বদরুল আলম মজুমদার
আ. লীগ-বিএনপিতে নির্বাচনী উত্তাপ
বৃহত্তর উত্তরা তথা ঢাকা-১৮ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে নির্বাচনকেন্দ্রিক উত্তাপ বাড়ছে। কোন দলে কে মনোনয়ন পেতে পারেন, এ নিয়ে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে আগেভাগেই। নির্বাচনী রাজনীতির প্রভাব পড়ছে মাঠপর্যায়ের কমিটি পুনর্গঠনেও। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা চাইছেন কমিটিতে ‘নিজেদের লোক’ বসাতে। সবারই লক্ষ্য দলীয় টিকিট বাগিয়ে আনা। তবে অন্য দলগুলোতে এ নিয়ে তেমন একটা তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি।
সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা-১৮ আসনে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এবার মনোনয়ন নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীরা জোট বাঁধার চেষ্টা করছেন। ছোট ছোট এই জোটের নেতারা চান নৌকার টিকিট। নেতারা বলেছেন, বিগত দিনে এ আসনে স্থানীয় লোকজনকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। বারবার বাইরের প্রার্থীকেই তারা বিজয়ী করেছেন। এবার তারা চান এলাকার কোনো নেতাকে নৌকা প্রতীকে দেখতে। তাই ইতোমধ্যে দলীয় মনোনয়ন নিতে দৌড়ঝাঁপ করছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ হাবিব হাসান, ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক তোফাজ্জল চেয়ারম্যান, উত্তরখান ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন, খিলখেত থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি কেরামত আলী দেওয়ান।
তবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, মনোনয়ন প্রশ্নে চূড়ান্ত মতামত দেবেন দলীয় প্রধান। তার নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ কাক্কা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ৯১ সাল থেকে আমরা বাইরের প্রার্থীকে নিয়ে কাজ করছি। বারবার ভোটও দিয়েছি, এমপি বানিয়েছি। এবার মনোনয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের বিবেচনার দাবি জোরালো। মাঠপর্যায়ে কার অবস্থা ভালো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাবিব হাসান দীর্ঘদিন থেকেই এলাকায় নির্বাচন করার জন্য চেষ্টা করছেন। মাঠপর্যায়ের অধিকাংশ নেতা তাকেই এবার নৌকা প্রতীকে চায়। তবে আমরা দলীয়প্রধানের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিতে চাই।
যদিও এলাকার বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন দুই দফা এমপি নির্বাচিত হয়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। সেই হিসেবে আবারও তিনিই পেতে পারেন নৌকার প্রতীক। তাছাড়া সরকারের গত মেয়াদে তিনি দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই কোনোভাবেই তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে যায়নি। এ বিষয়ে মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন সরকার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, সাহারা আপা একজন ভালো মানুষ, নেত্রীর কাছের লোক। তাই মনোনয়ন প্রশ্নে তিনিই এগিয়ে থাকবেন। তবে স্থানীয় অনেকেই মনোনয়ন চাইবেন। দল যাকে মনোনয়ন দেয় তাকে নিয়েই আমরা কাজ করব।
তবে দলের একটি সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে ঢাকার বেশ কয়েকটি আসনে ‘দল করেন না’ এমন অনেক ভিআইপি লোকজনকে প্রার্থী করা হতে পারে। সেই বিবেচনায় সাবেক
একজন ব্যবসায়ী নেতাকে এবার ঢাকা-১৮ হতে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া দেশের বড় একটি শিল্প গ্রুপ থেকেও মনোনয়ন চাওয়া হতে পারে।
এমনটা হলে কি করবেন, স্থানীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্যতম নেতা হাবিব হাসান বলেন, আমি দীর্ঘদিন থেকে এ আসন থেকে মনোনয়নের চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রতিবারই বলা হচ্ছে ভবিষ্যতে দেখা হবে। এবার আমরা সেই সুযোগটা চাইব। তাছাড়া মাঠ পর্যায়ের আশি শতাংশ নেতাকর্মী নৌকা প্রতীকে আমাকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়। বর্তমান এমপি সম্পর্কে তিনি বলেন, সাহারা আপা আমাদের সকলের মুরুব্বি। দল চাইলে অবশ্যই আমরা নৌকার প্রার্থীর পক্ষে থাকব।
এদিকে, বিএনপিতেও ভেতর ভেতর চলছে মনোনয়ন প্রতিযোগিতা। গত নির্বাচনে দলটি অংশ না নিলেও এবার প্রার্থী হতে চলছে তুমুল প্রতিযোগিতা। আগে আাজিজুল বারী হেলাল নির্বাচন করলেও এবার দৃশ্যপটে নেই তিনি। সেই সুযোগে ১৫ বছর পর আবার মনোনয়ন নিতে তৎপর ধনাঢ্য ব্যবসায়ী সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম। সেই লক্ষ্যে মহানগর উত্তর কমিটিতে তার অনুসারী নেতাদের পাইয়ে দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ পদও। তাছাড়া মাঠ পর্যায়ে তার আস্থাভাজন অনেকই স্বপ্ন দেখছেন তাকে ঘিরেই। অন্যদিকে. মেজর কামরুলকে ঠেকাতে গত ১০ বছর থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন যুব নেতা এস এম জাহাঙ্গীর। তিনিও মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন। বিশেষ করে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি হওয়ার পরই উত্তরের রাজনীতিতে কদর বেড়ে যায় তার। দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয় তার মতামতকে। কিন্তু বিএনপির মহানগর কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তার মতামতকে গুরুত্ব দেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। কিন্তু বর্তমান কমিটির সভাপতি এম এ কাইয়ুম তাকে আমলে নিয়ে কমিটি দেবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
তবে দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ আসনে এবার অনেক নেতাই মনোনয়ন ফরম কিনবেন। এদের মধ্যে মহানগর উত্তরের ১ নং সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তার হোসেন অন্যতম। কামরুল ইসলামের অবর্তমানে তার অনুসারী এ নেতা এবার শক্তভাবেই মাঠে থাকতে চান। এর বাইরে বিমানবন্দর বিএনপির সভাপতি ও উত্তরের সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সেগুনও কিনতে চান মনোনয়ন। সাবেক এ ছাত্র নেতা বলেন, অনেকেই মনোনয়ন চায়। আমি এলাকার একজন সিনিয়র নেতা হিসেবে মনোনয়ন চাইতেই পারি। এর বাইরে মনোনয়ন কেনার জন্য একাট্টা হয়ে আছেন দক্ষিণ খান থানা বিএনপির সভাপতি ইসমাইল হোসেন। ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক এম কফিল উদ্দিন ও আতিকুর রহমান।
ঢাকা-১৮ আসন এলাকায় ৯১ সালে নির্বাচন করেছিলেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। শোনা যায়, এবার এলাকায় মনোনয়ন নিয়ে সুষ্ঠু সুরাহা করতে না পারলে এবারও খোদ খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকে।
"