কাইয়ুম আহমেদ

  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

উপজেলা নির্বাচন

আওয়ামী লীগের তৃণমূলে দ্বন্দ্ব-কোন্দল প্রকাশ্যে

উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে তৃণমূলে শুরু হয়েছে কাদা ছোড়াছুড়ি। টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারে ভালো করলেও উপজেলা নির্বাচনে দলটির প্রাণ তৃণমূল বিদ্রোহী নিয়ে দ্বন্দ্ব-কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। মাঠে বিরোধী দল না থাকায় আওয়ামী লীগেই একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে একাধিক প্রার্থী। পাল্লা দিয়ে একে-অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য তৃণমূলের সুপারিশ পাঠানোর ক্ষেত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলার নেতাদের প্রভাব খাটানো। এসব অভিযোগ জমা পড়েছে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে।

অভিযোগ প্রার্থীরা অস্বীকার করলেও অকাট্য প্রমাণসহ জমা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নানা জায়গায় প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনাও ঘটছে। গতকাল বগুড়ার ধুনট উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৩ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এছাড়া মুন্সীগঞ্জের ছয় উপজেলায় প্রার্থীদের মধ্যে উত্তাপ-উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই অবস্থায় তবে দলটির নেতারা বলছেন, ‘নির্বাচন জমজমাট করার জন্য সাময়িক দ্বন্দ্ব হয়ত ফুটে উঠছে, নির্বাচনের পর সবাইকে ফের এক ছাতার নিচে নিয়ে আসা হবে।’

জানা গেছে, প্রথম ধাপে ৮৬ ও দ্বিতীয় ধাপে ১২২ উপজেলায় একক প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে প্রথম ধাপেই ৮৬ উপজেলায় ১১৩ জন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীই আছেন। একই অবস্থা দ্বিতীয় ধাপেও। মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ ও নির্বাচনের প্রস্তুতি দেখে বাকি ধাপগুলোতেও এমন বিদ্রোহী থাকার আশঙ্কা আছে।

সারা দেশের তৃণমূলের এসব প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে, কেউ দুদকে কেউ বা সাংবাদিকদের অভিযোগ করছেন।

জানা গেছে, প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন কুড়িগ্রামে। এই জেলার ৯ উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ৩১ জন। সুনামগঞ্জ জেলার ১০ উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী ২৪ জন। এছাড়া রাজশাহীর ৯ উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী ৬ জন, নাটোরের ৬ উপজেলায় ৭ জন, লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় ৯ জন, নেত্রকোনার ৯ উপজেলায় ৬ জন, জামালপুরের ৭ উপজেলায় ৮ জন, হবিগঞ্জের ৮ উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন ৯ জন। এভাবে সব ধাপেই কমবেশি বিদ্রোহী প্রার্থী থাকছে।

জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জের ছয়টি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক পাওয়ার আশায় কেন্দ্রে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। ছয়টি উপজেলায় জেলা আওয়ামী লীগ কাউন্সিল করে তৃণমূলের মতামত নিয়ে প্রার্থী সিলেকশন করে কেন্দ্রে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন। তবে কেউ কেউ জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে একতরফা ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ করেছেন। নির্বাচনে ছয় উপজেলায়ই নৌকার সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার আশঙ্কা করছেন ভোটাররা। গত উপজেলা নির্বাচনে শ্রীনগর উপজেলায় চেয়ারম্যানসহ তিনটি পদেই বিএনপির প্রাথীরা জয় পায়।

গত ২০১৪ সালের ২৩ মার্চ গজারিয়া উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপক সহিংতায় প্রাণ হারান তিনজন। তাই আগামী নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।

লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ৫ জনকে দলীয় মনোনয়ন দিলেও পাটগ্রাম উপজেলা বাদে প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছে। ফলে দলের একাধিক প্রার্থী থাকায় নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে বিপাকে পড়েছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। অনেক নেতাকর্মী বিভিন্ন অজুহাতে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিরত থাকতে গাঢাকা দিয়েছে।

এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদ উন্মুক্ত রাখায় ৫ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৬ জন প্রার্থী হয়েছেন। তাদের দু-একজন বাদে সবাই আওয়ামী লীগের। এত প্রার্থী নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা অনেকটা বিব্রত। এরই ম্যধ্যে নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত, মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে উপজেলা নির্বাচন ঘিরে দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন এমপি বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভোট যাতে প্রতিযোগিতামূলক হয় এবং ভোটাররা যাতে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে সেজন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। যে বিজয়ী হবেন তিনিই আওয়ামী লীগের হবেন।

এদিকে, চতুর্থ ধাপে বরিশাল বিভাগের উপজেলাগুলোতে ভোটগ্রহণ করা হবে। এরই মধ্যে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে নির্বাচনী আমেজ ছড়িয়ে পড়লেও আওয়ামী লীগে ক্রমেই বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে।

তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও তার সব সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। অপরদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদ উন্মুক্ত করার ঘোষণা করায় এবং চেয়ারম্যান পদের দাবিদার প্রার্থীকে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে চূড়ান্ত ঘোষণা দেয়ায় জেলা মনোনয়ন বোর্ডের কাছে আবেদনের সঙ্গে জমা দেওয়া টাকা ফেরত চেয়েছেন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৭ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদের ৪২ প্রার্থী।

সূত্র মতে, বরিশাল জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে ৯টি উপজেলার চেয়ারম্যান, পুরুষ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে উজিরপুর, আগৈলঝাড়া ও বাবুগঞ্জ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যানদের পরিবর্তন করে নতুন প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ৯টি উপজেলার অধিকাংশ স্থানে পরিবর্তন করা হয়েছে বর্তমান পুরুষ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও মনোনয়নবঞ্চিত সমর্থকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আওয়ামী লীগ,দ্বন্দ্ব-কোন্দল,তৃণমূল,উপজেলা নির্বাচন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close