কাইয়ুম আহমেদ

  ০৭ এপ্রিল, ২০১৯

তৃণমূলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ!

শোকজ নোটিস যাচ্ছে

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে দ্বন্দ্ব-কোন্দলে নড়বড়ে হয়ে উঠেছে শক্ত ভিতে আকাশছোঁয়া আওয়ামী লীগের তৃণমূল। টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতাসীন এই দলটিতে এখন বড় সমস্যা তৃণমূলের দ্বন্দ্ব। জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়নেও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে পড়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই। দলীয় প্রতীকের এই স্থানীয় নির্বাচনে নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব, একে অপরকে নোংরা ভাষায় আক্রমণ, বক্তব্য-বিবৃতিতে চরিত্র হনন; এমনকি মারামারি-খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে। এ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে খোদ দলটির হাইকমান্ডও। ফলে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে প্রায় সব উপজেলায়। এমন পরিস্থিতিতে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচন আর দলীয় প্রতীকে না রাখার প্রস্তাবও আসতে পারে দলের তরফে। তবে বিষয়টি নিশ্চিত না করলেও দলে এ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়েছে দায়িত্বশীল সূত্র।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে দলীয় প্রধানের কঠোর নির্দেশনায় ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার বিজয়ে কাজ করেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু এর দুই মাসের মাথায় উপজেলা নির্বাচনের মাঠে নেমে দলের বিরুদ্ধে এক রকম যুদ্ধ ঘোষণা করেন একই তারা। এ নির্বাচনে দলটির প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি ও এর শরিকরা অংশ না নেওয়ায় মহাজোটভুক্ত দলগুলোও প্রতিযোগিতায় মাঠে নেই। ফলে বেশিরভাগ উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগই মাঠে নামে। একপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকে; আরেক পক্ষ নৌকার বিরুদ্ধে। কোনো কোনো উপজেলায় তিনজন বা চারজনও নৌকার বিপক্ষে প্রার্থী হন। এসব প্রার্থীর প্রায় সবাই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় বা স্থানীয় পর্যায়ের কোনো না কোনো পদে আছেন। আবার দলীয় পদে থেকেও দল মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষেও নির্বাচন করছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে বিজয়ীও হয়েছেন কেউ কেউ।

জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের কিছু মন্ত্রী, এমপির ইন্ধনে দলীয় হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন অনেকেই। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক নিজের পছন্দের প্রার্থীদের দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন। ফলে একই দলের নেতারা কেউ নৌকা আর কেউ বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় বিভক্ত হয়ে পড়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। একে অপরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি ব্যস্ত। এতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে প্রায় সব খানেই। তবে এদের দমাতে কঠোর সিদ্ধান্তের কথা বলেছেন দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গত শুক্রবার গণভবনে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, নৌকা প্রতীকে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর অনেক এমপিই এখন নৌকার বিরোধিতায় নেমেছেন। অনেকে তো আবার নৌকার বিরোধী প্রার্থীর পক্ষে রাস্তায় নেমে মিছিল পর্যন্ত করেছেন। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি উপজেলা নির্বাচনে নৌকা ও নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেওয়া নেতাকর্মী, এমপি ও মন্ত্রীদের কারণ দর্শানো নোটিশ দিতে বলেছেন। আর ৭ দিনের মধ্যে তাদের জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনে এসব মন্ত্রী-এমপি ও নেতারা নৌকা প্রতীক পাবেন না বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। একই সঙ্গে যেসব উপজেলা আওয়ামী লীগ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে, দ্রুততম সময়ে সেসব উপজেলা কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে করার তাগিদও দিয়েছেন।

বৈঠকে আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সব নেতাকর্মীদের ডাটাবেজ তৈরি করার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া স্থানীয় নির্বাচন আগামী দলীয় প্রতীকে হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন করলে এ নিয়ে পরে দেখা যাবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে দলের প্রত্যেক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা স্ব স্ব বিভাগে যারা দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করেছেন তাদের তালিকাসহ প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন। বৈঠকে এসব প্রতিবেদন উপস্থাপনের কথা ছিল। তবে অনেক জেলা থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য না পাওয়ায় পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরির জন্য আরো সাত দিন সময় দেওয়া হয়। প্রতিবেদন তৈরির পর সেগুলো দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফের কাছে জমা দেবেন।

এদিকে, বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদকরা তাদের রিপোর্টে নৌকার বিরোধিতাকারীদের নাম প্রকাশ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি এ ব্যাপারে খুব কঠোর মনোভাব দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা বিরোধিতা করেছেন, তারা দলের যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

বৈঠকে তৃণমূলে সংগঠনের কোন্দলের চিত্র তুলে ধরে বক্তব্য রেখেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। তিনি অবিলম্বে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন নৌকার বিরোধিতা করে প্রচার চালানো এমপি-মন্ত্রীদের বিষয়ে বক্তব্য দেন।

এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিভিন্ন দিক নিয়ে বক্তব্য দেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, বি এম মোজাম্মেল হক, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। তারা সবাই উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব-কোন্দলের বিষয়টিই সামনে নিয়ে আসেন।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আওয়ামী লীগ,তৃণমূল,শোকজ,নোটিস
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close