বদরুল আলম মজুমদার

  ২৭ জানুয়ারি, ২০২০

ঘটছে হামলা, সংঘর্ষের ঘটনা

শেষ মুহূর্তে উত্তেজনা বাড়ছে ভোটের মাঠে

ঢাকার দুুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আর মাত্র ৪ দিন বাকি। ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে মাঠের উত্তেজনা ততই বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা প্রার্থীদের অভিযোগের পরিমাণও। ভোটের মাঠের অধিকাংশ উত্তেজনা জড়িয়ে পড়ছে প্রচার-প্রচারণায় মুখোমুখি অবস্থায় গেলেই। প্রার্থীদের অভিযোগের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে পোস্টার ছেড়া, প্রচারণায় বাধা দেওয়া, কিছু ক্ষেত্রে হামলার ঘটনাও আছে। এর বাইরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে কালো টাকার ছড়াছড়ির অভিযোগ বেশ জোরালো।

গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় ইশরাকের প্রচারণায় প্রতিপক্ষের কর্মী-সমর্থকরা হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন দক্ষিণ সিটির বিএনপির এ প্রার্থী। গোপীবাগ সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের সামনে দিয়ে ইশরাকের প্রচার মিছিল যাওয়ার সময় পাশে থাকা নৌকা মার্কার কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের কর্মী-সমর্থকরা একে অপরের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এর আগে একই ধরনের অভিযোগ আনেন ঢাকা উত্তর সিটির করপোরেশনের উত্তরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। রাজধানীর মিরপুরে বিএনপির এ প্রার্থীর প্রচারণা চলাকালে সরাসরি প্রার্থীর ওপর হামলার অভিযোগও আসে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন মিরপুর জোনের পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হামলার ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশনা দিয়েছেন। এ নিয়ে দেশি-বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা উদ্বেগও জানিয়েছেন।

এদিকে গতকাল ইশরাকের ওপর হামলার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত বিট্রিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকশন। তিনি বলেন, সংঘর্ষের ঘটনা প্রত্যাশিত নয়, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। নির্বাচনে প্রতিযোগিতায় সংঘর্ষ কোনোভাবেই হওয়া উচিত নয়। এ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হওয়া সবারই কাম্য। আমি আশা করব একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করি। গতকাল দুপুরে ঢাকা দক্ষিণে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

ডিকশন আরো বলেন, আমি সব মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে দেখা করছি। তারই অংশ হিসেবে আজ বিএনপির প্রার্থীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। আমি ইলেকশন কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা কীভাবে নির্বাচন পরিচালনা করছে সে বিষয়ে কথা হয়েছে।

ধানের শীষের প্রচার মিছিলের ওপর হামলার ঘটনায় মোটেও বিচলিত হননি বলে জানিয়েছেন মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, আমরা জনগণের অধিকারের লড়াইয়ে আছি। গুলির শব্দে আমি ভয় পাই না। কোনো হামলা ভয় পাই না। মরতে হলে আমি মরব। আবারও বলছি, সন্ত্রাসীরা যদি আমাকে মারতে আসে আমি মাঠ ছেড়ে দেব না।

প্রচার মিছিলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার পর নিজ বাসার নির্বাচনী কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিং করেন ইশরাক হোসেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, এ ধরনের হামলার ঘটনা ন্যক্কারজনক। ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এটি দেখে নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য এ ধরনের একটা ঘটনা ঘটিয়েছে সরকার। আমি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা শান্ত থাকবেন, বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। শুধু ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে নির্বাচনকে বানচাল করার একটা অপচেষ্টা। এতে জনগণ বিভ্রান্ত হবে না।

এদিকে রাজধানীর গোপীবাগে হামলার ঘটনায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে অভিযুক্ত করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, নির্বাচনে জাতীয় রাজনীতির কূটকৌশল নিয়ে কাজ হচ্ছে না বিএনপির। সন্ত্রাসীদের বের করে এনেছে। তারা ভয়ভীতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। আনুষ্ঠানিকভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দায়ের করা হবে।

গতকাল রোববার সবুজবাগ এলাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের কর্মীরা ভোটার স্লিপ নিয়ে কাজ করছিল। বিএনপি প্রার্থী নিজে উপস্থিত থেকে হামলা চালিয়েছে। আমি তো শুনেছি, বিএনপি প্রার্থীর অস্ত্র থেকেই গুলি করা হয়েছে। এটা অনভিপ্রেত, নিন্দনীয়। আমরা চাই, সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন হোক। ঢাকাবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে এসেছে। জাতীয় রাজনীতির কূটকৌশল প্রয়োগ করে নির্বাচনে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ নেই, এটা স্থানীয় নির্বাচন।

রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, মাঠের উত্তেজনা বেশি মূলত কাউন্সিলর প্রার্থীদের মাঝে। একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ, পোস্টার ছেড়া, প্রচার মাইক কেড়ে নেওয়া, ভোটার স্লিপ বিতরণে বাধার অভিযোগগুলো সবচেয়ে বেশি। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, দিন যত ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের অভিযোগ ততই বাড়ছে। এখন প্রতি ঘণ্টায় শত শত অভিযোগ জমা হচ্ছে কমিশনে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে, ঢাকা উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রার্থীরা আমাদের কাছে যেসব অভিযোগ দিচ্ছেন তা আমরা খতিয়ে দেখছি। অভিযোগের সত্যতা পেলে তড়িৎ ব্যবস্থাও নিচ্ছি। তবে প্রার্থীদের করা অধিকাংশ অভিযোগেরই সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় না।

নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর সময় থেকেই রাজধানীর উত্তরা, দক্ষিণ খান, গুলশান, কাওলা, কেরানীগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় কাউন্সিলর প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকের কাজে বাধার অভিযোগও আছে। এর বাইরে গতকাল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আলহাজ সফিউদ্দিন ফনো মোল্লা অভিযোগ করেন, তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করেছে একই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আনিসুর রহমান নাইম ও তার কর্মীরা।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, গতকাল দুপুরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকরা একটি মিছিল করতে গেলে তাতে হামলা করে নাঈমের লোকজন। এ সময় মিছিলে অংশগ্রহণকারী ১০-১২ জন কর্মী আহত হয়ে উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর ঠিক ২ ঘণ্টা পরই নাইমের লোকজন দলীয় সমর্থিত প্রার্থীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ ফনো মোল্লার। এ বিষয়ে নাইমের বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এছাড়া গুলশান এলাকায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর ওপর হামলার অভিযোগ করেছেন শরিফুল ইসলাম জুয়েল। গত শ্রক্রবার সন্ধ্যায় তাকেসহ তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালায় সরকার দলীয় মনোনীত প্রার্থী। এতে প্রার্থীসহ ৫ জন আহত হয়। এ ঘটনা অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ দলীয় সমর্থিত প্রার্থী। তিনি হামলার ঘটনাটি দলীয় মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে ঘটেছে বিএনপির মধ্যেই। এছাড়া রাজধানী দক্ষিণখানের ৫০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী নাজিম উদ্দিন দেওয়ানের ওপর হামলা করেছে প্রতিপক্ষ দলের কাউন্সিলর প্রার্থী। এতে গুরুতর আহত অবস্থায় নাজিম উত্তরার একটি হাসপাতালে এখনো ভর্তি আছেন। এর বাইরে হামলার ঘটনা ঘটেছে উত্তর সিটির ১নং ওয়ার্ড, ৪৮নং ওয়ার্ড ও ৪৯নং ওয়ার্ডে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সংঘর্ষ,হামলা,উত্তেজনা,দুুই সিটি নির্বাচন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close