জিয়াউদ্দিন রাজু

  ১৯ অক্টোবর, ২০১৯

যুবলীগের ‘বলয়’ ভাঙছে এবার

শুদ্ধি অভিযানের প্রভাব বেশি পড়েছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের ওপর। অভিযোগ রয়েছে, সংগঠনের শীর্ষ পদের অপব্যবহার করে এই সংগঠনের অনেকেই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। সম্প্রতি যুবলীগের গ্রেফতার নেতাদের অনেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তাদের সম্পদের যে হিসাব দিয়েছেন, তাতে নাগরিক মাত্রই পিলে চমকে যাওয়ার মতো তথ্য এসেছে, জনসমক্ষে এসেছে অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ার গল্প। গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে এত অপকর্মের মূল কারণ হিসেবে সংগঠনে দীর্ঘদিনের অনৈতিক যোগসাজশের ‘বলয়’কে দায়ী করছেন ক্ষমতাসীন দলের অনেকেই।

আর এই ‘বলয়’ গড়ে ওঠার পেছনের কারণ হিসেবে ত্যাগী-বঞ্চিত নেতাকর্মীরা দায়ী করেছেন বছরের পর বছর সম্মেলন না করে পদ আঁকড়ে রাখার রাজনীতিকে। তাই এবার অনিয়ম ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের মাধ্যমে ‘শুদ্ধ যুবলীগ’ গড়ার কাজ শুরু হয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে।

সূত্র জানিয়েছে, গঠনতন্ত্র মতে, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা তিন বছর পর পর। যা ‘ত্রিবার্ষিক সম্মেলন’ নামে পরিচিত। কিন্তু যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় প্রায় ৬ বছর আগে। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বারবার সম্মেলনের তাগাদা দিলেও তা অনুষ্ঠিত হয়নি। এর কারণ হিসেবে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের অনীহা ও বলয় দ্বারা প্রভাবিত হওয়াকে দায়ী করেছেন যুবলীগ নেতাকর্মীরা।

অনেকের অভিযোগ, চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী যুবলীগকে নিজের ব্যক্তিগত সংগঠন হিসেবে ব্যবহার করেছেন। যখন যাকে মন চাইত তাকে তিনি পদ ‘দান করতেন’। যাকে অপছন্দ হতো, তাকে পদ থেকে সরিয়ে দিতেন। অভিযোগ রয়েছে, ‘বলয়’ থেকে শক্তি সঞ্চয় করে এসব করতেন ওমর ফারুক।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, আগামী ২৩ নভেম্বর সংগঠনটির ৭তম সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যুবলীগের দীর্ঘদিনের বলয় ভাঙতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে আওয়ামী লীগের এক প্রবীণ নেতা সরাসরি যুবলীগের অভিভাবক হিসেবে সংগঠনটির দেখভাল করতেন। কিন্তু তার হাতে যুবলীগের এমন পরিণতির পর এবার প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন নিজেই যুবলীগের কমিটির বিষয়টি দেখবেন। ইতোমধ্যে যুবলীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগরের শীর্ষ নেতা নির্বাচনের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন তিনি। সংগঠনটিকে অনুপ্রবেশমুক্ত নেতৃত্ব তৈরিতে চায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব।

সরকারি দলের সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ও সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি করছেন যারা, তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতারের পাশাপাশি দল এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন থেকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে দুভাবে অভিযান চলতে থাকবে। এর মধ্য দিয়ে বিতর্কিত, চাঁদাবাজ, অভিযুক্ত ও নানাভাবে অবৈধ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিয়ে সংগঠনকে ‘বিতর্কমুক্ত’ করা যাবে বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন দল।

চলমান শুদ্ধি অভিযান যুবলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেও সংগঠনের ত্যাগী ও ক্লিন ইমেজের নেতাকর্মীরা এতে খুশি। ক্যাসিনো, মাদক ও টেন্ডারে সম্পৃক্ততায় যাদের নাম রয়েছে তাদের কেউ আত্মগোপনে, আবার কেউ চুপচাপই রয়েছেন। তবে ক্লিন ইমেজের পদপ্রার্থী নেতাকর্মীরা সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ও ধানমন্ডির কার্যালয়ে নিয়মিত যাওয়া-আসা করছেন। যোগাযোগ বাড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে।

এদিকে সূত্র আরো জানায়, চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে ছাড়াই কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুবলীগ। এমনকি নতুন কমিটিতেও আর ঠাঁই পাচ্ছেন না বর্তমান চেয়ারম্যান। তবে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িতদের দলের কোনো পর্যায়েই রাখা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিলেন সংগঠনটির সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক। ফলে রোববার বিকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্মেলন প্রস্তুতি বিষয়ক বৈঠকে ওমর ফারুক চৌধুরী থাকতে পারবেন না।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
যুবলীগ,শুদ্ধি অভিযান,সহযোগী সংগঠন,সংগঠন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close