নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯

সংরক্ষিত নারী আসন

ক্রান্তিকালের লড়াকুদের মনোনয়ন দেবে আ.লীগ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনেও চমক দেখাবে আওয়ামী লীগ। মনোনয়নে ব্যাপক রদবদল করতে পারে দলটি। বিশেষ করে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত, তারকাখ্যাতি, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি, রাজনৈতিক ঐতিহ্য, দলের ক্রান্তিকালে রাজপথে লড়াকু এবং সংগ্রামী নারীদের মনোনয়নে প্রাধান্য দেওয়া হবে। এদিকে চতুর্থ ও শেষ দিনেও ফরম কিনেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। চার দিনে মনোনয়ন কিনেছেন ১ হাজার ৫১০ জন। এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার শেষ দিনে কিনেছেন ১২৫ জন।

ঢাকার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ফরম বিক্রি শুরু হয়। এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ উপস্থিত থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে ফরম বিতরণ করেন।

গত বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিন পর্যন্ত মোট এক হাজার ৩৮৩টি ফরম বিক্রি হয়েছে। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ফরম কিনতে হচ্ছে ৩০ হাজার টাকায়। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী দল ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নারীনেত্রী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অনেক নারীকে ফরম ক্রয়ের জন্য নির্ধারিত বুথের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। ধানমন্ডি কার্যালয় ও পাশের ভবনে আটটি বিভাগের জন্য স্থাপিত দুটি বুথ থেকে জেলাওয়ারি মনোনয়নপত্র কিনেছেন তারা। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ফরম বিক্রি শুরু হয়। প্রথম দিন গত মঙ্গলবার ফরম সংগ্রহ করেছিলেন ৬২৪ জন। দ্বিতীয় দিনে ফরম কেনেন ৪৩৩ জন।

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, প্রতি ছয়টি আসনে একজন সংরক্ষিত নারী এমপি নির্বাচিত করার বিধান রয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ আসনের মধ্যে ২৫৭ আসনে বিজয় পায় আওয়ামী লীগ। তবে শপথ গ্রহণের আগেই কিশোরগঞ্জ-১ আসনের নির্বাচিত এমপি মারা যাওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের প্রাপ্ত আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫৬। এ হিসাবে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের ৪৩টিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত নারীরা এমপি নির্বাচিত হবেন।

জাতীয় পার্টি ২২ জন বিজয়ী এমপির বিপরীতে আসন পাবে চারটি। মহাজোটের অন্য দলগুলোর কোনোটি ছয়টি বা তার বেশি আসন না পাওয়ায় এককভাবে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন দিতে পারবে না। অন্যদিকে বিএনপি ও তার জোট আটটি নির্বাচিত আসনের বিপরীতে দুটি আসন পাবে।

সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ইতোমধ্যে মনোনয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ১৯৮১ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে যেসব পরিবার ও ব্যক্তি আওয়ামী লীগের জন্য অবদান রেখেছেন সেসব পরিবারের নারীদের মূল্যায়ন করা হবে। পাশাপাশি মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের যে নেত্রীরা আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলেন, বিরোধী দলের সময় পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদেরও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ সময় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নামের তালিকা নিয়েও জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করেছেন। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের পর্যায়ক্রমে সংরক্ষিত আসনে সুযোগ দেওয়া হবে। তাই যারা একাধিকবার সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হয়েছেন এবার তারা বাদ পড়তে পারেন। ওইসব আসনে এবার নতুন মুখ দেখা যাবে। ফলে ব্যাপক রদবদলের সম্ভাবনা আছে নারী আসনের প্রার্থী মনোনয়নে।

সূত্র জানায়, সংসদে সংরক্ষিত আসনে দলের প্রাথমিকভাবে মনোনীত তালিকায় আছেন কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের নারীনেত্রী, সাবেক ছাত্রনেত্রী, অভিনয় জগতের তারকা, উদ্যোক্তা, শিল্পী এবং বিভিন্ন পেশায় দক্ষতা, মেধা ও প্রজ্ঞায় উজ্জ্বল স্বাক্ষর রাখা নারীরা। দলের প্রয়াত কয়েক নেতা, যারা কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ও সরকারে ছিলেন, তাদের স্ত্রী ও মেয়েরাও আছেন তালিকায়। তাদের সংসদে আনা হলে দলের পক্ষ থেকে প্রয়াতদের মূল্যায়ন করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তালিকায় আছেন একাত্তরে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরাও। সংরক্ষিত নারী আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে যারা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক তালিকায় আছেন তাদের মধ্যে অনেককে নিয়ে দলের ভেতরে ও বাইরে জোর আলোচনা চলছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, ‘মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তাদের মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার পর আমাদের দলের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক বসবে। বৈঠকে দলীয় সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা যাচাই-বাছাই করে যারা যোগ্য তাদের মনোনয়ন দেবেন।’

রাজনৈতিক উত্তরসূরী বিবেচনায় মনোনয়ন পেতে পারেন অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের স্ত্রী রাবেয়া আজিজ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের স্ত্রী নীলুফার আনজুম পপি, সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর স্ত্রী সৈয়দা সায়রা মহসীন ও বঙ্গবন্ধুর চাচাত ভাই শেখ হাফিজুর রহমান টোকনের স্ত্রী শেখ অ্যানি রহমান, প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় শেখ মিলি, ঢাকা উত্তর সিটির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক প্রমুখ।

পেশাজীবীদের মধ্যে এগিয়ে আছেন— শহীদ সন্তান ও অভিনেত্রী শমী কায়সার, শহীদ সন্তান ও ডাক্তার নুজহাত চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মাফরুজা সুমি অন্যতম। তারকাদের মধ্যে আছেন সারাহ বেগম কবরী, রোকেয়া প্রাচী, জ্যোতিকা জ্যোতি।

রাজনৈতিক অবদান বিবেচনায় আলোচনায় শীর্ষে আছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, জিনাতুন নেছা তালুকদার, আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপি, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, স্বাস্থ্য উপকমিটির সদস্য ডা. সাঈদা শওকত জেনি, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ক্রিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিরীন রোখসানা, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অপু উকিল, দলের নারীবিষয়ক উপকমিটির সদস্য শারমিন জাহান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেসমিন সুলতানা, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনের স্ত্রী জাকিয়া পারভীন খানম, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন, আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, মাহজাবিন খালেদ বেবী, জান্নাত আরা হেনরী, যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি, সাবেক সংসদ সদস্য সানজিদা খানম, জেবুন্নেছা আফরোজ ও দলের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের (চট্টগ্রাম) সমন্বয়কারী জিনাত সোহানা চৌধুরী, অ্যাডভোকেট নাসরিন সিদ্দিকা লীনা, ইঞ্জিনিয়ার মাফরুজা সুমি, পূর্ণিমা রানী শিল, সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী সুমনা আক্তার লিলি প্রমুখ।

এ ছাড়া ময়মনসিংহের মনিরা সুলতানা, মুন্সীগঞ্জের রানু আক্তার, বরিশালের জেবুন্নেছা আফরোজ, নীলফামারীর তুরিন আফরোজ, কুষ্টিয়ার সুলতানা তরুণ, চট্টগ্রামের চেমন আরা তৈয়ব ও ঢাকার আসমা জরিন ঝুমুর নামও আছে দলীয় সভাপতির গুডবুকে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সংরক্ষিত নারী আসন,আ.লীগ,একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন,মনোনয়ন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close