বদরুল আলম মজুমদার

  ০২ জানুয়ারি, ২০২০

আজ মনোনয়নপত্র বাছাই

প্রতি ওয়ার্ডেই বিদ্রোহী, বিব্রত মনোনীতরা

ঢাকা দুই সিটির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেকে কাউন্সিলর পদে প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছে। কিন্তু সেটা মানা হচ্ছে না। প্রতিটি ওয়ার্ডেই প্রতি দল থেকে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এতে দল ও দল থেকে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তারা বিব্রত অবস্থায় পড়েছেন।

এদিকে, দল অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিতর্কিতদের মনোনয়ন দিয়েছে বলে বিদ্রোহীরা অভিযোগ করছেন। তারা বলেন, যা মানা সম্ভব নয়, সেটা সিনিয়র নেতাদের জানানো সত্ত্বেও ত্যাগীদের মূল্যায়িত করা হয়নি। জানা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে স্থানীয় এমপির মদদে রয়েছে। তবে নেতারা বলেন, শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহীদের বুঝিয়ে তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো হবে। এদিকে আজ মনোনয়নপত্র বাছাই হবে।

জানা গেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে প্রার্থী বাছাই নিয়ে দলে চলছে অস্থিরতা। প্রায় প্রতি ওয়ার্ডেই রয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। ঢাকা উত্তর সিটির ৫১নং ওয়ার্ডের একজন বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ থেকে এমন একজনকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে যিনি দলের যোগ দিয়েছেন মাত্র দুই বছর আগে। তাকে দলে জায়গা দিয়েছেন থানা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতা। গত সিটি নির্বাচনে প্রতিটি ওয়ার্ডে তার নির্বাচনী এজেন্ট রাখা হয়েছিল ছাত্রদল ও যুবদলের স্থানীয় নেতাদের। সে সময় বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করতে পারিনি। কিন্তু সেই নির্বাচনে বিএনপির ভোটে কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেও এবার তাকেই আওয়ামী লীগের দলীয় নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। অথচ ফরম জমা দেওয়া থেকে শুরু করে নির্বাচনী কোনো কাজে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কাউকে সঙ্গে নিতে পারছেন না। তার আশা শেষ পর্যন্ত দল তাদের কথা শুনবে।

অপরদিকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া দক্ষিণ সিটির একজন প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার ওয়ার্ডসহ রাজধানীর প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিটি দল থেকে একের অধিক প্রার্থী নমিনেশন পেপার জমা দিয়েছেন। যা দেওয়ার কথা ছিল না। তাহলে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার মানে কি রইল। তবে শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে তারা হয়ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবে।

এ নিয়ে দলের অধিকাংশ নেতারা বলেন, শেষ পর্যন্ত এত প্রার্থী মাঠে থাকবে না। আগামী ৯ জানুয়ারি মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন পর্যন্ত হয়তো একটু বাড়াবাড়ি করবে পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে আছে দল থেকে একক প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তাই হবে।

ঢাকা দক্ষিণের ৬৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার ছোট ভাই মাসুদুর রহমান বাবলু মোল্লা। তাকে নিয়ে এলাকায় ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। ওই ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সিফাত সাদেকীন চপল। চপল বলেন, দলীয় প্রার্থী বিতর্কিত। আমি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকব। তৃণমূলই আমাকে প্রার্থী করেছে। দক্ষিণের ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ শেখ রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, দল সমর্থন দিয়েছে মাসুম মোল্লা নামের একজনকে। তিনি আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যও নন। সে কারণে আমি প্রার্থী হয়েছি এবং শেষ পর্যন্ত থাকব।

৬৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ডেমরা থানা যুবলীগের সাবেক সভাপতি হারুনার রশিদ। ওই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সামসুদ্দিন ভুইয়া। ৬০ নম্বর ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা রইস উদ্দিন। ওই ওয়ার্ডে দলের প্রার্থী লুৎফর রহমান রতন। ৬২ নম্বর ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী রতন মেম্বার। তিনি একাধিকবার ওই ওয়ার্ডের মেম্বার ছিলেন। ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন শহিদুল ইসলাম। তিনি সারুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সারুলিয়া ইউনিয়নের তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান। ওই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন দেওয়া হয়েছে জাতীয় পার্টি থেকে দলে আসা মাহমুদুল হাসান পলিনকে।

বিদ্রোহী প্রার্থীর ব্যাপারে আওয়ামী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী হয়তো থাকবে না আলাপ আলোচনা সাপেক্ষে তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনেক ওয়ার্ডে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া কিছু প্রার্থীর বিরুদ্ধে জোরালো অভিযোগ আসছে সেগুলোও পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

এদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলরদের তালিকা চূড়ান্ত করতে তিনটি কমিটি করেছিল বিএনপি। দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ কমিটি করে দেওয়া হয়েছিল যোগ্য ও জনপ্রিয় নেতাদের কাউন্সিলর পদে মনোনীত করতে। কিন্তু সেই উদ্দেশে পানি ঢেলে দিয়েছেন মহানগরের সিনিয়র নেতারা। নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে তারা অনেক ওয়ার্ডে নিজেদের লোককে মনোনয়ন দিতে তদবির করেন। ফলে কমিটির করে দেওয়া তালিকা এবং গণমাধ্যমে পাঠানো তালিকার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য দেখা গেছে।

তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, টানা দুই দিন সাক্ষাৎকার নিয়ে গত মঙ্গলবার ভোরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। উত্তরের তালিকা এবং কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত তালিকার অন্তত ছয় স্থানে হেরফের পাওয়া গেছে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বাছাই কমিটি বুলবুল আহমেদ মল্লিক, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে শাকিল মোল্লা, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে এনায়েত হাফিজ, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে মাসুম খান রাজেশ, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে আজহারুল ইসলাম সেলিমের নাম চূড়ান্ত করা হয়। এ ছাড়া ৫২ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থীর ঘর ফাঁকা রাখা হয়। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকায় তা বদলে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে আনোয়ার হোসেন, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে আনোয়ার শাহাদাৎ খান রনিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে এনায়েত হাফিজের নাম থাকলেও তাকে বাদ দেওয়া হয়। ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে মাসুম খান রাজেশকে সরিয়ে ওসমান গণি শাহজাহানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে আজহার ইসলাম সেলিমকে সরিয়ে অন্য একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ৫২ নম্বর ওয়ার্ডে নাম না থাকলেও আলমাস আলীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডটি দুই প্রার্থীর মাঝে ওপেন রাখা হয়।

তালিকায় নাম হেরফেরের বিষয়ে বাছাই কমিটির সদস্য ও উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান প্রতিবেদককে বলেন, বাছাই কমিটি যে তালিকায় স্বাক্ষর করেছে তা চূড়ান্ত। যদি পরে কোনো পরিবর্তন করে গণমাধ্যমে পাঠানো হয় তাহলে অবশ্যই সংশোধনী আসবে। এ নিয়ে কোনো অনিয়ম হওয়ার সুযোগ নেই।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আওয়ামী লীগ,বিএনপি,ওয়ার্ড,মনোনয়নপত্র
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close