বদরুল আলম মজুমদার

  ২১ এপ্রিল, ২০১৯

ডেডলাইন ৩০ এপ্রিল : কী করবে বিএনপি?

বিএনপির নির্বাচিত ছয় এমপির শপথের গ্রহণের দিন শেষ হচ্ছে ৩০ এপ্রিল। এর মধ্যে শপথ না নিলে তাদের আসনগুলো খালি ঘোষণা করবেন স্পিকার। ঐক্যফ্রন্টের দুই এমপি দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে শপথ নিয়ে এরই মধ্যে সংসদে যোগ নিয়েছেন। বিএনপির নির্বাচিত এমপিরা শেষ পর্যন্ত কি করবেন তা নিয়েই প্রশ্ন সর্বত্র।

সংসদে শপথের ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে দলের একটি অংশ সরকারের সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তির সমঝোতা অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছেন, কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলীয় চেয়ারপারসনসহ দলের সিনিয়র নেতারা অনেকটাই বেঁকে বসেন। বিএনপি নেতারা হঠাৎ করেই সমঝোতার রাস্তা থেকে সরে গেলেও নির্বাচিত এমপিদের সংসদের যাওয়ার চাপ ঠিকই রয়ে গেছে। তবে নির্বাচিত এমপিরা শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শপথ নেবেন—না এই সময়কালের মধ্যে অন্য কিছু ঘটে যাবে, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে সপ্তাহকাল। বিএনপির এমপিদের সংসদে যোগদান ইস্যুতে নাটকীয় কিছু ঘটে যেতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্ত করার বিষয়ে বিএনপির নেতারা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে মতামত দিচ্ছেন। নেতাদের কেউ খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্ত করার বিষয়ে জোর দিয়ে আসলেও সিনিয়র নেতারা তাতে লাভের কিছু দেখছেন না। মূলত সরকারের দেওয়া শর্ত মেনে বেগম জিয়ার মুক্তির বিষয়টিকে দলীয়ভাবে পরাজয়ের চোখে দেখছেন অনেকেই। তারা মনে করছেন, এভাবে প্যারোল নিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হলে চেয়ারপারসনের আপসহীন চরিত্র প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আবার অপর পক্ষ মনে করছে, এমপিরা সংসদে গেলে সরকারকে স্বীকার করে নেওয়া হয়ে যায়। এটি বিএনপির রাজনৈতিক পরাজয় ছাড়া আর কিছু নয়। সূত্র জানায়, এসব কিছু মাথায় রেখেও নেতারা প্যারোলের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু প্যারোল নিয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ের শর্তেই মূলত আটকে যায় সমঝোতা প্রক্রিয়া।

দলের একটি বিশ্বস্ত সূত্র এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তির পর দুই মাস দেশে অবস্থান করে দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড দেখভাল করে সুবিধামতো সময়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে আগ্রহী। আর এখানেই আটকে গেছে সমঝোতা প্রক্রিয়া। কারণ এর সঙ্গে যুক্ত একটি পক্ষ বিএনপি নেতাদের জানিয়ে দিয়েছে, প্যারোল হলে খালেদা জিয়াকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য অবশ্যম্ভাবীভাবে বিদেশে চলে যেতে হবে এবং দীর্ঘ সময় সেখানে অবস্থান করতে হবে, যে সময়কাল কমপক্ষে দুই বছর পর্যন্ত হতে পারে।

এদিকে দলের অপর একটি সূত্র জানায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে কোনো শর্তের বিনিময়ে নিজের মাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার পক্ষে ছিলেন। তবে প্যারোল ইস্যুতে বিএনপি চেয়ারপারসনের নিজস্ব অবস্থানের কারণে পুরো প্রক্রিয়াটি শুধু ঝুলেই যায়নি, এর সঙ্গে দলের নির্বাচিত এমপিদের শপথ, তথা সংসদে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এদিকে প্যারোল ইস্যুতে সমঝোতা প্রক্রিয়া থেমে যাওয়ায় দলের তৃণমূল পর্যায়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দলের একটি পক্ষ মনে করে, যে কোনোভাবে নেত্রীর মুক্তিই এই মুহূর্তে প্রধান এজেন্ডা হওয়া উচিত। কারণ খালেদা জিয়া মাঠে থাকলে তৃণমূল এমনিতে যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি চাঙ্গা থাকে এবং একই সঙ্গে দলের নির্বাচিতরা শপথ নিলে দলের পক্ষে সংসদের ভেতরে বাইরে সরকারবিরোধী ভূমিকা পালনের সযোগ হবে। খালেদার মুক্তি দাবিকারীদের মতে, একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে দল আজ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর শীর্ষ নেতৃত্বে অনুপস্থিতির কারণে দলের সিনিয়রদের সিদ্ধান্ত তৃণমূল পর্যায়ে চরমভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে।

কীভাবে খালেদা জিয়ার মুক্তি চান—জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বও চন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়া আইনি প্রক্রিয়ায় জামিন পাওয়ার অধিকার রাখেন। এ ধরনের দৃষ্টান্ত সম্প্রতি আছে। সরকারের অনুকম্পায় খালেদা জিয়ার মুক্তি নেওয়া সম্মানজনক হবে না। নেতাদের মধ্যে মতপার্থক্যের ব্যাপারে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে দলে অনেক মত আছে। কিন্তু মতের অমিল নেই। তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে অন্যায়ভাবে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। তাকে মুক্তি দেওয়ার একমাত্র পথ জামিন। সরকার বিভিন্নভাবে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার জামিন ও মুক্তি প্রক্রিয়াকে প্রলম্বিত করছে।

এদিকে সংসদে যোগ দেওয়া না দেওয়া নিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছেন বিএনপির নির্বাচিত ছয় সংসদ সদস্য। দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করা সত্ত্বেও নির্বাচিত সদস্যরা শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দিতে আগ্রহী। অন্যদিকে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব, বিশেষ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সংসদে যোগদানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

সংসদে যোগ দেওয়ার বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ এই প্রতিবেদককে বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত সংসদে যাওয়া নিয়ে আমরা কোনো আলোচনা করব না। তাই নির্বাচিত এমপিদের শপথ নেওয়ার কথাই আসে না। আর এই সিদ্ধান্ত আমরা একা নেইনি। এর সঙ্গে মত আছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানেরও। সুতরাং বিষয়টির এখানেই নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। আমি আবারও স্পষ্ট করছি, বিএনপির কেউ শপথ নিচ্ছেন না, এমন সিদ্ধান্তই নিয়েছে স্থায়ী কমিটি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিলে আমরা একটা রিস্ক নিয়ে সংসদে যেতে পারতাম। কিন্তু তাকে মুক্তি না দিলে কীভাবে যাই! তিনি আরো বলেন, নেত্রী প্যারোল নেবেন না। আবার সরকার আদালতে হস্তক্ষেপ বন্ধ করছে না। এখন জামিন হলে একটা সমাধান বেরিয়ে আসত। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচিতরা সংসদে যাওয়ার পক্ষে। কিন্তু নেত্রীর সম্মতি লাগবে।

উল্লেখ্য, সংবিধান অনুযায়ী আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শপথ না নিলে বিএনপির সংসদ সদস্যদের সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিএনপি,সংসদ সদস্য,খালেদা জিয়ার মুক্তি,রাজনীতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close