বদরুল আলম মজুমদার

  ০৯ জুলাই, ২০১৯

নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে ফিরতে সক্রিয় বিএনপি

গত ১০ বছরে অনেক বড় বড় নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা নির্বাচনে গেছেন তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক ইস্যুতে মাঠে থাকার সুযোগ থাকলেও দলটির কোনো রকম নড়াচড়া ছিল না এতদিন। শুধু পার্টি অফিসকেন্দ্রিক কর্মসূচিতে ছন্দবদ্ধ নানা কথা বলে মানুষের হাসির খোরাক ছাড়া বাড়তি কোনো আবেদন তৈরি করতে পারেননি দলের নেতারা। তাদের রাজনৈতিক কৌশল তারা বুঝতে পেরেছেন। তাই এখন সক্রিয় হচ্ছেন দলকে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনতে। এসব কথা জানা গেছে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে।

তাই এসব কিছুকে পেছনে ঠেলে নতুন করে এবার নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির ধারায় দলটি ফিরে আসতে চায়। নির্বাচনসহ সব জাতীয় ইস্যু নিয়ে দেশের মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়ার মতো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে। তবে এসব কোনো কিছুই এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আগামীতে সব নির্বাচনে অংশ নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে দল থেকে। তবে দল গোছানোর মতো কাজে কোনোভাবেই গতি আনতে পারছে না হাইকমান্ড। এ ক্ষেত্রে অনেকের জিদ ও সিন্ডিকেটের কবলে পুনরায় পর্যুদস্ত হওয়ার সম্ভাবনার কথাও ওঠে আসে। বিএনপির দুইন সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বললে এসব বিষয় ওঠে আসে।

তাদের মতে, রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়ে মোকাবিলা করা উচিত। অতি আবেগ বা যখন-তখন মরণঘাতী সিদ্ধান্ত দিয়ে দলকে বার বার খাদের কিনারায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে মাঠ পর্যায়েও চরম ক্ষোভ আছে, যা ধরতে পারছে না হাইকমান্ড। অথচ বিরোধী রাজনীতির সময় সংগঠন ও দল গোছানোর ন্যূনতম আইডিয়া কাজে লাগানো হচ্ছে না। ফলে সারা দেশের কমিটিগুলো ভাঙাগড়ার মধ্যেই থাকতে হচ্ছে, আর কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।

অবশ্য দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি রাজনীতিতে ছিল না কথাটি ঠিক নয়। গণমানুষের দল হিসেবে জনমত ও পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে যে কোনো বিষয়ে বিএনপি প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। তাছাড়া আমরা একটা অস্বাভাবিক অবস্থার মধ্যে আছি। তাই এখানে মোটাদাগের কিছু হয়ত হয়নি কিন্তু একবারেই হয়নি তা বলা যাবে না।

দলীয় সূত্র জানায়, স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত, নির্বাচনে অংশ নেওয়া নেতাদের বহিষ্কার এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মাঠ পর্যায়ে কোনো কর্মসূচি না থাকায় বিএনপির তৃণমূলে অস্থিরতার জন্ম দেয়। বিভিন্ন প্রোগ্রামে তৃণমূল নেতাদের তোপের মুখে পড়েন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।

এমন পরিস্থিতিতে আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে সব ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মসূচি এবং উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার দায়ে যাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, তাদের সবার বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, দলীয় প্রতীকে যখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন শুরু হয় তখন আমরা এর বিরোধিতা করেছিলাম। তবে আমাদের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বা কেউ যদি নির্বাচনে অংশ নিতে চান, তাহলে তারা অংশ নিতে পারেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দেরিতে হলেও বিএনপির নীতিনির্ধারকরা উপলব্ধি করতে পেরেছেন-সবকিছুতে ‘না’ বলতে বলতে তাদের দল রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এভাবে আর কিছুদিন চলতে থাকলে মাঠ পর্যায়ে তাদের যে বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থক আছেন, তাদেরকে তারা হারাবেন। নিজেদের সামাজিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তার জন্য হলেও অন্য দলে ভিড়বেন তারা।

এমন উপলব্ধি থেকেই আগের অবস্থান থেকে সরে এসে স্থানীয় নির্বাচনসহ সব ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। আগামী বছর অনুষ্ঠেয় ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও অংশ নেবেন তারা।

জানা গেছে, বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে নেওয়া এসব সিদ্ধান্তে তৃণমূল নেতারা যেমন খুশি, তেমনি দলটির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের মধ্যম সারির নেতারাও বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, বৈরী পরিবেশ এবং প্রতিকূলতার মধ্যে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে দলের ভবিষ্যৎ আরো খারাপের দিকে যাবে। তাই প্রতিকূলতার মধ্যেই সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে হবে।

জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স প্রতিদিনের বলেন, নির্বাচনের পর যে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছিল, সে সময়ের প্রেক্ষাপটে সেগুলো সঠিক ছিল। এখন নতুন করে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলোও সঠিক। একটা রাজনৈতিক দলের পক্ষে কোনো সিদ্ধান্তে অটল থাকা সম্ভব না। পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়। দলের একজন কর্মী হিসেবে আমি মনে করি, সব ধরনের নির্বাচনে যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত বিএনপি নিয়েছে, তা সঠিক। যদিও বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।

শুধু নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নয়, তৃণমূল ও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি। চলতি জুলাই মাসেই এ কর্মসূচি পালন করবেন তারা। এরই মধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কর্মসূচির ধরন সম্পর্কে আলোচনা করেছে বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা। ঈদুল আজহার আগেই অন্তত চারটি বিভাগে প্রতিবাদ সভা করার চিন্তা করছেন তারা। এসব সভায় কেন্দ্রের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিএনপি,রাজনীতি,স্থানীয় নির্বাচন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close