প্রিন্স রাসেল

  ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আজ অলিখিত সেমিফাইনাল

বাংলাদেশের সামনে নড়বড়ে পাকিস্তান

কাঠফাটা গরমে নাভিশ্বাস উঠছে, দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। বাতাসেও ছড়াচ্ছে উষ্ণতা। এমনই তীব্র দাবদাহে আইসিসির ক্রিকেট একাডেমি মাঠে বাংলাদেশ দল অনুশীলন করছে। সময় যতই গড়িয়েছে ততই বেড়ে চলেছে সূর্যের তেজ। এরচেয়েও বেশি তেজদীপ্ত টাইগাররা। স্বপ্নের ফাইনালের টিকিট কাটতে আত্মবিশ্বাস এমন বৃহস্পতির তুঙ্গে থাকাই তো স্বাভাবিক। প্রান্তসীমায় আসা এশিয়া কাপের ভুতুড়ে সূচি মহাসংকটে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ দলকে। আগুনে গরমের মধ্যে চার দিনে খেলতে হয়েছে তিনটি ম্যাচ। শুধু সূচি নয়, ভেন্যুও বড্ড বিপাকে ফেলে দিয়েছে টাইগারদের। মরুর দেশে পা রাখার পর থেকেই দুবাই থেকে আবুধাবিতে আসা-যাওয়ার মধ্যে আছেন মাশরাফি অ্যান্ড কোং। আরো একবার প্রায় দেড় ঘণ্টার সড়কযাত্রা যেতে হচ্ছে আবুধাবিতে। আসলে এটাই স্বপ্নযাত্রা। শেখ আবু জায়েদ স্টেডয়ামের এই মঞ্চেই আজ স্বপ্ন বাঁচানোর লড়াইয়ে নামছে বাংলাদেশ। ‘অলিখিত সেমিফাইনালে’ রূপ নেওয়া মহাগুরুত্বপূর্ণ এ ম্যাচে টাইগারদের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান।

সুপার ফোরে দুই দলের দুটো ম্যাচ যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। বাংলাদেশের সূচনা হয়েছিল ভারতের কাছে বড় হার দিয়ে। দুবাইতে মাশরাফিরা যেদিন রোহিত-ধোনিদের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেছেন সেদিন প্রায় ১০০ মাইল দূরে কাঠখড় পুড়িয়ে আফগানিস্তান সাঁকো পার হয়েছিল পাকিস্তান। দ্বিতীয় ম্যাচে তো ভারতের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি সরফরাজ আহমেদের দল। দুই ওপেনার শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মা পাক বোলারদের বেধরক পিটিয়ে ছুঁয়েছেন তিন অঙ্ক। সেদিন পাকিস্তান এতটাই নির্বিষ ছিলেন যে, চিরশত্রুদের একটা উইকেটও নিতে পারেননি কোনো বোলার। ভারত জিতেছে ৯ উইকেটে। একমাত্র পতন হওয়া উইকেটটা ছিল রান আউট!

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে এক টুর্নামেন্টে পর পর দুটি বড় হার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে পাকিস্তানকে। এতটাই যে বাংলাদেশ ম্যাচ নয়, কাল সাংবাদিক বৈঠকের বড় একটা অংশ জুড়ে ছিল ভারত ম্যাচ নিয়ে কাটাছেড়া। সংবাদ সম্মেলনে পাক শিবিরের প্রতিনিধি হয়ে আসা শোয়েব মালিক তাতে বার বার বিব্রত হলেন। বাংলাদেশ ম্যাচের আগে যে পাকিস্তানের মনের অবস্থা ভালো না সেটা বোঝা গেছে প্রশ্নের প্রতি উত্তরে।

এদিক থেকে বেশ চাঙা বাংলাদেশ দল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন রানের থ্রিলার জয়ে বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমের আবহটাই পাল্টে যায়। ফুরফুরে মেজাজে পুরো দল। কাল অনুশীলনে মুশফিক-লিটনদের চোখেমুখেই ফুটে উঠেছে দারুণ কিছু করার প্রতিজ্ঞা। হোটেলের লবির সামনে দিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য বেরিয়ে পড়া মাশরাফি-রিয়াদদেরও দেখা গেল বেশ ফুরফুরে মেজাজে। কাল ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কোচ স্টিভ রোডস যথার্থই বলেছেন, ‘আমি ছেলেদের বলেছি এই গরমে অনুশীলনের চেয়ে বিশ্রাম নেওয়াটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখন সবাই ঠিক আছে। এই দুই দিনে খেলোয়াড়রা চাঙা হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ওরা মানসিক এবং শারীরিকভাবে প্রস্তুত হয়েছে। আমরা মাঠে নামতে মুখিয়ে আছি। (পাকিস্তান ম্যাচ) এটা আমাদের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ।’

কাল ঐচ্ছিক অনুশীলনে যাননি মাশরাফি, মাহমুদউল্লাহ এবং সাকিব আল হাসান। মুস্তাফিজুর রহমান, ইমরুল কায়েসও নিজের মতো করে কাটিয়েছেন সময়। এসবকিছুর নেপথ্য কারণ, পাকিস্তানের বিপক্ষে শারীরিকভাবে যতটা ফিট থাকতে হবে ততটা মানসিকভাবেও। হার না মানা এই মানসিকতার ওপর ভর করেই তো ফাইনালের আশাটা বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তান ম্যাচেই তো শিরোপা স্বপ্নটা প্রায় ধূসর হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। মাহমুদউল্লাহ এবং ইমরুলের ব্যাটিং তন্ময় এবং মুস্তাফিজের শেষ ওভারের জাদুকরি বোলিং সরিয়ে দিয়েছে শঙ্কার মেঘ। ফিকে হয়ে যাওয়া স্বপ্নটাকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলেছে এই ত্রয়ীর পারফরম্যান্স।

ওই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং অর্ডার যথেষ্ঠ ওলট-পালট করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। পাকিস্তান ম্যাচের পুনরাবৃত্তি হবে কিনা সেটা অবশ্য প্রকাশ্যে আনতে চাইলেন না সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা রোডস। দলের প্রয়োজনে আজ টিম ম্যানেজমেন্ট যদি কোনো প্রকার বাজি ধরে সেটাও বিস্ময়কর কিছু হবে না।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাংলাদেশ ও পাকিস্তান,সুপার ফোর,এশিয়া কাপ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close