গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৪ জুলাই, ২০১৯

কাদের-রওশন মুখোমুখি

নতুন সংকটে জাপা

প্রয়াত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অনুপস্থিতিতে দলটিতে নতুন করে সংকট মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। দুই মেরুতে বিভক্ত দলের প্রতিটি অংশ অনড় অবস্থানে রয়েছে। দলীয় নেতাকর্মী ও বেশির ভাগ সমর্থক এরশাদের অনুজ জি এম কাদেরের নেতৃত্বে আস্থাশীল। এই অংশের মতে, দলের চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরই যোগ্য, দলটি আগামীতে অস্তিত্ব সংকটে না পড়ে, এ জন্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের নাম ঘোষণাও আসে। কিন্তু এতে বাধ সাধেন সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা এরশাদের সহধর্মিণী রওশন এরশাদ। কাদের পার্টির চেয়ারম্যান হোক—এ নিয়ে যতটা না আপত্তি, তার চেয়ে বেশি আপত্তি হলো তাকে (রওশনকে) না জানিয়ে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে নাম ঘোষণা দেওয়া নিয়ে। রওশন ঘরানার দুই-একজন এমপি সেখানে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

অনেকের অভিযোগ, দলের সুবিধাবাদীরা রওশনের কাছ থেকে যেভাবে বেনিফিশিয়ারি হচ্ছেন, কাদের পার্টির চেয়ারম্যান হলে, ভবিষতে সে পথ বন্ধ হবে। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের নীতি-নির্ধারণী একজন পুরো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতাকে। এরশাদ প্রয়াত হওয়ার পর পার্টির চেয়ারম্যান কে হবেন এবং সংসদীয় দলের নেতার পদে কে থাকবেন—এ নিয়ে সৃষ্ট সংকটে পর্দার অন্তরল থেকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যান তিনি।

রওশন ঘরানার একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, তিনি রাষ্ট্রীয় সফরে দেশের বাইরে যাওয়ার আগে জি এম কাদের সমর্থকরা যাতে রওশানকে মাইনাস করতে না পারেন, সে ব্যাপারে ক্লোজ মনিটরিংয়ে থাকতে দেশের শীর্ষ দুটি গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশ জানিয়ে যান। সংস্থা দুটি সেভাবে জাতীয় পার্টির সিদ্ধান্ত ও দৈনন্দিন কর্মকান্ডগুলোতে তীক্ষè নজর রাখছে বলে ওই সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। ফলে একজনের জনসমর্থন ও অপরজনের ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদ এ ক্ষমতার দ্বন্দ্বে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এ পরিস্থিতি জানান দিচ্ছে, রওশন এরশাদ ও জি এম কাদের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে মুখোমুখি।

দেবর-ভাবি দুজন দুই মেরুতে থাকার মধ্যে গতকাল সোমবার সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদের স্বাক্ষরিক এক বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে আসে। সেখানে রওশন বলেন, জি এম কাদেরকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করার আগে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মতামত নেওয়া হয়নি। ফলে জি এম কাদের এখনো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই আছেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রওশন বলেন, সম্প্রতি তিনি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছেন, জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তার দাবি, এ নিয়ে আদৌ কোনো যথাযথ ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।

দলীয় গঠনতন্ত্রের ধারা উল্লেখ করে এরশাদপত্নী বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালনকালে জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ধারা ২০ (২)-এর খ-এ দেওয়া ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। মনোনীত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রেসিডিয়ামের সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামতের ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করবেন। চেয়ারম্যানের অবর্তমানে ধারা ২০ (২)-এর ‘ক’-কে উপেক্ষা করা যাবে না। তিনি আশা করেন, বর্তমানে যিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরবর্তী চেয়ারম্যান না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য এক্ষেত্রে অভিন্ন।

এ প্রসঙ্গে রওশন এরশাদের মতামত না পাওয়া গেলেও জি এম কাদের বলেন, দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানাবেন তিনি।

এদিকে সম্প্রতি এরশাদ পরবর্তী পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, দলের মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা স্বাক্ষরিত একটি পত্র নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়। রওশানপন্থিরা বিষয়টি আঁচ করতে পেরে বিরোধীদলীয় উপনেতার স্বাক্ষরে পাল্টা আরেকটি চিঠি পাঠায় সাংবিধানিক সংস্থায়।

ইসিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুটি চিঠি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন শাখায় নিবন্ধনভুক্ত হলেও কোনোটিকেই এখনো তারা আমলে নেননি। সংস্থাটির বক্তব্য, পার্টির চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে কে পরবর্তী চেয়ারম্যান হবেন তা দলের জাতীয় কাউন্সিলে অনুমোদন দিলে তাকে কমিশন বৈধতা দেবে। সে পর্যন্ত তারা অপেক্ষায় থাকবেন।

এরশাদ ঘরানার জাতীয় পার্টির একাধিক সদস্য জানান, দলের চেয়ারম্যান থাকবে জি এম কাদের। এর জন্য যত ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সবই করতে তারা প্রস্তুত আছেন। রওশন এরশাদ যদি এক্ষেত্রে অন্যের ইন্ধনে বাড়াবাড়ি করেন তাহলে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার ক্ষেত্রে তাকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যান করতে প্রয়োজনে কাউন্সিল পর্যন্ত অপেক্ষা করব। কারণ বর্তমান সংসদের এমপিদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা বিবেচনায় নিয়ে সংসদীয় দলের সভায় জি এম কাদেরই বিরোধীদলীয় নেতা হবেন। তখন রওশন এরশাদের সব কিছু হাত ছাড়া হয়ে যাবে। সংসদের উপনেতা থেকেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

এদিকে রওশনের যারা ভালো চান, তারা সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতাকে বোঝাচ্ছেন, আপনার বয়স হয়ে গেছে, আপনি সংসদ নেতা হয়ে সংসদকে সামলান। কারণ বয়সের কারণে পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা আপনার পক্ষে সম্ভবও নয়। তাই আপনি সংসদ সামলান, কাদের সাহেব পার্টি সামলাক এমনটাই বোঝাচ্ছেন তারা। তখন রওশন তাদের জানিয়েছেন, আমার সঙ্গে সমঝোতা করে কাদের পার্টির চেয়ারম্যান বিষয়টি ঘোষণা দিলে—এ নিয়ে নতুন করে কোনো প্রশ্ন উঠত না। ওই পক্ষটি আরো বলছে, এখনো জি এম কাদের স্যার ম্যাডেমের সঙ্গে মান-অভিমান কিংবা ইগো বাদ দিয়ে আলোচনার টেবিলে বসলে বর্তমান যে দুটি বলয় মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে সে সংকট কেটে যাবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জাপা,সংকট,কাদের-রওশন,জাতীয় পার্টি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close