বদরুল আলম মজুমদার

  ০৪ জানুয়ারি, ২০২০

দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কঠোর আ.লীগ-বিএনপি

বিদ্রোহীরা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন না!

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বড় দুই দলে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর ছড়াছড়ি। মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগ পর্যন্ত দফায় দফায় বৈঠক করে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করলেও প্রায় সবগুলো ওয়ার্ডেই পাঁচজনের অধিক বিদ্রোহী প্রার্থী নেমেছেন নির্বাচনী লড়াইয়ে। ভোটের মাঠে এত বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে খেই ধরে রাখতে পারছেন না। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় এমপির দোহাই দিয়ে এই বিদ্রোহীরা মাঠে থাকতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত তা তাদের মাঠে থাকার পক্ষে কাজে দেবে না বলে দলীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় প্রার্থীর বাইরে যারা মাঠে আছেন তাদের আগামী ৯ জানুয়ারির মধ্যে নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে এরই মধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এজন্য স্থানীয় সিনিয়র নেতাদের মাধ্যমে বিদ্রোহীদের মাঠছাড়া করতে এবং দলীয় প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে কাজ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মাঠে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মোটা দাগে না থাকলেও কয়েকটি জায়গায় যেসব ঝামেলা ছিল তা-ও শেষ পর্যন্ত মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিরোধপূর্ণ কয়েকটি ওয়ার্ডে বেশ কয়েকজন প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে যাদের পরিবর্তন করা হয়েছে, তারা মনে করছেন অনৈতিকতার আশ্রয় নিয়ে প্রার্থী পরিবর্তন করছে দলের একটি সুবিধাভোগী শ্রেণি। এ নিয়ে ক্ষোভের সঙ্গে মাঠে থাকার ঘোষণা দিলেও দল হিসেবে বিএনপি তাদের পাত্তা দিতে চায় না। ঢাকা উত্তর সিটিতে বিএনপি গতকালও একটি মনোনয়ন পরিবর্তন করেছে। উত্তরের ৪০নং ওয়ার্ডে মনোনয়ন পরিবর্তন করে সেখানে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে একই এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমানকে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিরোধ কিছুটা হলেও কমেছে।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের একটি বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নগর কমিটির নেতারাসহ দলের অধিকাংশ সিনিয়র নেতা দলীয় বিরোধী প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে নিজ নিজ মনোনয়নপত্র আগামী ৯ তারিখের আগে তুলে নেওয়ার জন্য হুশিয়ারি দেন। সেই সঙ্গে সভায় দলীয় এই বিদ্রোহীদের আশ্বস্ত করা হয়, আগামী নগর ও থানা কমিটিতে সবাইকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা হবে বলে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবারের মিটিংয়ে বক্তারা স্থানীয় এমপি ও অন্য বড় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা যারা বিদ্রোহী প্রার্থীকে আসকারা দিচ্ছেন আপনারা এবার থামুন। নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে, এটা ভুলে গেলে চলবে না বিএনপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ না করলে আমাদের দলীয় প্রার্থীর অবস্থান দুর্বল হতে পারে। যাকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তার অবস্থা দুর্বল হবে এমনটা আমরা সহ্য করব না। সবাই সম্মিলিতভাবে মাঠে থেকে আমরা বিএনপিকে মোকাবিলা করতে চাই।

বৃহস্পতিবারের বৈঠকের পরই অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী তাদের সুর নরম করে এনেছেন। তারা শেষ পর্যন্ত প্রার্থী পরিবর্তন করার চেষ্টা করতে থাকলেও কোনোভাবেই ৯ তারিখের পর নিজেরা মাঠে থাকবেন না বলে দুই সিটির একাধিক বিদ্রোহীর সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ডিএনসিসির ৫৩নং ওয়ার্ডের দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, দলের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহী’ খেতাব নিয়ে মাঠে থাকার শখ আমাদের নেই। তবে কষ্ট হয় দল কোনো রকম খোঁজখবর না নিয়ে এমন একজনকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে, তাদের সামনে রেখে জয়ী হয়ে আসা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এটা হচ্ছে আমাদের বক্তব্য। আমরা ৯ তারিখ পর্যন্ত প্রার্থিতা পরিবর্তন করার চেষ্টা চালিয়ে যাব, তারপরও কিছু করতে না পারলে হয়তো নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াব, কিন্তু দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়া সম্ভব হবে না। মেয়র নির্বাচন নিয়ে সে সময়টুকু পার করতে চাই।

