯৫]

একটু ভেবে দেখুন, কি চমৎকার শিক্ষা! বিশ্বনবী, মহানবী (সা.) প্রতিষ্ঠিত নীতি হলো, যে যে ধর্মেরই হোক না কেন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তাদের জাগতিক অবস্থান সমান। এটি নিছক একটি ঘোষণাই ছিল না। বরং মহানবী (সা.) মদিনার শাসনকাজ পরিচালনাকালে এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নও করেছিলেন। একবার মহানবী (সা.)-এর শ্রেষ্ঠত্বের বিষয় নিয়ে একজন মুসলমান ও একজন ইহুদির মাঝে বাকবিত-া হয়। একপর্যায়ে বিত-া তিক্ততার স্তরে উপনীত হলে সেই ইহুদি মহানবী (সা.)-এর কাছে বিচারপ্রার্থী হয়। মহানবী (সা.) নিরপেক্ষ শাসক হিসাবে রায় দিয়ে বলেন, তোমরা আমাকে মুসার ওপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করো না (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া লে ইবনে কাসীর, ১ম খ-, পৃষ্ঠা-২৩৭)। এর অর্থ হচ্ছে, আধ্যাত্মিক জগতে কে শ্রেষ্ঠ আর কে শ্রেষ্ঠ নয় এটা মানুষের সিদ্ধান্তের বিষয় নয়। অতএব এ নিয়ে সামাজিক অশান্তি সৃষ্টি করতে যেও না। ধর্ম বিষয়ে নিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা ইসলামের শিক্ষানুযায়ী দ্ব্যর্থহীনভাবে সাব্যস্ত।

রাষ্ট্রের যেমন কোনো ধর্ম নেই তেমনি রাষ্ট্রের নিজস্ব ধর্ম বলতে কিছু নেই। ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্র পরিচালনার একটি নীতি। এর অর্থ ধর্মহীনতা বা ধর্ম বিমুখতা নয়। এর অর্থ হচ্ছে, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রনায়করা নাগরিকদের ধর্ম বা বিশ্বাসের বিষয়ে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকবেন। কে কোন ধর্মে বিশ্বাসী বা কে অবিশ্বাসী অথবা নাস্তিক এ বিষয়ে রাষ্ট্র-যন্ত্র কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব নাগরিকের সমান অধিকার, সবাই রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে সমান-এই হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। আমরা জানি, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধানের মূল স্তম্ভ ছিল চারটি: জাতীয়তা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নামক এক প্রহসন, যা একাত্তরের মূল চেতনার পরিপন্থী। একটা আধুনিক, সভ্য দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম নামক মধ্যযুগীয় ঘোষণা কীভাবে থাকে তা আমাদের বোধগম্য নয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রাষ্ট্রের কী কোনো ধর্ম আছে? একটি রাষ্ট্রে মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, আস্তিক, নাস্তিক সবাই থাকবে। সবার যেমন ভোটাধিকার রয়েছে তেমনি স্বাধীনভাবে ধর্মকর্ম করারও অধিকার রয়েছে। ’৭২-এর সংবিধানে উল্লেখ ছিল ‘মানুষের ওপর মানুষের শোষণ হতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজলাভ নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হইবে।’ (অনুচ্ছেদ ১০) এখানে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক চিন্তার প্রাধান্য পাওয়া যায় এবং ১২ অনুচ্ছেদে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার ১২ (গ)’ বন্ধ করার কথা বলা হয়েছিল। ৪১ অনুচ্ছেদে সব ধর্ম পালন ও প্রচারের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল। অনুচ্ছেদ ২৭ এ ‘সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী’।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে ইসলামী শিক্ষা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য।

লেখক : ইসলামী গবেষক ও কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist