জিয়াউদ্দিন রাজু

  ১৬ জুলাই, ২০২০

সুযোগ সন্ধানীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আ.লীগ

*চলমান শুদ্ধি অভিযান আরো জোরালো হবে *পৃষ্ঠপোষকদেরও শাস্তি চায় তৃণমূল

প্রতারক সাহেদের মতো লোক কীভাবে আওয়ামী লীগের মতো দলে ঠাঁই পেল, তা নিয়ে দলটির নেতারা বলছেন, দলে বহু অনুপ্রবেশকারীর আবির্ভাব ঘটেছে। এসব অনাকাক্সিক্ষত অনুপ্রবেশের ফলে এমন ব্যক্তির প্রভাব বাড়ে, যাদের কারণে দল বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। এদের কবল থেকে দলকে রক্ষা করতে আওয়ামী লীগে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছিল, যা এখনো চলমান রয়েছে, একে আরো জোরালো করা হবে।

নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগকে আরো গ্রহণযোগ্য করার উদ্যোগ নিয়েছে দলীয় হাইকমান্ড। পাপিয়া, জি কে শামীম, ক্যাসিনো খালেদসহ সম্প্রতি চিহ্নিত প্রতারক সাহেদ করিমের মতো হাইব্রিডরা দলে কোন দরজা দিয়ে ঢোকে, সেই দরজা চিহ্নিত করে, তা চিরতরে বন্ধ করার জন্যই শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা হবে। শুধু অপরাধীই নয়, যারা এদের পৃষ্ঠপোষক ও মূল হোতাদেরও চিহ্নিত করতে চায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। সুবিধাবাদী ও সুযোগ সন্ধানীরা যেসব নেতার মাধ্যমে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়, সেই নেতাদেরও চিহ্নিত করে দল থেকে বহিষ্কার চান তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। প্রতারক সাহেদ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এমন মনোভাবই উঠে আসে।

তৃণমূল বলছে, অনুপ্রবেশকারীরা সবসময় ভালো মানুষের মুখোশ পরে দলে ঢোকার চেষ্টা করবে, সেটাই তো স্বাভাবিক প্রবণতা। কিছু নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এসব লোক দলে জায়গা করে নেয়। মিছিলের বহর বাড়ানোর জন্য বাছ-বিচার না করেই সুযোগ সন্ধানীদের দলে ভেড়াচ্ছেন তারা। মন্ত্রী-এমপিদের হাত ধরে শুধু কেন্দ্রীয় পর্যায়েই নয়, তৃণমূলেও অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তাই চলমান অভিযানকে আরো জোরালো করা দরকার। দলের নাম ভাঙিয়ে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত যারাই অপকর্মে জড়িত, মানুষের জীবনকে পুঁজি করে যারাই ব্যবসা করেছে, দলের নাম ভাঙিয়ে অবৈধপথে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, দলের ভাবমূর্তিকে যারা বিনষ্টের চেষ্টা করছে, দলের রাজনীতিকে মানুষের সামনে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, এই সব দুর্নীতিবাজ, ভন্ড, প্রতারকদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। যতবড় প্রভাবশালীই হোক, যারা এই লোকদের দলে ঢুকতে যারা সাহায্য করেছেন এবং পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একজন সাবেক সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগকে বিশুদ্ধ করুন, দূষিত রক্ত বের করে দিন, বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করুন। সেটাই শেখ হাসিনার চাওয়া। আগাছা, লুটেরা ও দুর্নীতিবাজদের দল থেকে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। যারা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি লাগিয়ে অপকর্ম, দুর্নীতি, লুটপাট ও ভূমি দখল করবে, তারা আওয়ামী লীগের লোক হতে পারে না। আওয়ামী লীগে লোকের অভাব নেই, খারাপ লোকের দরকার নেই।

এই জন্য দলের সিনিয়র কিছু নেতাদেরও দুষছেন তিনি। তিনি বলেন, দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা যাচাই-বাছাই না করেই দলে পাপিয়া, খালেদ, শাহেদের মতো লোকেদের স্থান দেন। তাদের কারণেই দলের দুর্নাম হয়।

দলীয় সূত্র জানায়, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য দায়ী ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া পক্ষে দলের হাইকমান্ড। এদের বেলায় জিরো টলারেন্স অবস্থানে থাকতে দলের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, যখনই দুর্নীতিবাজের পৃষ্ঠপোষক কেউ দলে ধরা পড়বে তাকে দল থেকে সরাসরি বের করে দেওয়া হবে। এসব বিষয়ে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশ রয়েছে বলেও জানান।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলের ভেতরে-বাইরে সরকারি আমলা, যত বড় ব্যবসায়ী বা প্রভাবশালী ব্যক্তি হোক না কেন, দুর্নীতিবাজ প্রতারক চক্রকে ছাড় দেওয়া হবে না। এ নিয়ে আরো খোলামেলা আলোচনা হবে হাইকমান্ডের সঙ্গে। শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে জনগণের ও তৃণমূলের গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তোলা হবে।

এদের বিরুদ্ধে কড়া হুশিয়ারি দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দলের নেতৃত্ব কিন্তু একদিনে সৃষ্টি হয়নি, এই সৃষ্টির পেছনে দীর্ঘ ত্যাগ তিতিক্ষা রয়েছে। তাই প্রতারক দুর্নীতিবাজদের দল থেকে ছেঁকে দলের যোগ্য, ত্যাগী ও পোড়খাওয়াদের মূল্যায়ন করা হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আওয়ামী লীগ,সুযোগ সন্ধানী,শুদ্ধি অভিযান
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close