লন্ডনের সেমিনারে যোগ দেয়নি আ’লীগ
যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসে আয়োজিত সেমিনারে যোগ দেয়নি বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আর এই সংলাপে অংশ না নেওয়ার কারণ হিসেবে লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রেস মিনিস্টার যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সত্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন আয়োজক লর্ড কারলাইল। সেমিনারটি আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা অবগত ছিলেন না বলে প্রেস মিনিস্টার নাদিম কাদিরের অসত্য বক্তব্যে তিনি হতাশ। মঙ্গলবারের ওই সেমিনারে আমন্ত্রিত সবাইকে আগেই এই বিষয়ে জানানো হয়েছিল বলেও দাবি করেন কারলাইল। ওই সেমিনারে আমন্ত্রণ জানানো সবাইকে গত ১২ জুলাই পাঠানো চিঠিও তিনি বিবৃতির সঙ্গে তুলে ধরেছেন। সেখানে বলা হয়, এই সেমিনার সরকারি বা পাবলিক ইভেন্ট নয়। এটা ব্যক্তিগত আয়োজন এবং রুদ্ধদ্বার বৈঠক, যেখানে আমন্ত্রিতদের বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ওপর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য তুলে ধরার সুযোগ দিতে চাই।
লর্ড কারলাইল ওই চিঠিতে বলেন, সেমিনার হবে যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টে, যেখানে আমরা স্বাধীন মতপ্রকাশের নীতির চর্চা করি; কাউকে আমরা পছন্দ করি বা না করি, তাদের সঙ্গে মতভিন্নতা থাকলেও এই নীতির সঙ্গে আপস করা হয় না। তিনি সেমিনারে অংশগ্রহণে আগ্রহীদের কেউ অন্য কাউকে বাদ দিতে চাইলে বা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার কারণে কেউ নিজেকে প্রত্যাহার করলে আমি সেটাকে সৌজন্যের ঘাটতি হিসেবে দেখব। এ রকম কিছু ঘটবে না বলে আমি নিশ্চিত।
ওই আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার পর বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা সেমিনারে অংশগ্রহণের বিষয়ে আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন বলে দাবি করেন কারলাইল। মঙ্গলবার বিকালে হাউস অব লর্ডসে অনুষ্ঠিত ওই সেমিনারে অংশ নিতে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি লন্ডনে গেলেও শেষ পর্যন্ত তারা সেখানে যাননি।
বিবৃতিতে লর্ড কারলাইল বলেছেন, গত বছর তিনি ও এমপি অ্যান মেইন একই ধরনের একটি সেমিনার আয়োজন করেন, যেখানে কোনো ধরনের দ্বিধা ছাড়াই আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছিলেন। বাংলাদেশে চরমপন্থার উত্থান, দায়মুক্তির সংস্কৃতি এবং গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিয়ে উদ্বেগ এবং এই প্রেক্ষাপটে সেক্যুলার রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী, নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর প্রভাব ফেলা গুরুতর সমস্যাগুলোর বস্তুগত বিশ্লেষণের সুযোগ দিতে এবারের এই সেমিনারের আয়োজন করেছিলেন বলে জানান কারলাইল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, শেষ মুহূর্তে কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই তারা (আওয়ামী লীগ) সরে দাঁড়ালেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর এবং মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিনিধিরা সেমিনারে অংশ নেন। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদের শেষ মুহূর্তে সেমিনার বর্জনকে রহস্যজনক হিসেবে বর্ণনা করে বুধবার লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে খসরু বলেন, এতে সেখানে উপস্থিত সবাই খুব বিব্রত হয়েছেন। এটা বাংলাদেশের জন্যও বিব্রতকর।
সেমিনারে অংশ না নেওয়ার কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে যুক্তি দেওয়া হয়েছে তার কোনো ভিত্তি নেই মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এগুলোর উদ্যোগ নেয় না। পার্লামেন্ট সদস্যরা নেন। উনারা (আওয়ামী লীগ) বহু বছর ধরে এটাতে আসছেন। গতকাল কেন উনাদের হঠাৎ করে বোধোদয় হয় যে, এটা উনাদের মিসলিড করা হয়েছে। এটা কোনো সদুত্তর উনারা দিয়েছেন বলে আমার মনে হয় না। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ বিদেশেও গণতন্ত্রে বিশ্বাসহীনতার প্রমাণ দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।পিডিএসও/মুস্তাফিজ