বদরুল আলম মজুমদার

  ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭

বিএনপির তৃণমূলে শুধুই অসন্তোষ

রাজপথে নামতে পারছে না বিএনপি। দলের একাধিক নেতাই দাবি করছেনÑতৃণমূল পুনর্গঠিত হলে কেটে যাবে সংকট। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকারের উসকানি থাকলেও এখনই মাঠে নামবে না দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। গত বছরটিকে সাংগঠনিক বছর বলা হলেও সিকি ভাগ জেলা বা থানা কমিটি এখনো শেষ করতে পারেনি দলটি। এখন পর্যন্ত ২৫টি জেলা কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও ঘোষিত অনেক জেলায় কমিটি নিয়ে রয়েছে অসন্তোষ। সেই অসন্তোষ থেকে প্রায় ৮-১০টি জেলায় কমিটি গঠনের বিরোধ নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে ঝোলানো হয়েছে তালা। এ অবস্থায় বাকি সাংগঠনিক জেলাগুলোর কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বেশ বেকায়দায় আছে তৃণমূল পুনর্গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, বিএনপির মতো বড় একটি দলে কমিটি নিয়ে টুকটাক অসন্তোষ থাকবে। সেটা বড় কথা নয়। যেটা বলতে চাই তা হলো, দেশের অধিকাংশ জেলায় আমরা সম্মেলন করতে পারছি না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদের সম্মেলনের অনুমতি দেয় না। এ কারণে অনেক জায়গায় বারবার তারিখ দিয়েও সম্মেলন করা যায়নি। আমরা চাই সবার মতামতের ভিত্তিতে কমিটি করতে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরো কিছু জেলার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছ। রাজশাহীর কমিটির বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, সেটা নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে কিছু প্রতিক্রিয়ার কথা আমি জানতে পেরেছি। সেই বিভাগে আমাদের বেশ কিছু কেন্দ্রীয় নেতা আছেন, যারা বিরোধ মেটানোর জন্য কাজ করছেন। আশা করি সেই বিরোধও থাকবে না।

অভিযোগ আছেÑবিএনপির তৃণমূল পুনর্গঠন বারবার প্রভাবশালী চক্রের হাতে বন্দি হচ্ছে। ন্যূনতম মতামত না নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দিয়ে দিচ্ছেন কমিটি। প্রভাবশালী নেতাদের খায়েশমতো একের পর কমিটি করে চলেছেন এসব নেতা। প্রভাবশালী একটি অংশের ইশারায় দায়িত্ব পান মাগুরা জেলার আহ্বায়ক আলী সৈয়দ করিম। দায়িত্ব পেয়েই তিনি বাসায় বসে করে দিচ্ছেন থানা কমিটি। যাতে আহ্বায়ক কমিটির অন্য নেতাদের মতামতও নেওয়া হচ্ছে না। নাম প্রকাশে ইচ্ছুক নন এমন একজন নেতা বলেন, আমি আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য হয়েও জানতে পারছি না, কোন থানায় কি কমিটি দেওয়া হচ্ছে। আমি তো বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, আমাদেরও তো কিছু লোক থাকতে পারে যারা কমিটিতে আসার যোগ্য। কিন্তু কি হচ্ছে? আহ্বায়ক ঘরে বসে একের পর এক কমিটি দিয়ে যাচ্ছেন। দায়সারা গোছের এসব কর্মকান্ডের প্রতিবাদ স্বরূপ থানার নেতারা কাউন্সিলের মাধ্যমে পাল্টা কমিটি করছেন। যার ফলে দুটি কমিটি মুখোমুখি হয়ে যাচ্ছে। আমরা তো এমনটা চাই না। দলটা অনেক বছর ক্ষমতায় নেই। সামনে ক্ষমতায় আসতে হলে আন্দোলনের বিকল্প আছে বলে মনে হয় না। এভাবে একের পর এক পকেট কমিটির অনুমোদন দিয়ে দলের ক্ষতি করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে আমি দলের মহাসচিবসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বলেছি। তারা জানিয়েছেন এমনটা হওয়ার কথা নয়।

এ বিষয়ে মাগুরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ আলী করিম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, যে বা যারা আমার সম্পর্কে বলছেন, এগুলো ঠিক নয়। আর আমি আপনাকে বলতে চাই, যারা আমার বিরুদ্ধে বলে তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আমি রাজনীতি করি ছোটবেলা থেকে। ক্লাস এইট থেকে রাজনীতি শুরু করেছি। কেন্দ্রে যারা রাজনীতি করেন, আমি তাদের থেকে কম বুঝি না। শুধু এইটুকু বলতে চাই, আমি যা করছি ঠিকমতো করছি।

বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, দলের ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এ পর্যন্ত ২৫টি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি ৫০টি জেলা বা সাংগঠনিক ইউনিটের কমিটি না হওয়ার অন্যতম কারণ প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল। নতুন যেসব জেলার কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলো হলো শরীয়তপুর, কিশোরগঞ্জ, নওগাঁ, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর, রাজশাহী জেলা-মহানগর, চট্টগ্রাম মহানগর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, রাঙামাটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা উত্তর, ঝিনাইদহ, সিলেট জেলা-মহানগর, মাগুরা, মানিকগঞ্জ, সৈয়দপুর (সাংগঠনিক ইউনিট) ও ঢাকা জেলা। ভোলা জেলার সম্মেলনের কথা থাকলেও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মায়ের অসুস্থতার জন্য সম্মেলনের তারিখ পেছানো হয়েছে। যেসব জেলায় কমিটি দেওয়া হয়েছে এগুলো বেশ কয়েকটিতে বড় রকমের বিরোধ দেখা দিয়েছে। নেতারা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দলীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখছেন। কমিটি ঘোষণার পর রাজশাহী জেলা-মহানগর, রাঙামাটি, চট্টগ্রাম মহানগর, ঝিনাইদহ, নওগাঁ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। রাজশাহী জেলা ও মহানগরের কমিটি ঘোষণার পর স্থানীয় কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন পদবঞ্চিত গ্রুপের নেতারা। মাগুরায় পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণা করা হয়। মতবিরোধের কারণে ফরিদপুর জেলা কমিটি গঠনে সম্মেলনের সময় নির্ধারণ হলেও বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কায় সেখানে না করে রাজধানীর নয়াপল্টনে ভাসানী ভবনে সম্মেলন করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সেখানেও দুপক্ষের হাতাহাতির কারণে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সম্মেলন শেষ হয়। ঢাকা জেলা বিএনপির নতুন কমিটি নিয়েও বিরোধের বিষয়টি জানা গেছে।

এদিকে তৃণমূল বিএনপির নেতাদের অভিযোগÑদলের সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যসহ প্রভাবশালী নেতারা এক নেতার এক পদে থাকার বাধ্যবাধকতায় তাদের ঘনিষ্ঠদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাতে মরিয়া। এসব নেতার কেউ কেউ আবার স্থানীয় পদ ছেড়ে দিলেও নিয়ে আসতে চান অনুগতদের। ফলে হস্তক্ষেপের কারণে ব্যাহত হচ্ছে পুনর্গঠন। আবার কোনো জায়গায় পাল্টাপাল্টি কমিটি।

দলের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে ৪০টি জেলা কমিটি গঠনের চূড়ান্ত সময়সীমা বেধে দেওয়া ছিল। সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণার নজির খুব কম। তাই তৃণমূলে হতাশা আছে প্রচুর। এ অবস্থায় বিএনপি পুনর্গঠন কতটা সার্থক হবে এ নিয়ে রয়েছে নানা শঙ্কা।

জানা গেছে, দলটির তৃণমূল পুনর্গঠনের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের অনুগতদের দিয়ে ‘পকেট কমিটি’ করার চেষ্টাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলার পদ ছাড়তে অনীহা।

জানা গেছে, তৃণমূলে কমিটি গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান সমন্বয়কারী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের নিজ জেলা নোয়াখালীতে বিএনপির সম্মেলনে বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের কারণে করা যায়নি সম্মেলন। অন্যদিকে ফেনী জেলা কমিটি গঠন নিয়েও বিরোধ চরমে। উল্লিখিত কারণে আশাহত বিএনপির তৃর্ণমূল নেতাকর্মীরা।

পিডিএসও/মুস্তাফিজ

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist