হাসান ইমন

  ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯

বেফাঁস কথাবার্তাই কাল হলো মেয়র খোকনের

যানজট নিরসন, দূষণমুক্ত, নাব্য ও নিরাপদ বুড়িগঙ্গাসহ পাঁচটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে ২০১৫ সালের ১২ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী হিসেবে সাঈদ খোকন নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন। এছাড়া ডিজিটাল মহানগরী, শিক্ষার সুযোগ সবার জন্য অবারিত করা, অগ্নিকাণ্ডের প্রতিরোধ ও নগর সুশাসন নিশ্চিত করাসহ আরো সাতটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তার ইশতেহারে ছিল। এছাড়াও রাজনীতি অঙ্গনে বিরোধ এবং মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে বেফাঁস কথাবার্তার কারণে তিনি মনোনয়ন পাননি।

তবে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, মেয়র হিসেবে সাঈদ খোকন অনেক কাজ করেছেন। কিছু বাকি রয়েছে। আবার কিছু কাজ টেকসই হয়নি। তার আরো কাজ করার সুযোগ ছিল। তবে কিছু বেফাঁস কথাবার্তা তাকে সমালোচিত করেছে।

যানজট নিরসন : যানজট নিরসনের অন্যতম একটি উদ্যেগ ছিল প্রধান সড়ক থেকে রিকশা উঠানো। চলতি বছরের ৭ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। উদ্যোগ নিলেও কার্যকর হয়নি। এছাড়া লক্কড়ঝক্কড় গণপরিবহনগুলো উঠিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কয়েকবার অভিযানও হয়েছিল সেটা আর টেকসই হয়নি। গণপরিবহনের মালিকানা কমিয়ে ৬ কোম্পানিতে আনার কথা থাকলেও এখনো কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বাস্তবে যানজট কিছুই কমেনি।

দূষণমুক্ত : নগরী দূষণমুক্ত করতে তেমন কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। তবে এ মৌসুমে এসে তিনি সাময়িক ধুলাবালি নিবারণে সড়কে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করেছেন। বায়ুদূষণ রোধে বাস্তবিক কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। চলতি বছরে কয়েকবার বায়ুদূষণে শীর্ষে উঠে ঢাকা।

বুড়িগঙ্গার সৌন্দর্যবর্ধনের প্রকল্প : ২০১৬ সালে ‘ঢাকা ইন্টিগ্রেটেড আরবান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড স্মার্ট সিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট’ নামে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও বিএমডিএফের আর্থিক সহায়তায় বুড়িগঙ্গা নদীর দুই তীর সংরক্ষণ এবং সৌন্দর্যবর্ধনে উদ্যোগ নিয়েছিল ডিএসসিসি। পুরান ঢাকার হাজারীবাগ থেকে নারায়ণগঞ্জের পাগলা পর্যন্ত আধুনিকায়ন করার কথা ছিল। পরে প্রকল্প কাটছাঁট করে বাবুবাজার সেতু থেকে সদরঘাট পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে কাজ বাস্তবায়নের আগেই বাধা দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। নদীর পাড়ের এই সৌন্দর্যবর্ধনে বিআইডব্লিউটিএর একই ধরনের একটি প্রকল্প ছিল। অনেক চিঠি চালাচালির পর প্রকল্পটি আর বাস্তবায়ন করতে পারেনি ডিএসসিসি।

ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয়নি : নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় প্রায়ই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও বেশির ভাগ ফুটপাত দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না। সিটি করপোরেশনের উদাসীনতা ও চাঁদাবাজদের দাপটে এই উদ্যোগ পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে অভিযানের পরপরই সেখানে আবার বসে পড়ছেন হকাররা। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন হকারদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে নগরীর পাঁচটি স্থানে ‘হলিডে মার্কেট’ চালুর উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে দুটি মার্কেট চালু হয়েছিল, এখন তাও বন্ধ। এছাড়া হকারদের বিদেশ পাঠাতে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। সেটি আর বাস্তবায়ন হয়নি।

অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ : প্রথম দিকে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধের তেমন কোনো কার্যক্রম হাতে নেননি। গত বছর চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডি ঘটনার পরে একটু টনক নড়ে সিটি করপোরেশনের। ওই সময় কেমিক্যাল গোডাউন উচ্ছেদে অভিযান চালায় সিটি করপোরেশন। কিছু দিন অভিযান চললেও পরে বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া অগ্নিকান্ড প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়েছেন তিনি।

‘জলসবুজে ঢাকা’ অসমাপ্ত রয়ে গেছে : ২০১৭ সালের জুনে ‘জলসবুজে ঢাকা’ নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ডিএসসিসি এলাকার আওতাধীন ৩১টি পার্ক ও মাঠ উন্নয়নে কাজ শুরু করে ডিএসসিসি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত তিনটি পার্ক ও তিনটি মাঠের সংস্কারকাজ শেষে উদ্বোধন করা হয়েছে। বাকি মাঠ ও পার্কের সংস্কারকাজ এখনো শেষ হয়নি।

এছাড়া রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে গত ২৫ জুলাই এক অনুষ্ঠানে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাকে ‘গুজব’ বলে মন্তব্য করেন মেয়র খোকন। ওই সময় তিনি বলেন, মশা নিয়ে রাজনীতি কাম্য নয়। সাড়ে তিন লাখ আক্রান্তের যে তথ্য এসেছে সেটি কাল্পনিক তথ্য। এটা সম্পূর্ণভাবে কাল্পনিক, বিভ্রান্তিমূলক। ছেলে ধরা, সাড়ে তিন লাখ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত একই সূত্রে গাথা।’ মেয়রের এমন বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ দলের ভেতরে সমালোচনা ঝড় ওঠে। এছাড়া ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর আজিমপুরের পার্ল হারবাল কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন স্থানে আওয়ামী লীগের কর্মী সমাবেশের পাশেই মেয়র সাঈদ খোকন পাল্টা কর্মসূচি দেন। পরে ওই সমাবেশস্থলের সামনে ট্রাকে করে সিটি করপোরেশনের ময়লা ফেলার ঘটনায় মেয়রকেই দোষারোপ করা হয়। ওই ঘটনায় তখন তৎকালীন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও মেয়র খোকনের মধ্যে যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় তা নিয়েও দলীয়ভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন সাঈদ খোকন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মেয়র খোকনের সামনে ভালো কাজ করার অনেক সুযোগ ছিল। তিনি চেষ্টাও করেছেন। পাঁচ বছর আগের পরিস্থিতি আর বর্তমান পরিস্থিতি এক না। এখন ঢাকায় জনসংখ্যা অনেক বেড়েছে। সমস্যাও বেড়েছে। এখতিয়ারবহির্ভূত কিছু প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন। যে কারণে সব প্রতিশ্রুতি তিনি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। তবে আগের চেয়ে ঢাকার অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সাঈদ খোকন,মেয়র সাঈদ খোকন,বেফাঁস,ডিএসসিসি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close