গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯

কে হচ্ছেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) নতুন চেয়ারম্যান কে হচ্ছেন এ নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে আলোচনা। তবে এই নিয়ন্ত্রণ সংস্থার চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করে থাকে সরকার। কারণ রাষ্ট্রের গোপনীয়তা ও সুরক্ষার জন্য সংস্থাটি স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ। ফলে প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন কেউ এ পদে বরাবরই আসীন হয়ে এসেছেন। এবারো নিয়মের ব্যত্যয় ঘটছে না বলে মন্ত্রণালয় ও সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

সূত্রগুলো বলছে, ইঞ্জিনিয়ার ড. শাহজাহান মাহমুদ চেয়ারম্যান পদ থেকে অবসর নেন ২০১৮ সালের ১২ মে। তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয় বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান ও কমিশনার জহুরুল হককে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত পদটি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিয়ে চলে আসছে। জানা গেছে, শূন্য চেয়ারম্যানের পদটি পূরণে সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে অনেকেই ওই পদে যোগদান করতে জোর তদবির শুরু করেছেন। লবিং করছেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরে। তবে চেয়ারম্যান পদের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সাবেক সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার, সেনা কর্মকর্তার পাশাপাশি আমেরিকান প্রবাসী অনেকের নামই উঠে আসছে আলোচনায়। তবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহিরুল হক দায়িত্বে আস্থা অর্জন করায় এই আলোচনায় তিনিও পিছিয়ে নেই। চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি নিয়োগ পেলে সামরিক কর্মকর্তা, সচিব ও ইঞ্জিনিয়ারের বাইরে বিচার বিভাগের একজন কর্মকর্তা শীর্ষ এ পদে আসীন হবেন। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ সংস্থার চেয়ারম্যান কে হবেন তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, পৌনে এক বছরের কাছাকাছি সময় ধরে বিটিআরসির চেয়ারম্যানের পদটি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ করে কাজ চালিয়ে নেওয়া হয়েছে। একাধারে তিনি কমিশনার ও ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচনসহ নানা কারণে এত দিন পদটি পূরণ করা সম্ভব হয়নি। কারণ এই পদটি স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রীর সক্রিয় বিবেচনায় পদটি পূরণ হয়ে থাকে। মন্ত্রী বলেন, কে চেয়ারম্যান হচ্ছেন এখনো জানি না; কারণ এটি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। দীর্ঘদিন পর পদ পূরণের উদ্যোগ শুরু হয়েছে অচিরেই জানতে পারবেন কে হচ্ছেন বিটিআরসির নতুন চেয়ারম্যান, যোগ করেন টানা দুই মেয়াদে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রিত্ব পাওয়া এই মন্ত্রী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিটিআরসি চেয়ারম্যানের পদটি সচিব পদ-মর্যাদার। এ কারণে সুশীল কান্তি বোস এ পদ থেকে অবসরে যাওয়ার পর বর্তমান দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদকে চেয়ারম্যান নিয়োগ করে ২০১৫ সালে আগস্টে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু সচিব পদমর্যাদার হওয়ায় তিনি এ পদে আনাগ্রহী হন।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে সরকার ‘সিনিয়র সচিব’ নামে নতুন পদ সৃষ্টি করলে আরো সাতজনের সঙ্গে ইকবাল মাহমুদও ওই পদ পান। সে সময় তিনি ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব।

পরে তার নিয়োগের আদেশ বাতিল করে আমেরিকা প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার ড. শাহজাহান মাহমুদকে ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যান করা হয়। এ পদে যোগদানের আগে ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন সেখানে শাহ মাহমুদ নামে পরিচিত এই চেয়ারম্যান। গত বছরের ১২ মে তার মেয়াদপূর্ণ হয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর তার নেতৃত্বেই গতি পায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মাণ প্রকল্প।

কিন্তু নতুন কাউকে চেয়ারম্যান না করে সরকার বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান ও কমিশনার জহুরুল হককে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করে। নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ না পাওয়া পর্যন্ত জহুরুল হক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

সময় ও পটপরিবর্তনে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ; যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। গত ৩ জানুয়ারি শপথ নেয় একাদশ জাতীয় সংসদের এমপিরা এবং ৭ জানুয়ারি শপথ নেন সরকারের মন্ত্রিসভা। এরপরই বিভিন্ন দফতর ও সংস্থার শূন্যপদ পূরণের উদ্যোগ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বিটিআরসির পূর্ণাঙ্গ চেয়ারম্যান নিয়োগের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, আলোচনায় অনেকের নাম থাকলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহরুল হককে ভারমুক্ত করে এ পদে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর গ্রিন সিগন্যাল নিয়ে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। ওই পত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০১ (সংশোধিত-২০১০) এর ধারা-৭ অনুযায়ী কমিশন পাঁচজন কমিশনারের সমন্বয়ে গঠিত হবে এবং তাদের মধ্য থেকে সরকার একজন চেয়ারম্যান ও অপর একজনকে ভাইস চেয়ারম্যান নিয়োগ করবে। পাঁচ কমিশনের মধ্যে অন্তত দুজন প্রকৌশলী, একজন আইনজীবী বা বিচারক এবং অন্তন্ত একজন হবেন ব্যবসাশিল্প, অর্থ, ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসন বিষয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তি।

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, বর্তমানে বিটিআরসিতে তিনজন কমিশনার নিযুক্ত আছেন। এর মধ্যে একজন সাবেক মহানগর দায়রা জজ মো. জহরুল হক। তিনি ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বিটিআরসির কমিশনার পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

তবে সংস্থাটির ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য থাকায় এ বিভাগের ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারিখ থেকে অফিস আদেশমূলে শূন্য দুটি পদের দায়িত্ব পালন করছেন। যুগপৎভাবে তিনটি পদের দায়িত্ব পালন করায় এবং কাজের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় জহরুল হককে বিটিআরসির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করা যেতে পারে।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বিটিআরসির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ প্রদানে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন। এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি সাপেক্ষে ভারমুক্ত হচ্ছেন জহিরুল হক বলে সরকারের নীতিনির্ধারণী সূত্র নিশ্চিত করেছে।

উল্লেখ্য, ইঞ্জিনিয়ার ড. শাহজাহান মাহমুদের আগে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ছিলেন জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা সুনীল বোস। তার আগে সেনা কর্মকর্তা জিয়া আহমেদ, সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে এই দায়িত্বে ছিলেন আরেক সেনা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম। তারও আগে বিটিআরসি প্রধানের দায়িত্ব পালনকারী মার্গুব মোর্শেদ ও ওমর ফারুক দুজনই ছিলেন সচিব। এবার সংস্থাটির পূর্ণাঙ্গ চেয়ারম্যান হচ্ছেন সাবেক বিচারক জহুরুল হক।

পিডিএসও/হেলাল​

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চেয়ারম্যান,বিটিআরসি,বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close