অনলাইনের চাপে কোণঠাসা ব্রিটিশ সংবাদপত্র
অনলাইন নিউজ পোর্টালের চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে ব্রিটেনের সংবাদপত্রগুলো। মূলধারার পত্রিকা থেকে শুরু করে রংচং মাখানো সংবাদ পরিবেশক ট্যাবলয়েডগুলোও। ওয়াশিংটন পোস্ট, শিকাগো ট্রিবিউন এমনকি দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টসহ অনেক ‘অভিজাত’ ও ‘প্রভাবশালী’ দৈনিক ছাপা সংস্করণ বন্ধ করে কেবল অনলাইনে আসার বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করে ব্রিটিশ পত্রিকাগুলো অস্তিত্ব রক্ষায় ‘সুদূরপ্রসারী কৌশল’ নিয়েছে।
আর এ কৌশল নিয়ে ব্রিটেনের খ্যাতিমান সাংবাদিক ও ডিজিটাল কৌশলবিদ অ্যান্ডি ড্যাঙ্গারফিল্ড লিখেছেন একটি নিবন্ধ। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।
বর্তমান বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষই ‘জেনারেশন জেড’র। এই জেনারেশন বা প্রজন্ম বলতে বোঝানো হয় ১৯৯০ দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ২০০০ দশকের শুরুর দিকে জন্ম নেওয়া মানুষদের। ইন্টারনেট আর অনলাইন সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক বিস্তার লাভের সময়ের এই প্রজন্মকে নিয়ে একটি কথা প্রচলিত আছে, তারা সংবাদপত্র পড়ে না। এমনকি পাঠককে আকৃষ্ট করতে সংবাদপত্রগুলোর আকার ছোট, প্রতিবেদন পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত করা হলেও আকৃষ্ট হচ্ছে না প্রজন্ম।
এই ‘কথা’ যখন গণমাধ্যম অঙ্গনে ঘুরছে, তখন খবর মিলছে, যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্রগুলো তাদের ‘ভবিষ্যৎ’ রক্ষায় ‘জেনারেশন জেড’ বা তাদের বছর কয়েক আগের প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে অভিনব সব পরিকল্পনা নিয়ে ‘বিনিয়োগ’ করছে। সংবাদমাধ্যমে এ কথা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে, ভবিষ্যতের নেতৃত্ব থাকবে অনলাইনের হাতে। অনলাইনে যে সংবাদমাধ্যম যত বেশি আধুনিক, সাবলীল, নজরকাড়া ও বিশ্বাসযোগ্য হবে, সেই সংবাদমাধ্যমই থাকবে নেতৃত্বের সারিতে। দৈনিকগুলোকে যদি পুরোপুরি অনলাইনে অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নামতে হয়, তাহলে পাঠক সংখ্যা বিচারে যেন তলানিতে পড়ে থাকতে না হয়, সেজন্য এই ‘বিনিয়োগ’ করছে তারা।
এদিকে দ্য টাইমস, দ্য টেলিগ্রাফ ও ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের মতো খ্যাতিমান দৈনিকগুলোর ছাপা সংস্করণ দুর্দশাগ্রস্ত হলেও তাদের অনলাইনের নিবন্ধিত পাঠক বা রেজিস্টার্ড পাঠক বাড়ছে। দ্য গার্ডিয়ানের মতো দৈনিকেরও নিবন্ধিত পাঠক বিগত ১২ মাসে বেড়ে ৫ লাখে পৌঁছে গেছে।
জাপানি মালিকানার ইংরেজি দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস (এফটি) কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, আগে কেবল ব্রিটেনের ১৬-১৯ বছর বয়সী পাঠকরা বিনামূল্যে বা ফ্রি তাদের ওয়েবসাইট সাবস্ক্রিপশন করতে পারলেও এখন এ সুবিধা গোটা বিশ্বের টিনেজদের জন্যই করে দেওয়া হয়েছে। এটা ভবিষ্যতের জন্য এফটির বিনিয়োগ।
ডেইলি মিরর, সানডে মিরর, সানডে পিপল, সানডে মেইলসহ প্রায় আড়াইশ সংবাদমাধ্যমের প্রকাশক কোম্পানি ট্রিনিটি মিররের মার্কেটিং ডিরেক্টর জোয়ে হ্যারিস এ বিষয়ে বলছেন, লোকজন আমাদের জিজ্ঞেস করে যে, ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী পাঠকদের বিবেচনায় নিলে আমরা কোন জায়গায় আছি। আমরা বলি বয়স্কদের চেয়ে তারুণ্যই আমাদের নিউজ ব্র্যান্ডকে এগিয়ে নিচ্ছে।
আরেক দৈনিক দ্য সান যুব পাঠকদের মনোযোগ টানতে চাইছে শোবিজ জগতের সংবাদ এবং মোবাইল ভিডিও আপ করার মাধ্যমে। তাদের ওয়েবসাইটের ৫১ শতাংশ পাঠক এখন নারী এবং ৪২ শতাংশেরই বয়স ১৫ থেকে ৩৪ বছর। দ্য টাইমসও ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী পাঠকদের আকৃষ্ট করতে এমন নানা উদ্যোগ নিয়েছে, যেটা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। সববয়সী পাঠক থাকলেও ১৮-২৪ বছর বয়সী পাঠকদের টানার এই প্রতিযোগিতায় উদ্যোগী দেখা যাচ্ছে দ্য টেলিগ্রাফকেও।
পিডিএসও/তাজ