জিয়াউদ্দিন রাজু

  ২৬ আগস্ট, ২০১৯

আ.লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন পেছাতে পারে

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ফাইল ছবি

অক্টোররে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও তা প্রায় এক থেকে দুই মাস পিছিয়ে যেতে পারে। দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিববর্ষ হওয়ায় দল চলতি বছরের মধ্যে কেন্দ্রীয় সম্মেলন শেষ করতে বদ্ধপরিকর।

এদিকে আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে এরই মধ্যে দলের মধ্যে এক ধরনের মনস্তাত্বিক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। সম্মেলনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের অন্তত হাফ ডজন নেতা তাদের কর্মকাণ্ডে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ও সারা দেশের নেতাকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে দলীয় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণের পর মাঠে তারা আরো সক্রিয় হবেন।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত আগামী অক্টোবরে সম্মেলন হবে এটা ভেবে নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে দল। তবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠানে অগ্রগতি না থাকায় কেন্দ্রীয় সম্মেলন এক থেকে দুই মাস পিছিয়ে যেতে পারে। তবে কোনোভাবেই ওই সম্মেলন আগামী বছরে যাবে না। কারণ আগামী বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিববর্ষ। এ কারণে যতটুকু সময় পাওয়া যায় এ বছরের মধ্যেই সম্মেলন শেষ হবে। তবে হয়তো সেখানে একটু এদিক ওদিক হতে পারে।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ কেন্দ্রীয় নেতা এ বিষয়ে বলেন, শোকের মাস আগস্টের পর আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন নিয়ে আমাদের নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে আলোচনা হবে। সে সময়ই চূড়ান্ত হবে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে দলীয় সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান ও ভারত সফরের কথা রয়েছে। সে বিষয়গুলোর সঙ্গে সমন্বয় করেই ঠিক করা হবে আওয়ামী লীগের দলীয় সম্মেলনের তারিখ।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অক্টোবর নাগাদ দেশের অধিকাংশ জেলা ও উপজেলার সম্মেলন শেষ হয়ে যাবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলন করার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন আগে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তবে সব জেলা সম্মেলন সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করা সম্ভব নাও হতে পারে। এটা অক্টোবরের মধ্যে সম্ভব হবে।

দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগেই জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ করার তাগিদ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সে লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নেতৃত্বে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে সম্প্রতি দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা ও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের কারণে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে বেশ কিছুটা ভাটা পড়েছে। কারণ জেলা-উপজেলার সম্মেলন প্রস্তুতির কার্যক্রম স্থগিত রেখে বন্যা ও ডেঙ্গু মোকাবিলায় কাজ করতে হচ্ছে নেতাকর্মীদের।

সাধারণত কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে তৃণমূল তথা ইউনিয়ন, থানা, জেলা পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে এবার সারা দেশে ভয়াবহ ডেঙ্গু ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে তাতে কিছুটা ভাটা পড়েছে। এর ফলে জাতীয় সম্মেলনের আগে তৃণমূলের সম্মেলন সম্পন্ন করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জেলা ৭৮টি। বেশিরভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ। গত কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর ওই ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে শুধুমাত্র একটিতে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে ২০১৫ ও ২০১৬ সালের মধ্যেই বেশির ভাগ জেলার ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর বেশির ভাগ জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি হতে সময় লেগেছিল এক-দেড় বছর। আর উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটিগুলোর অবস্থা আরো করুণ। তবে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই জেলাগুলোর সম্মেলন হয়ে যাবে এ কথায় এখনো অনড় রয়েছেন দলের অনেক নেতাই।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, যে উপজেলাগুলোর ৫ বছরের অধিক সময় হয়েছে সেগুলোর কাউন্সিল সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমরা প্রায় শেষ করে নিয়ে আসব। এ ছাড়া জেলা কাউন্সিল যেগুলো অনেক দিন হয়ে গিয়েছে, সেগুলোর সম্মেলন করার জন্যও নেত্রী এরই মধ্যে নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন। সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই প্রায় উপজেলা ও জেলা সম্মেলন শেষ হয়ে যাবে।

জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে চলতি বছরের মার্চে আট বিভাগে ৮টি সাংগঠনিক টিম গঠন করে আওয়ামী লীগ। পরবর্তী সময়ে এই টিম বিভিন্ন বিভাগে সাংগঠনিক সফর করে। সাংগঠনিক সফর থেকে বিভিন্ন ইউনিটের সম্মেলন অনুষ্ঠানের নির্দেশনাও দেয়া হয়। কিন্তু রমজান মাসে সফর বন্ধ হয়ে যায় যা পূর্ণাঙ্গরূপে শুরু হয়নি। এখন পর্যন্ত হাতেগোনা দু-একটি উপজেলা ও ইউনিয়ন ছাড়া কোথাও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই জেলাগুলোর সম্মেলন হয়ে যাবে এ কথায় এখনো অনড় রয়েছেন দলের অনেক নেতাই।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি পদে শেখ হাসিনা টানা অষ্টমবারের মতো পুনর্নির্বাচিত হন তবে সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন মুখ এসেছিলেন ওবায়দুল কাদের।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আ.লীগ,কেন্দ্রীয় সম্মেলন,তৃণমূল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close