জুয়েল রানা লিটন, নোয়াখালী

  ০৯ আগস্ট, ২০১৭

নোয়াখালী-৪ আসন

মর্যাদা ধরে রাখা ও পুনরুদ্ধারের লড়াই

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগাম প্রচারে বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে সদর ও সুবর্ণচর উপজেলা নিয়ে গঠিত নোয়াখালী-৪ আসন। এই আসনে প্রধান দুই দলে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী থাকলেও মূল আলোচনায় থাকা দুই নেতাকে ঘিরেই নেতাকর্মীদের সব জল্পনা-কল্পনা। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী একরামুল করিম চৌধুরী এবং বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী মো. শাজাহানের মধ্যেই হতে পারে মূল নির্বাচনী লড়াই।

একরামুল করিম চৌধুরী ২০০৮ সালের নির্বাচনে মো. শাজাহানকে পরাজিত করেছিলেন। আর এই আসনে তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন মো. শাজাহান। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঘরানার নেতাকর্মীদের কাছে দুই নেতারই মজবুত অবস্থান রয়েছে। এই আসনটি আওয়ামী লীগের জন্য মর্যাদা অব্যাহত রাখার এবং বিএনপির জন্য হারানো মর্যাদা ফিরিয়ে আনার লড়াই। গত ঈদুল ফিতরের আগে এই আসনের প্রতিটি এলাকায় নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রমে ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছিল। ওই সময় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। তাদের অনেকেই ইফতার মাহফিলের আয়োজন এবং তৃণমূল কর্মীদের ঈদের বোনাস দিয়ে নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে প্রায় একই কায়দায় অনেকটা নীরবে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছিলেন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। ঈদের পরও দুই দলের বেশিরভাগ সম্ভাব্য প্রার্থী গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, হাট-বাজার এবং বড় বড় গাছের ডালে পোস্টার, ফেস্টুন ও ডিজিটাল ব্যানার টানিয়ে ভোটারদের কাছে নিজেদের উপস্থাপনের চেষ্টা করছেন। ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় করে দোয়া ও সমর্থন চাইছেন। নির্বাচনী এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেউ কেউ এখন এলাকায় নিজেদের উপস্থিতি বাড়িয়েছেন।

এই আসনের বর্তমান এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী। তিনি দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে মূল আলোচনায় রয়েছেন। তবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল মালেক উকিলের ছেলে গোলাম মহিউদ্দিন লাতু, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. একেএম জাফর উল্যাহ, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা এবং মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী এবিএম শাহজাহান শাহীনও দলের মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন।

এই আসনের সাবেক এমপি মো. শাজাহান বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকার শীর্ষে রয়েছেন। জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন আজাদ এবং বর্তমানে জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব বোরহান উদ্দিন আহমেদ মিঠুও দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন।

নোয়াখালী-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থান বেশ মজবুত। দুই দফায় এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি আরো মজবুত করেছেন একরামুল করিম চৌধুরী। নেতাকর্মীরা তাকে ঘিরেই দলের সব কর্মসূচি পালন করছেন। একরামুল করিম চৌধুরী প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস মিয়া নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনিও জেলার পাশাপাশি তার নির্বাচনী এলাকার সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। মাঠ পর্যায়ে দলকে আরো সুসংগঠিত করেছেন। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর সদর ও সুবর্ণচর উপজেলার উন্নয়নে হাজার কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। আগামী দিনেও তিনি দলের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়নে আরো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে চাইছেন।

তবে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী গোলাম মহিউদ্দিন লাতু জানান, তার বাবা আবদুল মালেক উকিল দুর্দিনে আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিষয়টি বিবেচনায় এনে নিশ্চয়ই তাকে মনোনয়ন দেবেন বলে তিনি প্রত্যাশা করছেন। তিনি দলের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ডা. এবিএম জাফর উল্যাহর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছিলেন ডা. একেএম জাফর উল্যাহ। এবার তিনি এমপি পদে দলের মনোনয়ন চাইছেন। তিনি যোগ্যতার বিচারে দলের কাছে বিশেষ বিবেচনা প্রত্যাশা করছেন।

কাজী এবিএম শাজাহান শাহীন জানান, তার মা প্রয়াত কোহিনুর আক্তার খানম জেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সভাপতি ছিলেন। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে নোয়াখালীতে দলকে সুসংগঠিত রাখতে তিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন। শাহীন নোয়াখালী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস এবং জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। এ কারণে তিনি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।

এই আসনে বিএনপির যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মো. শাজাহানের নামই বেশি আলোচিত হচ্ছে। দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের দৃষ্টিতে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে মোকাবেলা করতে হলে মো. শাজাহানের বিকল্প নেই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে মো. শাজাহান জানান, তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। এর আগে তিনি তিন দফায় বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। আর আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে তিনি আবারো বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন।

বোরহান উদ্দিন মিঠু জানান, তিনি দলকে সংগঠিত করেছেন। তাই তিনিই দলীয় মনোনয়নের প্রধান দাবিদার। নোয়াখালী জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়কের মনোনীত এবং তৃণমূল নেতাকর্মীদের সমর্থনে দল থেকে নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য দুইজনের নাম সমর্থন করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। সেই তালিকায় এক নাম্বারে তার নাম রয়েছে। অন্যজন হলেন অ্যাডভোকেট আবদুর রাজ্জাক।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সংসদ নির্বাচন,নোয়াখালী-৪ আসন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist