জিয়াউদ্দিন রাজু

  ০২ জানুয়ারি, ২০২০

জেলা-উপজেলায় হবে সম্মেলন

নতুন বছরে ক্ষমতাসীন দলের পরিকল্পনায় প্রাধান্য মুজিববর্ষ

দিন যায়, মাস আসে, মাস ঘুরে নতুন বছর। রাজনীতির মাঠে নতুন বছরে সব দলই চায় নতুন করে সাংগঠনিক কাজ শুরু করতে। আর কাজ করতে গিয়ে কাজের ভুলত্রুটি নিয়ে আবার অন্য একটি পরিকল্পনা হাতে নেয়। এর ফলে একেকটি বছর একেকভাবে আলোচিত হয়ে থাকে। তবে থেমে থাকে না পরিকল্পনা। এভাবেই নতুন বছরে মহাপরিকল্পনা দিয়ে শুরু করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিহাস গড়ে রেকর্ড টানা

তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগ ২০১৯ বছরজুড়ে চমক দিয়েছে। কখনো সরকারে, কখনো দলে। বছরজুড়ে নেওয়া পদক্ষেপগুলো প্রশংসিতও হয়েছে। এরমধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান বছরের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু।

আর বছরের শেষে সঠিক সময়ে সম্মেলন করে নতুনভাবে দল সাজিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ছড়িয়ে দিয়ে সাংগঠনিকভাবেও সফল আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে রাজনৈতিক ময়দানেও একক শক্ত অবস্থানে আওয়ামী লীগ অপ্রতিরোধ্য দাপটই দেখিয়েছে। এবার নতুন বছরে জনমতকে প্রাধান্য দিয়ে দলকে আরো সুসংগঠিত করতে এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম সচ্ছল রাখতে নানা পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

সিন্ডিকেট ভেঙে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলন : দলটির তৃণমূল পর্যায়ে একাধিক বলয় তৈরি করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যরা। মূলত এ বলয় ভেঙে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটিগুলোর সম্মেলন চলমান রেখে তৃণমূলকে আরো শক্তিশালী করতে চায় দলটি। জাতীয় সম্মেলনের আগে থেমে যাওয়া জেলা সম্মেলনগুলোকে নতুন কমিটি দিয়ে নতুনরূপে তৃণমূলকে সাজাতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য নানা পরিকল্পনা রয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের।

বছরব্যাপী মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান : বছরব্যাপী মুজিববর্ষ দিবস পালন ও সফল করাই নতুন বছরের প্রধান লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। দলীয় তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সাল বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এ উপলক্ষে নানা উদ্যোগ ও পরিকল্পনা করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। সে পরিকল্পনায় যুক্ত হচ্ছে নানা প্রস্তাবনা। প্রস্তাবে প্রান্তিক কৃষক থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বদের সংযুক্ত করার কথা বলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের আয়োজনে। বাংলার সংস্কৃতিকে ধারণ করে অনুষ্ঠিত হবে বছরব্যাপী সেমিনার। নতুন বছরে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ও ঢাকা লিট ফেস্ট উৎসর্গ করা হবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি। ২০২০ সালে অনুষ্ঠিতব্য সব ক্রীড়া আয়োজন উৎসর্গ করা হবে বঙ্গবন্ধুকে।

দলীয় সূত্র জানায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে তৈরি হবে থিম সং। থিম সং রচনা ও মুজিববর্ষের লোগো নির্ধারণের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। মুজিববর্ষে ১০টি বিশাল ক্যানভাসে ছবি আঁকবেন দেশের প্রখ্যাত ১০ শিল্পী। এই ১০ শিল্পীর নেতৃত্বে আবার কাজ করবেন পাঁচ-ছয়জন শিল্পী। আট ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৪ ফুট প্রস্থের ভিন্ন আঙ্গিকে নিখুঁতভাবে উদ্ভাসিত হবেন বঙ্গবন্ধু। প্রতিটি ছবিতেই ইতিহাসের একটি অধ্যায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে আঁকা হবে শেখ মুজিবকে। এই ১০টি ছবি যেন হাজার বছর টিকে থাকে; সেজন্য ক্যানভাসসহ রঙের প্রয়োগে দেওয়া হবে বিশেষ গুরুত্ব। ছবিগুলো আঁকা হয়ে গেলে সেগুলোকে স্থায়ীভাবে মেহেরপুরের মুজিবনগর স্মৃতি জাদুঘরে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রাথমিকভাবে বাজেট ধরা হয়েছে ১০ কোটি টাকা।

সিটি নির্বাচনে ভোটযুদ্ধ : নতুন বছরে ঢাকায় ভোটযুদ্ধে নামছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল। এবার ক্ষমতাসীন দলটির প্রধান টার্গেট আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল ঘরে তোলা। মূলত দেশের রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র এই দুই সিটির গুরুত্ব সব থেকে বেশি। সে লক্ষ্যেই কাজ করছেন দায়িত্বশীল নেতারা। তবে সিটি নির্বাচনে লড়তে শুধু মেয়র প্রার্থীই নয়, কাউন্সিলর পদেরও জয় নিশ্চিত করতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। সরকার গঠনের পর এক বছর স্বস্তিতে পার করা আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, চ্যালেঞ্জ হলেও জয় নিশ্চিত করতে মাঠে নামবেন তারা।

ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন : এদিকে নতুন বছরে সঠিকভাবে দেশ পরিচালনার পাশাপাশি নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে আওয়ামী সরকার। নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী, বেকারত্ব দূরকরণের প্রতিশ্রুতি থাকলেও এখনো তা দৃশ্যমান হয়নি। নতুন বছরে এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ হবে বলে যানা গেছে।

মাদক-সন্ত্রাস নির্মূল : নতুন বছরে সরকারের পাশাপাশি মাদক-সন্ত্রাস নির্মূলকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। ক্যাডার, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজদের জঙ্গি ও মাদকের মতো নির্মূল করার লক্ষ্যে এ বছরও কঠোর অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগ। দলের কেউ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে দলীয় হাইকমান্ড।

অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সম্মান উদ্ধার : অন্যদিকে ঘটনাবহুল বছরটির শেষ সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আলোচনায় থাকা ক্যাসিনোবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের কারণে সরকারি দলের যেসব সহযোগী সংগঠনের নাম ক্ষুণ্ন হয়েছে, তা পুনরায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করবে ক্ষমতাসীন দল।

সহযোগী সংগঠনে প্রাণচাঞ্চল্য : আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে দীর্ঘদিন মেয়াদোত্তীর্ণ থাকা দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন করার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সে অনুযায়ী ২ নভেম্বর কৃষক লীগ, ৯ নভেম্বর শ্রমিক লীগ, ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ২৩ নভেম্বর যুবলীগের কাউন্সিল হয়। ঘোষণা করা হয় মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সম্মেলনের তারিখ। ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব আসে। এসব কমিটিতে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের স্থান দেওয়াকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন দলীয় নেতারা। নতুন বছরে সঠিকভাবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়ে সংগঠনগুলোতে প্রাণচাঞ্চল্য করতে চায় দলীয় হাইকমান্ড।

অনুপ্রবেশ ঠেকানো : দীর্ঘ ১১ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী সরকার। ক্ষমতার এ দীর্ঘ সময়ে বিশেষ সুবিধা আদায় করতে বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা দেদার আওয়ামী লীগে অনপ্রবেশ করেপ্রণ। অনুপ্রবেশকারী সেই নেতাদের চিহ্নিত করে দল থেকে ছেঁটে ফেলতে চায় দলটি। সব মিলিয়ে ঘর ও বিরোধী শিবিরের রাজনীতি নিয়ে আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত কমিটির দায়িত্বশীল নেতারা নতুন বছরের শুরু থেকেই চ্যালেঞ্জের মধ্যে থাকবেন। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলেও এখনো শেষ হয়নি আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল।

নতুন বছরে দলীয় পরিকল্পনার বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহা উদ্দিন নাছিম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, নতুন বছরে পুরোনো কাজগুলোকে শেষ করে নতুনভাবে কাজ শুরু করাই মূল কাজ। দলকে আরো সুসংগঠিত রাখতে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলন চলমান রাখা এবং বছরব্যাপী মুজিববর্ষ দিবস সফলভাবে পালনই এ বছরের প্রধান লক্ষ্য।

চ্যালেঞ্জের বিষয়ে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায় ও মাদক-সন্ত্রাস নির্মূল এ বছরের বড় চ্যালেঞ্জ। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করে দেশের জনগণের চাহিদা অনুযায়ী দেশ পরিচালনা হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মুজিববর্ষ,সম্মেলন,আওয়ামী লীগ,রাজনীতি,নির্বাচন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close