নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৭ জুন, ২০১৯

এরশাদের অবস্থা সংকটাপন্ন

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বাংলাদেশের রাজনীতির এক আলোচিত-সমালোচিত নাম। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সাবেক সেনাপ্রধান। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা। একসময়ের প্রতাপশালী এই নেতা এখন জীবনের শেষ প্রান্তে এসে জীর্ণ-শীর্ণ জীবনযাপন করছেন। তার জীবনের বাঁকে বাঁকে ঘটে গেছে নানা ঘটনা। এসব ঘটনা নিয়ে অনেক সময় তিনি হয়েছেন আলোচিত-সমালোচিত। অনেক সময় হয়েছেন টক অব দ্য ডে। নিজেকে স্মার্ট রাখতে যে এরশাদ একসময় প্রতিদিন গলফ খেলতেন, নতুন করে চুল গজাতে স্কার্ফ করতেন, সেই এরশাদের মুখে এখন খাবার তুলে দেন অন্য কেউ।

এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে রক্তে হিমোগ্লোবিন ও লিভারের সমস্যায় ভুগতে থাকা এরশাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ‘ক্রিটিক্যাল ইউনিটে’ ভর্তি করা হয়েছে বলে তার ভাই ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের জানিয়েছেন।

মতিঝিলের এজিবি কলোনি মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির সিলেট ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় সম্মেলনে তিনি বলেন, বুধবার সকালে এরশাদকে সিএমএইচের ক্রিটিক্যাল ইউনিটে নেওয়া হয়েছে।

সিঙ্গাপুরের চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২২ জুন তাকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয় বলে জানান জি এম কাদের।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা জানান এরশাদের চিকিৎসকরা। গুরুতর অসুস্থ হয়ে নির্বাচনে দলীয় প্রচার-প্রচারণার কার্যক্রমেও অংশ নিতে পারেননি তিনি। নিজ আসন রংপুর-৩-এর পাশাপাশি ঢাকা-১৭ আসন থেকেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা থাকলেও পরে নিজেকে ঢাকার আসন থেকে সরিয়ে নেন এরশাদ। সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে এসে নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদে আসীন করেন ভাই জি এম কাদেরকে। পরে নিজের সমুদয় সম্পত্তি দান করেন ট্রাস্টে।

সাবেক সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি এরশাদ ছিলেন একসময় বেশ ক্ষমতাধর ও প্রতাপশালী ব্যক্তি। বাংলাদেশের মানুষের মনে বেশ কিছু কারণে তিনি প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন।

তিনি ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। ১৯৬০-১৯৬২ সালে চট্টগ্রাম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কেন্দ্রে অ্যাডজুট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি কোয়েটার স্টাফ কলেজ থেকে স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি শিয়ালকোটে ৫৪ ব্রিগেডের মেজর ছিলেন।

১৯৬৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি লাভের পর ১৯৬৯- ৭০ সালে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক ও ১৯৭১-৭২ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে নির্বাচিত সরকারের অধীনে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালনকালে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে দেশ শাসন করেন। দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের উদ্দেশ্য ঘোষণা করে তিনি ১৯৮৬ সালে সংসদীয় সাধারণ নির্বাচন করেন। এই নির্বাচনে তিনি স্বপ্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির ভোটপ্রার্থী হিসেবে অংশ নেন এবং পরে পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে গণবিক্ষোভের চাপে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

এ ছাড়া ১৯৯৬ সালে সরকারের গঠনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়েছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা মহাজোট করেছিল। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও শেষপর্যন্ত জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে রাখতে সক্ষম হয়েছিল আওয়ামী লীগ। ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে ছিলেন জেনারেল এরশাদ। তার স্ত্রী রওশন এরশাদ সংসদে ছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের জাতীয় পার্টি থেকে তিনজন মন্ত্রী ছিলেন। বর্তমানে এরশাদ জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে এখন তার যে অবস্থা তাতে সিদ্ধান্ত দেওয়া তো দূরে থাক, নিজেই নিজের দেখভাল করতে পারেন না। অনেক দিন ধরেই ভীষণ অসুস্থ হয়ে বিছানায় তিনি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জাতীয় পার্টি,হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ,সিএমএইচ,রাজনীতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close