আবদুস সালাম
পড়াধরা খেলা
সামিরা ও নাজিয়া দুই বান্ধবী। ওরা একই স্কুলে একই ক্লাসে পড়ে। ভবনের অষ্টম তলায় পাশাপাশি ইউনিটে ওদের বসবাস। অবসর সময়ে অথবা ছুটির দিনে ওরা একে অপরের বাসায় গিয়ে গল্পগুজব ও খেলাধুলা করে সময় কাটায়। ভবনের নিচতলায় খেলাধুলার জন্য কোনো সুব্যবস্থা না থাকায় ওদের মা-বাবার নিষেধ রয়েছে ওরা যেন কখনো নিচে না নামে। তাই সামিরা নাজিয়াদের বাসায় গেলে অথবা নাজিয়া সামিরাদের বাসায় গেলে ওদের মা-বাবা কোনো আপত্তি করেন না বরং তারা খুশিই হন। সামিরার ছোট্ট একটি ভাই আছে। সে সারা দিন সেই ভাইটির সঙ্গে দুষ্টুমি করে। সে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে চায় না। সুযোগ পেলেই পড়াশোনায় ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করে। ওদিকে নাজিয়ার মা-বাবা দুজনায় চাকরি করেন। গ্রামের দূরসম্পর্কের এক ফুফু নাজিয়াদের বাড়িতে থাকেন। মা-বাবার অনুপস্থিতিতে তিনিই মূলত নাজিয়াকে দেখাশোনা করেন। ক্লাসের পড়া সে নিয়মিত তৈরি করে ঠিকই কিন্তু পূর্বের অনুশীলনী বা পাঠগুলো আর ঠিকমতো পুনরালোচনা করে না। বেশির ভাগ সময় সে কম্পিউটারে কার্টুন দেখে অথবা গেম খেলে। আর সামিরা এলে তো কথাই নেই। দুজনা বেশ আমোদ-ফুর্তি করে সময় কাটায়।
সামিরা ও নাজিয়া দুজনায় মূল্যায়ন পরীক্ষায় তেমন ভালো করতে পারেনি। এর ফলে ওদের মা-বাবা ওদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়। ভালোভাবে পড়াশোনার করার জন্য খুব চাপ দিতে থাকেন। তার পরও তারা পড়াশোনায় ফাঁকি দেওয়া বন্ধ করে না। এভাবে দেখতে দেখতে একদিন বার্ষিক পরীক্ষা চলে আসে। বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নগুলো তাদের কাছে খুব কঠিন মনে হয়। পরীক্ষায় সব প্রশ্ন কমন পড়ে না। তারা মাথা ঠা-া রেখে পরীক্ষা দিল ঠিকই কিন্তু ফলাফল প্রকাশ হলে দেখা যায়, তারা কেউই পরীক্ষায় ভালো করতে পারেনি। কোনো রকমে উত্তীর্ণ হয়েছে। অন্য বন্ধু-বান্ধবরা ওদের চেয়ে অনেক ভালো করেছে। এর ফলে সামিরা ও নাজিয়ার মনটা যেমন খারাপ হয় তেমনি ওদের মা-বাবাদের মনটাও খারাপ হয়। ওপর ক্লাসে ওঠার পর তারা দেখে, যেই বন্ধু-বান্ধবরা ভালো ফলাফল করেছে স্যাররা তাদের বেশি বেশি আদর-স্নেহ করেন, বেশি বেশি গুরুত্ব দেন। আবার বাসাতে এলে মা-বাবাও ওদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে না। সব সময় বকাবকি করেন আর পড়াশোনার জন্য চাপ দিতে থাকেন। ঠিকমতো কম্পিউটার ও টেলিভিশন দেখতে দেন না। তাই ওদের মনটা খুব খারাপ থাকে। অবসার সময়ে জানালা ধরে বাইরের খোলা আকাশ আর পিচঢালা পথে যানবাহন চলাচলের দৃশ্য দেখে ওদের সময় কাটে। দুই বান্ধবীর সঙ্গেও ঠিকমতো দেখা-সাক্ষাৎ হয় না বললেই চলে।
একদিন সামিরা ও নাজিয়া দুজনায় সিদ্ধান্ত নিল, তারা এখন থেকে ভালোভাবে পড়াশোনা করবে। ওরা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, যেভাবেই হোক আমাদের পরীক্ষায় ভালো করতেই হবে। প্রয়োজনে আমরা একে অপরকে সাহায্য করব। স্কুল থেকে ওরা বাসায় এসে প্রথমেই ক্লাসের পড়াগুলো ভালোভাবে তৈরি করে। তারপর অবসর সময়ে ওরা একে অপরের বাসাতে বইয়ের পড়া নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে। বিভিন্ন বই সামনে নিয়ে একজন অন্যজনকে পড়া ধরে। এতে কেউ বেশি পারে আবার কেউ কম পারে। ওরা নিজেরা নিজের মধ্যে ভালো করার জন্য প্রতিযোগিতা করে থাকে। একদিন হয়তো ‘বাংলা ব্যাকরণ’ সামনে নিয়ে সিলেবাস অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াধরা খেলায় মেতে ওঠে। যেমন : একজন অন্যজনকে ১০টি করে এক কথায় প্রকাশ বা সন্ধি-বিচ্ছেদ বা বিপরীত/সমার্থক শব্দ ধরে। তারপর হিসাব করে দেখে কার কয়টা ভুল হলো। সে মোতাবেক একজন প্রথম হয় আর অপরজন দ্বিতীয় হয়। অনরূপভাবে অন্যদিন হয়তো ইংলিশ গ্রামারে পার্টস অব স্পিচ, জেন্ডার, টেন্স, আর্টিকেল নিয়ে পড়াধরা খেলা করে। তারা টেলিভিশন ও কম্পিউটার দেখা কমিয়ে দেয়। মা-বাবার সঙ্গে বসে মাঝেমধ্যে খবর এবং শিক্ষণীয় অনুষ্ঠানগুলো দেখে থাকে।
এভাবে পড়া ধরাধরির মাধ্যমে সামিরা ও নাজিয়া আনন্দ খুঁজে পায়। মাঝেমধ্যে ওদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। একসময় বইয়ের সব পড়া তাদের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানা হয়ে যায়। তাই কেউ কাউকে সহজে হারাতে পারে না। দুই বান্ধবীর পড়াধরা খেলা দেখে মা-বাবারাও খুশি হয়। ক্লাসে স্যাররা বই থেকে কিছু জিজ্ঞাসা করলে তারা খুব সহজেই উত্তর দিতে পারে। প্রথম মূল্যায়ন পরীক্ষায় ওরা বেশ ভালো করে। ভালো ফলাফল দেখে ওরা নিজেরা যেমন খুশি তেমনি ওদের স্যাররা এবং মা-বাবারাও খুশি। মা-বাবার উৎসাহে পড়াধরা খেলা করে ওরা সামনের দিকে এগিয়ে যায়। পরীক্ষায় আরো ভালো করার জন্য ওরা চেষ্টা করে। দেখতে দেখতে আবার বার্ষিক পরীক্ষা চলে আসে। দুজনায় বার্ষিক পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ে ভালোভাবে পরীক্ষা দেয়। ফল প্রকাশ হলে দেখা যায়, সত্যি সত্যিই মাত্র ১ নম্বরের ব্যবধানে সামিরা ও নাজিয়া প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে পরবর্তী ক্লাসের জন্য উত্তীর্ণ হয়েছে।