মো. ওসমান গনি

  ১৯ মার্চ, ২০১৮

ইটভাঁটা

নিয়মনীতির বিপরীতে

দেশে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে যত্রতত্র গড়ে উঠছে ইটভাঁটা। আর ইটভাঁটার কাঁচামাল মাটির জোগান দিতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। ফসলি জমি উজাড় করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইটভাঁটা গড়ে ওঠার কারণে ফসলি জমির সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ দূষণও বাড়ছে ব্যাপক মাত্রায়। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে হেক্টরের পর হেক্টর ফসলি জমির ওপরের স্তরের মাটি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কমছে জমির উর্বর শক্তি। পাশাপাশি অধিকাংশ ইটভাঁটায় নিম্নমানের কয়লা পোড়ানোয় বাড়ছে দূষণ। সব মিলিয়ে নষ্ট হচ্ছে ফসলের খেত, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। সেই সঙ্গে পরিবেশদূষণে আশপাশের মানুষ চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। নগরায়ণ, শিল্পায়ন এবং নদীভাঙনের কারণে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় এক লাখ হেক্টর কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। তার ওপর ইটভাঁটাগুলো এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ জমির উপরি ভাগের উর্বর মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে ইট তৈরিতে। এ ছাড়া ভাঁটা থেকে নির্গত ছাই আশপাশের গাছপালা ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ছাই ও বস্তুকণা গাছের পত্ররন্ধ্র বন্ধ করে দিচ্ছে, উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ ও শ্বষণ প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। ড্রাম চিমনির ভাঁটাসহ দেশে বর্তমানে ইটভাঁটার সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার ৭০০টি, যার প্রায় ৫০ ভাগই অবৈধ। এসব ইটভাঁটায় আধুনিক প্রযুক্তির পরিবর্তে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণভাবে অবৈধ ড্রাম চিমনি ও ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনির ভাঁটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়া ইট তৈরির ক্ষেত্রে পরিবেশগত ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্সের বাধ্যবাধকতা থাকলেও অধিকাংশ ইটভাঁটার সেগুলো নেই। ইটভাঁটা সৃষ্ট দূষণে পরিবেশ বিপর্যয়, জনস্বাস্থ্য ও কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতি করছে। ইটভাটায় জ্বালানি কাঠ ব্যবহার আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হলেও ড্রাম চিমনিবিশিষ্ট ভাঁটায় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অন্যান্য ভাঁটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে জ্বালানি কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে গাছপালা। ঘটছে পরিবেশ বিপর্যয় ও কমে যাচ্ছে বনাঞ্চল। দেশে গাছ লাগানো আজ একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হলেও ইটভাঁটায় নির্বিচারে কাঠ পোড়ানোয় কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। ইটভাঁটা থেকে নির্গত ছাই আশপাশের গাছপালা ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ছাই ও বস্তুকণা গাছের পত্ররন্ধ্র বন্ধ করে দিচ্ছে, উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ ও শ্বষণ প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। কার্বন-ডাই অক্সাইড ও সালফারডাই-অক্সাইডমিশ্রিত ছাই ধান, আম, কাঁঠাল, লিচু, শিম, কুমড়া, সরিষাসহ নানাবিধ ফসলের রেণুকে বিনষ্ট করছে। ফলে ফসলের উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে। অনাবাদি কিংবা এক ফসলি জমিতে ইটভাঁটা নির্মাণ করা যায়। কিন্তু অধিকাংশ ইটভাঁটা গড়ে উঠেছে দুই অথবা তিন ফসলি জমিতে। অনেক সময় ভাঁটা মালিকরা জমি কিনে নিয়ে কয়েক বছর অনাবাদি ফেলে রাখেন। পরে অনাবাদি দেখিয়ে ছাড়পত্র নেন। ভাঁটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় কৃষি দফতরেরও কিছু করার থাকে না। দেশের অধিকাংশ ইটভাঁটা গড়ে উঠেছে লোকালয়ে। বাদ পড়েনি বিদ্যালয়ের আঙিনায়ও। ফসলি জমি উজাড় করে নতুন নতুন ইটভাঁটা গড়ে উঠছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ফসলহানি ছাড়াও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে পড়ছে মানুষ। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসন কর্তৃক মাঠপর্যায়ে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ড্রাম চিমনিবিশিষ্ট ইটভাঁটাগুলো চিহ্নিত করা ও সেগুলো অনতিবিলম্বে বন্ধ করা নিষিদ্ধ এলাকার সীমানার মধ্যে বা নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে বা স্থানে ছাড়পত্র গ্রহণকারী ইটভাঁটাগুলোর ছাড়পত্র, লাইসেন্স বাতিল করা এবং সেগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া; ইটভাঁটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহারকারীদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান; বিদ্যমান ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনিবিশিষ্ট যেসব ইটভাঁটা এখনো উন্নত প্রযুক্তিতে রূপান্তর করা হয়নি, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া এবং ভাঁটা নির্মাণে নিয়োজিত কারিগর এবং ফায়ারম্যানদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। কঠোর নজরদারির পর ছাড়পত্র দেওয়া হয় প্রয়োজন। আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও একান্ত দরকার। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানাও প্রয়োজন। তবে জনবল সংকটের কারণে নজরদারিতে ব্যাঘাত ঘটছে। ফসলি জমি রক্ষা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উল্লিখিত বিষয়টির প্রতি সুদৃষ্টি দেওয়া একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছে দেশের বিজ্ঞমহল।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist