নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯

পরমাণু স্বপ্নযাত্রায় বাস্তবের হাতছানি

স্বপ্নের শুরুটা হয়েছিল ১৯৬১ সালে। পাবনার ঈশ্বরদীতে সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয় দেশ স্বাধীন হওয়ারও ১০ বছর আগে। সেই সঙ্গে প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণও করা হয় ২৬০ একর জমি। কিন্তু চিরশত্রু পাকিস্তানের জন্য আমাদের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ১৯৬৪ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য যেসব যন্ত্রপাতি জাহাজে করে পাঠানো হয়েছিল, সেই জাহাজ পাকিস্তান তাদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে তা চট্টগ্রাম বন্দরে না এনে করাচিতে নিয়ে যায়। আর সে সঙ্গেই বাঙালির স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়ে। কিন্তু বাঙালি জাতি কখনই মাথা নোয়াবার নয়। তাই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ২০১০ সালের ২১ মে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নের জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

বাংলাদেশ আর রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারবিষয়ক একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি মস্কোতে স্বাক্ষরিত হয়। ধীরে ধীরে বাঙালি জাতি স্বপ্ন বাস্তবায়নের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। এখন দিনে-দিনে বাস্তব হয়ে ধরা দিচ্ছে পরমাণু স্বপ্নযাত্রা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে প্রথম ইউনিটের চুল্লি বসানোর ভৌত কাঠামো এখন দৃশ্যমান। আগামী বর্ষা মৌসুমেই রাশিয়া থেকে আসবে চুল্লির যন্ত্রপাতি।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলছেন, যন্ত্রপাতি ঠিকমতো তৈরি হচ্ছে কিনা তা দেখতে তিন ধাপে পরীক্ষা করছেন তারা। মূল কাজ উদ্বোধনের দুই বছরে পুরো বদলে গেছে রূপপুরের পরিবেশ। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে রিয়াক্টর ভবনের কাঠামো। দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভৌত কাঠামো এখন দৃশ্যমান।

এদিকে নির্মিতব্য দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় গড়ে তোলা হচ্ছে। তেজস্ক্রিয় বর্জ্য এখানে বাইরে আসার ঝুঁকি যেমন থাকবে না, তেমনি সব ঠিক রেখে নির্ধারিত সময়ে, এটির সফল বাস্তবায়নও বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্বের ৩০টি দেশে যখন ৪৫০ এর বেশি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রয়েছে, তখন বাংলাদেশও নিউক্লিয়ার ক্লাবে। রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাশিয়ায় শুরু হয়েছে ভারী যন্ত্রাংশ প্রস্তুত কার্যক্রম। অ্যাটমএনারগোম্যাস নামে রাশান কোম্পানির ওয়্যারহাউসে চলছে রিয়াক্টর নির্মাণের সেই প্রক্রিয়া।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী আরো বলেন, এটা হলো থার্ড প্রজেক্ট ইন দ্য ওয়ার্ল্ড। ফুকুশিমার প্রেক্ষাপটে কিন্তু এটা এসেছে। এই প্রজেক্টটা এমনই যে, প্রত্যেকটা সেক্টরে ‘মোর সেফ, মোর সেফ, মোর সেফ’ এটা তাদের ফিলোসফি।

আধুনিক প্রযুক্তির তৃতীয় প্রজন্মের রিয়াক্টর আর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নিরাপত্তা বলয়ে গড়ে তোলা রূপপুর নিয়ে অনেকেরই শঙ্কা, পরমাণু চুল্লি শীতলীকরণে যে পরিমাণ পানির প্রয়োজন হবে, তা কী দীর্ঘমেয়াদে জোগাতে পারবে স্রোতস্বিনী পদ্মা?

প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বলেন, প্রসেস ওয়াটারে যে পরিমাণ পানি লাগবে, আমাদের পদ্মা নদীর শুকনা মৌসুমের যে সিনারিও তার সহস্র ভাগের এক ভাগ লাগবে কিনা সন্দেহ।

চুক্তি অনুযায়ী ব্যবহার শেষে নিউক্লিয়ার বর্জ্য বা স্পেন্ট ফুয়েল ফিরিয়ে নেবে নির্মাণ সহযোগী রাশিয়া। রিয়াক্টরের মূল আইল্যান্ড বা এক্সক্লসিভ জোনের ৩০০ মিটারের বাইরে নিরাপদ থাকবে মানুষ। পাবলিক প্লেসে স্থাপন করা হবে রেডিয়েশন মাত্রা নির্দেশক মনিটরও। নির্মাণ, ব্যবস্থাপনা আর কারিগরি দিক সামলে নিরাপদ এই প্রযুক্তি সক্ষমতা বাড়াবে দেশের, দাবি নীতিনির্ধারকদের।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বলেন, আগামী বছরেই দৃশ্যপটে আসবে আরো বড় পরিবর্তন। এই ভৌত কাঠামোর মাটির নিচে এরই মধ্যে বসানো হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা কোর ক্যাচার। প্রথম চুল্লির মূল অংশ রিয়াক্টর ভেসেলের নির্মাণ চলছে রাশিয়ায়।

কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে এটমস্ট্রয়এক্সপোর্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট সের্গেই লাস্টোখিন বলেন, বেশ জোরেশোরেই এগিয়ে যাচ্ছে প্রকেল্পের কাজ।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, ভৌত কাঠামো থেকে যন্ত্রপাতি সবকিছুই নির্মাণ করছে রাশিয়া। আর এগুলো তদারকি করছে বাংলাদেশ। রুশ ঠিকাদার প্রকল্পের মেয়াদকাল কয়েক মাস বাড়াতে চাইলেও তাতে বাংলাদেশ রাজি নয় বলে জানান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।

২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে পাবনার রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে রাশিয়ার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করে সরকার। চুক্তি বাস্তবায়নের সময়কাল সাত বছর ধরা হয়েছে। প্রথম ইউনিটের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালে। আর দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৪ সালের অক্টোবরে উৎপাদনে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ৬০ বছর ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র,প্রকল্প,পরমাণু
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close