এ বিষয়ে দক্ষিণের একটি ওয়ার্ডের একজন বিদ্রোহী প্রার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে শেষ পর্যন্ত থাকব না এটা নিশ্চিত। তবে আমার এখানে দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে সেই প্রার্থী শুদ্ধি অভিযানকালীন পুরোটা সময় বাংলাদেশের সব মিডিয়ার শিরোনাম হয়েছেন, তার নিজের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড দিয়ে। সুতরাং ঢাকা শহরের ভোটারদের কাছে তার জন্য ভোট চাইতে যেতে পারব না।

তবে আওয়ামী লীগের বিতর্কিত প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়ায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ঢাকার দুই সিটিতে কিছু কিছু বিতর্কিত প্রার্থীর কথা শোনা যাচ্ছে। সেগুলো দেখে একটা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের পর বিদ্রোহী প্রার্থীরা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পরিবর্তন করার চেষ্টা করে যাবেন বলে অনেকের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বিদ্রোহীদের মাঠে থাকার বিষয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় সুসংগঠিত থাকে। আমরা আশা করি, সিটি নির্বাচনেও তা বজায় থাকবে। এ নির্বাচনেও দলের বাহিরে গিয়ে কেউ কাজ করবেন না। আর কাউন্সিলর পদেও কোনো বিদ্রোহী থাকবে না। আর যদি কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী থাকে তাহলে দলীয়ভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করা হবে।

তবে কাউন্সিলর পদে কোনো দলই সবার জন্য উন্মুক্ত করবে না বলে নিশ্চিত করেছে হাইকমান্ড। ৩০ জানুয়ারি দুই সিটির মেয়র ও কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল ৩১ ডিসেম্বর। এ দিন দুই সিটিতে সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৭২টি পদের বিপরীতে ১ হাজার ২৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। আগামী ৯ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ওই দিনই চূড়ান্ত হবে দুই দলে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী থাকছেন কিনা। তবে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর দেখা গেছে, কোনো ওয়ার্ডে কাউন্সিলর (সাধারণ) পদে সর্বোচ্চ ১৩ জনও প্রার্থী রয়েছেন। এমনকি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদেও রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। এর মধ্যে দক্ষিণে ২২নং ওয়ার্ডে ১১ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন।

বিদ্রোহী প্রার্থীর বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, আমরা প্রতি ওয়ার্ডে একক প্রার্থীকে দল থেকে সমর্থন দিয়েছি। আমাদের চেষ্টা থাকবে শেষ পর্যন্ত দলীয় একক প্রার্থী রাখা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর আগে জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন, আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার; কিন্তু পরে যে কোনো কারণেই হোক তা হয়নি। তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। সেটা তো বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু উৎসাহ জোগাবেই। কাউন্সিলর পদে শেষ পর্যন্ত উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটার আর কোনো সুযোগ নেই। কারণ বিএনপি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। ফলে একক প্রার্থী করতে না পারলে সেটা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।

বিএনপির কাউন্সিলর বাছাইসংক্রান্ত মনোনয়ন বোর্ডের সমন্বয়ক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, সময় স্বল্পতার কারণে কিছু ওয়ার্ডে একক প্রার্থী নিশ্চিত করা যায়নি। তবে আমাদের হাতে আরো কয়েকদিন সময় আছে। এর মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বোঝাতে সক্ষম হব। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবে বলে আশা করি।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিদ্রোহী প্রার্থী,সিটি নির্বাচন,ঢাকা সিটি নির্বাচন,আ.লীগ,বিএনপি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close