কাইয়ুম আহমেদ

  ০১ মে, ২০১৯

ফুরফুরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি কৌশলী

বৈশাখের প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যেই রাজনীতিতে স্বস্তির হাওয়া বইছে। গলছে রাজনীতির পারদ। ফুরফুরে মেজাজে ‘সমৃদ্ধির বাংলাদেশ’ নিয়ে দ্রুতগতিতে হাঁটছে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক শক্তির বিবেচনাতেও ‘দারুণ সময়’ পার করছে টানা তিনবারের ক্ষমতাসীন এই দলটি। বিশেষত বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নানা নাটকের পর সংসদে যোগ দেওয়ায় সরকারি দলে এখন মধুচন্দ্রিমার আবহ। কারণ শপথের মধ্য দিয়ে একাদশ জাতীয় নির্বাচন এবং সরকারকে মেনে নিয়েছে এতদিন ধরে একাদশ জাতীয় নির্বাচন এবং সরকারকে অবৈধ বলে আসা বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।

তবে শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দেওয়াকে কৌশলী বলছে বিএনপি। খোদ দলটির মহাসচিব বলছেন, এটা তাদের কৌশলেরই অংশ। এই কৌশলের অংশ হিসেবেই রাজনৈতিক দর কষাকষির মাধ্যমে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিও নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি। তবে বাজারে খবর যাই থাক, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানালেন, একাদশ জাতীয় সংসদের আইনপ্রণেতা হিসেবে তিনি শপথ নিচ্ছেন না। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, দল সিদ্ধান্ত বদলেছে বলেই তাদের নির্বাচিত চারজন এমপি হিসেবে শপথ নিয়েছেন। আর দলীয় সিদ্ধান্তেই তিনি শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকছেন। এটা তাদের কৌশলেরই অংশ।

এদিকে বিএনপির নির্বাচিত চারজনের শপথগ্রহণের পেছনে কোনো সমঝোতা আছে কিনা, তা খোলসা করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, যদি সমঝোতা হয় তা হলে সেই সমঝোতাটা খোলাখুলি বলেন, কী সমঝোতা হয়েছে?

তার প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে—আমার দল সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল, তাহলে আমি শপথ নিলাম না কেন? এটাও আমার দলের সিদ্ধান্ত। এটা আমাদের কৌশল।

শপথের বিষয়ে দলের সিদ্ধান্ত বদলের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমানে বিশ্বে রাজনীতির যে ধারা চলছে, তাতে সব সিদ্ধান্ত একেবারে চূড়ান্ত হয়ে থাকবে, স্থবির হয়ে থাকবে—এটা সবসময় ‘সঠিক নয়’। ন্যূনতম যে সুযোগটুকু আছে সংসদে কথা বলার সেই সুযোগটিকে কাজে লাগানোর জন্য আমরা সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ফ্রন্টের ঐক্যে প্রভাব নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে প্রশ্ন ওঠার সুযোগ খুব একটা হবে বলে মনে হয় না। কেননা তাদের দুজন আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এদিকে গত সোমবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তার পাশে দলের জ্যেষ্ঠ কোনো নেতাকে এমনকি দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির কোনো নেতাকর্মীরও দেখা মেলেনি। আর বিএনপির সংসদে যোগ দেওয়ায় নানা প্রশ্নের জন্ম হয়েছে ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটে। ফ্রন্ট ও জোটের নেতারা বলছেন, বিএনপির উল্টো সিদ্ধান্তের মধ্যদিয়ে এটা প্রমাণিত হলো, বিএনপির কাছে ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের গুরুত্ব নেই।

ফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য আবদুল মালেক রতন বলেন, মির্জা ফখরুলই বলেছেন, যারা শপথ নেবেন তারা বেঈমানি করবেন। এখন এই শপথ বেঈমানির পরিবর্তে অন্যকিছু সহায়ক হয় কীভাবে? এটা কোনোক্রমেই বোধগম্য হচ্ছে না।

ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ডা. জাহেদ উর রহমান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা এবার সদলবলে আওয়ামী লীগে যোগ দিক... আন্দোলনের অংশ হিসেবে।’

বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, গত একমাস ধরে বেশ জোরালোভাবে বিদেশি কূটনীতিকরা বিএনপিকে সংসদে যোগ দিতে চাপ দিয়ে আসছেন। একই সঙ্গে তারা বলছেন, সংসদে গিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জোরালোভাবে বক্তব্য তুলে ধরতে। বিশেষ করে পশ্চিমা ও প্রতিবেশী প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকরা সংসদে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে নানা যুক্তি তুলে ধরেন। বিষয়টি দলের হাইকমান্ড গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। তবে বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতারা জানান, সমঝোতার মাধ্যমে নয়, আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমেই তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি চান। তা না হলে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে ‘ভুল বার্তা’ যাবে।

এদিকে বিএনপির সংসদে যোগদানের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম এমপি বলেছেন, আমরা বিএনপির এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। দেশ ও জাতির কল্যাণে ভূমিকা রাখার জন্য সংসদই হচ্ছে উপযুক্ত জায়গা। দেরিতে হলেও তারা তা বুঝতে পেরেছেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিতই হন সংসদে গিয়ে তার এলাকার মানুষের পক্ষে, দেশের পক্ষে কথা বলার জন্য। এই বিবেচনায় বিএনপির নির্বাচিত এমপিরা দেরিতে হলেও শপথ নিয়ে সংসদে যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটি অবশ্য সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। এখন বিএনপির এমপিরা তাদের ওপর জনগণ অর্পিত গণতান্ত্রিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন—এটাই দেশবাসীর সঙ্গে আমাদেরও প্রত্যাশা।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ তোলার পর সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি। জোটভুক্ত দল গণফোরামের দুজন শপথ নেওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ করেছিল দলটি। বিএনপি তিন দিন আগেও ওই সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথা জানিয়েছিল। সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ায় দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান জাহিদকে। কিন্তু গত সোমবার সন্ধ্যায় স্পিকারের কাছে শপথ নিয়ে অধিবেশনে যোগ দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম ও বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন। তবে গতকাল পর্যন্ত শপথ নেননি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আওয়ামী লীগ,বিএনপি,রাজনীতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close