আরিফ সোহেল

  ২০ জুন, ২০১৯

স্বপ্নের দৌড় নিয়ে ছুটছে বাংলাদেশ

ব্যাটিং স্বর্গ নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজে আজ ম্যাচ। খেলা শুরু বিকাল সাড়ে ৩টায়। যেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের আগেই জয় তুলে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। স্বপ্নের দৌড়ে ছুটে চলা উজ্জীবিত বাংলাদেশ লন্ডন, কার্ডিফ, ব্রিস্টল আর স্মৃতিবিজড়িত টন্টন ঘুরে আজকের ম্যাচের শহর নটিংহামে। ৮ পয়েন্ট নিয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে; বিশ্ব ক্রিকেট নাড়িয়ে দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাট-বল-ফ্লিডিং সর্বক্ষেত্রে কঠিন প্রতিরোধ করার জন্য শতভাগ প্রস্তুত। তাই প্রতিপক্ষ আসরের অন্যতম ফেভারিট বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া হলেও কোনো ছাড় নেই।

বাংলাদেশ ছুটছে নিজ মেধা-মনন; ক্রিকেটারদের প্রতিশ্রুতি-তারুণ্য-তেজদ্বীপ সাহস নিয়ে। সামনে যাই পড়ছে ভেঙেচুরে ছত্রখান করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আশাজাগিয়ে ক্রিকেটের মূলস্রোতে বাংলাদেশ। বেশ কয়েক বছর ধরেই হারুক বা জিতুক, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা মাঠে অন্য এক খিদে অনুভব করেন। অসম্ভবকে সম্ভব করার এক প্রবল তাগিদ পরিস্ফুট হয় তাদের নৈপুণ্যে। বাংলাদেশে এখন ক্রিকেটে পরিপূর্ণভাবে বদলে যাওয়া একটি দল। দেশের ক্রিকেট অবকাঠামো-পরিকাঠামো এখন আগের থেকে অনেক ভালো। ক্রিকেটাররা আত্মনিবেদিত। বড় মঞ্চে বাকিদের দেখিয়ে দেওয়ার তাগিদ অনুভব করে জানপ্রাণ দিয়ে লড়াই করে। ২২ গজের যুদ্ধে আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ।

চলতি বিশ্বকাপে সেরা ফর্মে আছেন সাকিব আল হাসান। এখন পর্যন্ত তাকে দমাতে পারেনি কোনো দলই। আজ প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, ব্যাটার সাকিবের পাশাপাশি বোলার সাকিবকে থামানোর উপায় খুঁজে খুঁজে তারা দিশাহারা।

বিশ্বকাপে ২ হাফ সেঞ্চুরির সঙ্গে ২টি সেঞ্চুরিতে সাকিব পৌঁছে গেছেন নতুন উচ্চতায়। তার সর্বশেষ সেঞ্চুরিতে উইন্ডিজকে হারিয়ে দেওয়ায় এখনও সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩০০ প্লাস করার পেছনে সাকিবই নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখন বিশ্বকাপে নতুন এক মাইলফলক গড়ার সুযোগ পাচ্ছেন সাকিব আল হাসান। যা হতে পারে অমর কীর্তি। অলরাউন্ডার হিসেবে রেকর্ড গড়া। বিশ্বকাপে ১ হাজার রানের সঙ্গে ৫০ উইকেটের মাইলফলক কারোর নেই। মাইলফলকের খুব সামনেই দাঁড়িয়ে সাকিব। সাকিব ২৫ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ২৮ উইকেট। রান করেছেন মোট ৯২৪। এর আগে বিশ্বকাপের ৩৩ ম্যাচ খেলে ৯৭৮ রানের সঙ্গে ২৭ উইকেট পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ। তার পেছনে সনাথ জয়াসুরিয়া; ৩৮ ম্যাচে ১১৬৫ রানের পাশে ২৭ উইকেট। বিশ্বকাপের ইতিহাসে ন্যূনতম ১০০০ রানের সঙ্গে ৩০ উইকেট নিতে পারেনি কোনো ক্রিকেটারই। সাকিবই হতে পারেন এই আসরের নতুন উচ্চতার স্বপ্নক্রিকেটার।

টন্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য রান তাড়া করার মুহূর্তকে মনে করেই সাকিব-লিটনের বিপক্ষে কঠিন ছক আঁকার চেষ্টা করেছে অস্ট্রেলিয়া। পরিসংখ্যানে চোখ বুলালে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার কাছে বেশ সহজ প্রতিপক্ষ; একেবারে নস্যি। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ একটিও জয় পায়নি। কিন্তু ওয়ানডেতেই ২০০৫ সালে হারের সুখস্মৃতি রয়েছে। তবে সেই বাংলাদেশ এখন বদলে যাওয়া টিম। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুঁড়িয়ে-মুড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতায় বলিয়ান একটি দল। অর্থাৎ কাগজ-কলমের সমীকরণে সহজ হলেও বাস্তবে লড়াইটা একপেশে হবে এমনটা বলার অবকাশ নেই। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক অ্যারোন ফিঞ্চ বলেছেন, ‘অবশ্যই বাংলাদেশ এই মুহূর্তে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলছে। সাকিব এবং অন্য সব টপ অর্ডারদের ওপর আমাদের নজর রাখতে হচ্ছে। সেসঙ্গে তাদের বোলিং আক্রমণ নিয়েও ভাবতে হবে।’

অস্ট্রেলিয়ার ভাবনায় ৪ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরিতে ৩৮৪ রান করা বিশ্বকাপ টপার সাকিব রয়েছে আলাদা করেই। কারণ এই মুহূর্তে সাকিবই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তাকে বিপদে ফেলার মতো বল করার পথ খুঁজছে তারা। ফিঞ্চ বলেছেন, ‘আমার মনে হয় সাদা বলে সে (সাকিব) ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে আছে। আমাদের খুঁজে বের করতে হবে কোন লাইন-লেন্থে ওকে বল করতে হবে। আমার মনে হয় কন্ডিশনটাও খতিয়ে দেখা দরকার। সাধারণত আমরা প্রতিপক্ষের সবাইকে নিয়েই আগাম একটি ছক এঁকে নিই। আমাদের লক্ষ্য থাকবে যত দ্রুত সাকিবকে ফেরানোর। লিটন দাস অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলেছে। আলাদা করে ভাবছি তাকে নিয়েও।’

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে সাইড স্ট্রেইনের চোটে পড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার তরুণ অলরাউন্ডার মার্কাস স্টয়নিস। বাংলাদেশের বিপক্ষে আজ তার ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বরং শন মার্শকে এ ম্যাচেও দেখা যাবে। কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার বলেছেন, ‘নিজেকে ফিট করতে সে সম্ভাব্য সবকিছুই করছে। সে যে অবস্থানে আছে তাতে আমি বিস্মিত হইনি। সব কৃতিত্বই তার। তবে মেডিকেল স্টাফদেরও কৃতিত্ব আছে। আশা করি সে টুর্নামেন্টে সত্যিকারের প্রভাব রাখবে।’

বাংলাদেশের বাকি আর ৪টি ম্যাচ। আজ শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হলেও ২৪ জুন পরের ম্যাচে প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। বাংলাদেশের আরো খেলা বাকি ভারত-পাকিস্তানের বিপক্ষে। বাংলাদেশ যদি আজসহ এই ৪ ম্যাচের সব জিতে তাহলে আর কোনো সমীকরণেরই দরকার হবে না সেমিফাইলের জন্য। এমনকি ৩ ম্যাচ জিতলেও সেমিফাইনালের পথ খুলে যেতে পারে। তবে টাইগাররা যদি বাকি ৪ ম্যাচের ২টিতে হেরে যায় তাহলে সব সম্ভাবনা শেষ। আর সব সমীকরণকে ভ্রান্ত প্রমাণ করতে পারে অনাহূত বৃষ্টি। পয়েন্ট ভাগাভাগি হলেই সব হিসাব ওলটপালট হয়ে যাবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাংলাদেশ,স্বপ্ন,বিশ্বকাপ,সমীকরণ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close