জিয়াউদ্দিন রাজু

  ১২ নভেম্বর, ২০১৯

ঢাকা উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন আজ

আসতে পারেন দলের দুঃসময়ের নেতারা

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের কমিটিতে আসছেন দলের দুঃসময়ের নেতারা। এরই মধ্যে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িতদের আমলনামা কয়েকটি মাধ্যমে দলীয় হাইকমান্ডের কাছে পৌঁছেছে। বিশেষ করে সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ দুই নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার বার্তা হিসেবেই দেখছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। সেক্ষেত্রে নেতাদের কৃতকর্মই নেতৃত্বে নির্ণায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

এমন প্রেক্ষাপটে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সম্মেলন আজ। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের। উপস্থিত থাকবেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু। আগামী ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন হবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

সংগঠনের মহানগর নেতাকর্মীরা চাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহানগর কমিটিতে এমন নেতৃত্ব আসুক যারা দুর্দিনের কর্মীদের মূল্যায়ন করবে এবং বিতর্কিতদের সংগঠনে স্থান দেবে না। স্বেচ্ছাসেবক লীগ সূত্রে জানা গেছে, সংগঠনটির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার সম্মেলন হচ্ছে প্রায় ১৩ বছর পর। ২০০৬ সালের ৩১ মে ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ঢাকা মহানগরকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করে দুটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। উত্তরের সভাপতি নির্বাচিত হন মোবাশ্বের চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হন ফরিদুর রহমান খান ইরান। ইরান এখন ঢাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তখন দক্ষিণের সভাপতি নির্বাচিত হন দেবাশীষ বিশ্বাস। সাধারণ সম্পাদক হন আরিফুর রহমান টিটু।

আলোচনায় যারা : সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সাবেক সভাপতি ইসহাক মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল। আওয়ামী পরিবার থেকে উঠে আসা নেতা বিপুল আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাকালীন আন্দোলনে তিন মামলার আসামি হয়েছেন। ১/১১-এর সময়ে তিনি রাজপথের কর্মী ছিলেন। বর্তমানে তিনি উত্তরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের কাছে জনপ্রিয়। স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান কমিটির সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম শফিক, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান পান্না আলোচনায় রয়েছেন।

গতকাল সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের পার্টিতে দূষিত রক্ত আর চাই না। দূষিত রক্ত বের করে দিতে হবে। বিশুদ্ধ রক্ত সঞ্চালন করতে হবে। কে কত প্রভাবশালী তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমরা চাইব ক্লিন ইমেজের কর্মীদের নেতা বানাতে। খারাপ লোকের কোনো দরকার নেই। পরিষ্কার ম্যাসেজ প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার এই মেসেজ আমি সম্মেলনের কর্মী-নেতাদের কাছে দিয়ে গেলাম।

এদিকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিতে পদায়িত হতে পারেন দীর্ঘদিন দলের জন্য কাজ করেছেন এবং ১০ বছরে নিজের ক্লিন ইমেজ বজায় রাখতে পেরেছেন এমন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সংগঠনের অনেক নেতা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে আছেন। কারণ ক্যাসিনোকান্ডে অব্যাহতি পাওয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোল্লা আবু কাওসারের অনুসারী অনেকেই এবার উত্তর ও দক্ষিণের শীর্ষ পদগুলোতে আসতে আগ্রহী। এ কারণে আসন্ন সম্মেলনে দুর্দিনের ত্যাগী, পরীক্ষিত ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতারাই উত্তর ও দক্ষিণের শীর্ষ পদগুলোতে ঠাঁই পাবেন বলে এমনটাই মনে করছেন নেতারা। সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হবে। তার আগে সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ দুই শাখা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন হলেও এর নেতৃত্বের ঘোষণা আসবে আগামী ১৬ নভেম্বর।

সংগঠনের নেতৃত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু বলেন, আমরা চাই কোনো অনুপ্রবেশকারী, কোনো সন্ত্রাসী, কোনো চাঁদাবাজ যেন নেতৃত্বে না আসে। যারা দলের ত্যাগী, পরীক্ষিত, দুঃসময়ে দলের সঙ্গে ছিল দলের দুর্দিনে আন্দোলন সংগ্রামে যারা বিভিন্ন অবদান রেখেছে তাদের মধ্য থেকেই নেতৃত্ব আসবে—এটা আমরা চাই।

সম্মেলনের বিষয়ে এ কে এম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন পাইনি। অনেক দিন পর সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এ কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে আবেগ কাজ করছে। তিনি বলেন, এবার ভিন্ন একটা প্রেক্ষাপটে সম্মেলন হতে যাচ্ছে। যারা রাজনীতির নামে অবৈধপথে বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছে তাদের বাদ দিয়ে আগামী দিনে যারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শুদ্ধ রাজনীতি চর্চায় সাহসী ভূমিকা রাখবে তাদের আমরা নেতৃত্বে দেখতে চাই। এ ছাড়া আমরা চাই যাদের ১/১১ প্রেক্ষাপট ও বিরোধী দলের রাজনীতিতে সুষ্পষ্ট ভূমিকা ছিল এমন পরিক্ষিত, ত্যাগী ও স্বচ্ছ ইমেজের নেতৃত্ব আসবে। তাহলে বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে।

ইসহাক মিয়া বলেন, ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালনের সময়ে পুরোটা সময়ে বিরোধী দলে কেটেছে। অর্থাৎ আন্দোলন সংগ্রামে নেতাকর্মীকে কাছ থেকে দেখেছি। সুতরাং সেসব দুঃসময়ের নেতাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ পদের দায়িত্বে আশা করি।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ৩১ মে ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে ঢাকা মহানগরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সর্বশেষ ২০১২ সালে মোল্লা মো. আবু কাওসারকে সভাপতি এবং পঙ্কজ দেবনাথকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি হয়েছিল। সম্প্রতি ক্যাসিনোকান্ডে মোল্লা মো. আবু কাওছারকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এছাড়া অন্য অভিযোগে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথকে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু। ১৯৯৪ সালের ২৭ জুলাই ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
স্বেচ্ছাসেবক লীগ,সম্মেলন,ঢাকা উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close