গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৯ মে, ২০১৭

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কূটনীতিকদের আগ্রহ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদেশি কূটনীতিকদের তৎপরতা শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) খান মো. নুরুল হুদার সঙ্গে তার কার্যালয়ে একান্তে সাক্ষাৎ করেছেন। এর আগে গত ১২ মার্চ নতুন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন নরডিক রাষ্ট্রদূতদের একটি প্রতিনিধিদল। তাদের আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে আগামী নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার প্রসঙ্গ। এর আগে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকারের কয়েকটি নির্বাচন নিয়েও নিজেদের মূল্যায়ন তুলে ধরেন কূটনীতিকরা।

জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) খান মো. নুরুল হুদা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ভারতের হাইকমিশনের সঙ্গে মূলত আমার সাক্ষাৎটি ছিল সৌজন্যমূলক। তবে নির্বাচন নিয়ে কিছু আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের বিষয়ে তারা জানতে চেয়েছেন কবে নাগাদ আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, নির্বাচনের কত দিন আগে তফসিল ঘোষণা করা হয় এবং সামগ্রিক ওই নির্বাচনের প্রস্তুতি কতটুকু সম্পূর্ণ হয়েছে—এসব আলোচনায় উঠে এসেছে। আমরা বলেছি, নির্বাচন নিয়ে আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত আছি, নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারব। এ ছাড়া আমরা আরো বলেছি, নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। সৌজন্য সাক্ষাতে প্রস্তাবিত রোডম্যাপের বিষয় ভারতীয় হাইকমিশনারকে অবগত করা হয়। তবে নির্বাচন নিয়ে প্রতিনিধি দল তাকে কোনো পরামর্শ কিংবা দিকনিদের্শনা দেননি বলে জানান সাবেক আমলা এই প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানসহ ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলোতে ক্ষমতা বদলের নির্বাচনে দক্ষিণ এশিয়ার প্রভাবশালী দেশ ভারতের একটি অঘোষিত হস্তক্ষেপ সর্বজনস্বীকৃত। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোভুক্ত অধিকাংশ দেশগুলো সব দলকে নিয়ে নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ দিলেও ভারতের বিপরীত মেরুতে থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগের মধ্যে রয়েছে-দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাবেক ভারতের হাইকমিশনার পংকজ শরণ কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় ঢের বাকি থাকলেও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশটির আগাম তৎপরতা প্রভাব বিস্তারের অংশ বলে মনে করছেন কেউ কেউ। দেশটির অনুকম্পা দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি—যে দল পাবে তাদের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতার মসনদে দেখার সম্ভাবনা বেশি।

গতকাল বৃহস্পতিবার বর্তমান ভারতের হাইকমিশনারসহ তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন ফার্স্ট সেক্রেটারি রাজেশ উইকে ও প্রেস অ্যাটাশে রঞ্জন মন্ডল। বৈঠকটি সৌজন্য সাক্ষাৎ বলা হলেও আলোচনার বাইরে ছিল না আগামী নির্বাচন। কারণ নির্বাচনী রোডম্যাপ আগামী ২৩ মে বৈঠকে চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে প্রভাবশালী দেশের হাইকমিশনের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ নির্বাচন তৎপরতারই অংশ বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতীয় হাইকমিশনের এই সাক্ষাৎটি সৌজন্য হলে সিইসিসহ অন্য কমিশনাররা উপস্থিত থাকতেন। যেহেতু একান্তে সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ; আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই এই বৈঠক তা হলফ করে বলা যায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও সৌজন্য সাক্ষাৎ বললেও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা স্বীকার করেছেন তিনি। বলেন, মূলত নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল নিয়েই বেশি কথা হয়েছে তাদের মধ্যে। তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন দেখতে আগ্রহী বলে জানান সিইসি। আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতকৃত রোডম্যাপ, নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা হয় বলেও তিনি জানান।

এর আগে ঢাকায় সুইডেনের রাষ্ট্রদূত ইয়োহান ফ্রিসেল ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিসেল ব্লিকেন আলোচনায় অংশ নেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নুরুল হুদার নেতৃত্বে ইসি কী করছে, তারা তা জানার চেষ্টা করেন।

গত ফেব্রুয়ারিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পর রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকরা তৎপর হন। ইতোমধ্যেই বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদু। ঢাকা সফরের সময় যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ দফতরের মন্ত্রী অলোক শর্মাও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। বিএনপি ছাড়া কয়েকটি ইসলামী দলের সঙ্গে কূটনীতিকরা বৈঠক করেছেন। এ ছাড়া এ মুহূর্তে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক আলোচনার শীর্ষে রয়েছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর এই নির্বাচন নিয়ে অভ্যন্তরীণ কূটনৈতিক তৎপরতা বেড়েছে, তেমনি বহির্বিশ্বেও বেড়েছে নানামুখী তৎপরতা। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আবারও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যুক্ত হওয়ার তৎপরতা লক্ষণীয়। নরডিক রাষ্ট্রদূতদের পর ভারতের হাইকমিশনারের ইসির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।

এসব তৎপরতা শুরুর আগেই গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দফতরের বাংলাদেশ-ইইউ রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক সেখানে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়।

কূটনীতিক সূত্রগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে ধারণা পাওয়া গেছে, বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন বিদেশি কূটনীতিকরা। প্রধান বিরোধী দল ছাড়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে অন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সমালোচনামুখর ছিল। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। তাই আগামী নির্বাচন কূটনীতিকরা অংশগ্রহণমূলক করার ব্যাপারে জোর দিলেও বিষয়টি এখনই তারা প্রকাশ্যে বলতে চান না।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সংসদ নির্বাচন,বিদেশি কূটনীতিক,সিই
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist