শেষ অঙ্কে সুইডেনের অগ্নিপরীক্ষা
এবারের আসরের মৃত্যুকূপ বলা হয়েছে ‘এফ’ গ্রুপকে। এই গ্রুপটার রোমাঞ্চ অন্য সবকটা গ্রুপের চেয়ে আলাদা। এতটাই যে, প্রথম দুই ম্যাচ জিতেও নকআউট পর্বের টিকিট নিশ্চিত করতে পারেনি মেক্সিকো। আবার প্রথম দুই ম্যাচ হেরে যাওয়া দক্ষিণ কোরিয়ারও আশা আছে এখন পর্যন্ত!
বাকি সাত গ্রুপ থেকে অন্তত একটি দল বিদায় নিয়েছে। ‘এফ’ গ্রুপটা এই জায়গাতেই ব্যতিক্রম। এখানকার চারটি গ্রুপের জন্যই আছে চারটি সমীকরণ। সব শেষ ষোলোতে যাওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে মেক্সিকো। সবচেয়ে পিছিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া।
এই দুই দলের মাঝে থাকা জার্মানি ও সুইডেনের সম্ভাবনা প্রায় একই রকম। পয়েন্ট, গোল ব্যবধান প্রায় সব কিছুতেই সমান্তরালে ছুটছে ইউরোপের জায়ান্ট দল দুইটি। আশা বাঁচিয়ে রাখতে জয়ের বিকল্প নেই তাদের সামনে। তবে পূর্ণ ৩ পয়েন্ট পেলেই চলবে না দুইটি দলকে অন্তত ২ গোলের ব্যবধানে জিততে হবে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে জার্মানির জয় নিয়ে সংশয়টা একটু কমই তবে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হচ্ছে সুইডেনকে। স্বপ্ন বাঁচাতে আজ সুইডিশদের হারাতে হবে গ্রুপের শীর্ষ দল মেক্সিকোকে।
দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের শুভসূচনা করেছিল সুইডেন। দ্বিতীয় ম্যাচে জার্মানির বিপক্ষে তো থ্রিলার উপহার দিয়েছিল সুইডিশরা। রক্ষণাত্মক কৌশলে খেলা সুইডেন প্রতি আক্রমণে দুর্দান্ত খেলেও শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে টনি ক্রুসের অবিশ্বাস্য গোলে হেরে যান গ্রাঙ্কভিস্ক-বার্গরা। না হলে অন্তত এক পয়েন্ট পেতে পারত সুইডেন। শুধু ভাগ্য নয়, এদিন রেফারিরও সুদৃষ্টি পায়নি তারা। বাজে রেফারিংয়ের শিকার হয়েছে সুইডিশরা। ম্যাচ শেষে এ নিয়ে তোপ দাগিয়েন দলটির কোচ অ্যান্ডারসন। তবে মেক্সিকো ম্যাচেই ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
রাশিয়া বিশ্বকাপের শুরুটাই হয়েছিল বড় একট অঘটন দিয়ে। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে প্রথম ম্যাচেই নিজেদের শিকারে পরিণত করে মেক্সিকো। পরের ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে দারুণ জয়। এই দুইটি জয়ই দ্বিতীয় রাউন্ডের পথে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রেখেছে তাদের। তবু সতর্ক এল ট্রিরা। কারণ আজ হেরে গেলে পুরো সমীকরণটাই বদলে যেতে পারে। তবে এ দিন ড্র করলেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পরের রাউন্ডে যেতে পারবে মেক্সিকানরা।
আবার মেক্সিকো হারলেও উঠতে পারবে পরের রাউন্ডে। সেক্ষেত্রে জার্মানিকে আবার পয়েন্ট খোয়াতে হবে। এখন কথা হচ্ছে জার্মানি-সুইডেন দুই দলই ড্র করলে কিংবা হারলে কী হবে? সেক্ষেত্রে এক জয় হবে তিনটি দলের। গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকা দলটি সঙ্গী হবে মেক্সিকোর। গোল ব্যবধানও যদি সমান হয় সেক্ষেত্র লালকার্ড কিংবা হলুদ কার্ড ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সব মিলিয়ে ‘এফ’ গ্রুপে এমনই সমীকরণ দাঁড়িয়ে যে, এটা হার মানাচ্ছে পাটি গণিতের অঙ্ককেও! তবে এসব জটিলতার মধ্যে যেতে চায় না সুইডেন। বড় জয় পেলে তাদের শেষ ষোলোতে যাওয়া নিশ্চিত হয়ে যাবে।
এমন মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে সাহস হারাচ্ছে না সুইডেন। দলটির মিডফিল্ডার জিমি দারমাজ শুনিয়েছেন আশার বানী। বলেছেন, ‘আমরা সংঘবদ্ধ আছি। আমরা সুইডেন।’ শুধু সাহসী বক্তব্যই নয়, সুইডেনকে আশা দেখাচ্ছে বিশ্বকাপে মুখোমুখি হওয়ার একমাত্র ফলটা ১৯৫৮ বিশ্বকাপে এই মেক্সিকোকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল তারা। তবে সুইডেনকে নিরাশ করছে মেক্সিকানদের সঙ্গে তাদের শেষ পাঁচটি ম্যাচ। যেখানে চারটিতেই অজেয় আছে মেক্সিকো। তাই স্বাভাবিকভাবেই এ ম্যাচে পিছিয়ে আছে সুইডেন। কিন্তু এই দলটা হার মানার পাত্র নয়। ইব্রাহিমোভিচবিহীন সুইডেন স্বপ্ন দেখছে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার। বাঁচা-মরার এই লড়াইয়ে আজ তাই মেক্সিকোর বিপক্ষে মরণ কামড়ই দেবে ১৯৫৮ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্টরা।
তবে সুইডিশদের তেমন সুযোগ দিতে চাইবে না মেক্সিকো। শেষ অবধি গ্রুপ পর্বের শেষের সমীকরণটা কাদের পক্ষে যায় সেটা বলে দেবে আজ রাতের দুইটির ম্যাচের ফল।
পিডিএসও/হেলাল